পুজো

কালীপুজোর সময়, অমাবস্যা তিথি!

অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এই তিনটি কাল নিয়ে মহাকাল। আর সেই মহাকালের শক্তি কালী। দশমহাবিদ্যার ইনিই প্রথমা মহাবিদ্যা। অনন্তকালে সৃষ্টিরূপিণী পরমা প্রকৃতির রূপ এই মহাকালী। অমাবস্যা তিথিতে বিভিন্ন সময়ে দেবী কালিকাকে বিভিন্ন রূপে পুজো করা হয়। ফলহারিনী অমাবস্যা থেকে কৌশিকী অমাবস্যা, বিভিন্ন সময়ে দেবীর নানান ধরনের আচার মেনে হয় পুজো। এদিকে, দীপান্বিতা কলীপুজোয় বিশেষ আচার মেনে দেবীর পুজো সম্পন্ন হয়। দীপান্বিতা অমাবস্যায় আয়োজিত হতে চলেছে কালীপুজো। কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে পড়ছে দীপান্বিতা কালীপুজো। এই কালীপুজো বিশেষ অমাবস্যা তিথি মেনে পালিত হয়। চলতি বছরে ২০২৩ সালে কোন তিথিতে অমাবস্যা পড়ছে, তা দেখা যাক। 

কালীপুজোর অমাবস্যা তিথি- রবিবার ১২ নভেম্বর অর্থাৎ ২৫ কার্তিক ঘ ২/৪/৫১ মিনিটে থেকে পড়ছে, আর ১৩ নভেম্বর তা ২/২৮/৩০ মিনিটে নভেম্বরে শেষ হচ্ছে অমাবস্যা তিথি। অর্থাৎ অমাবস্যা তিথি ১২ নভেম্বর ২ টো ৪৪ মিনিটে শুরু হচ্ছে। এরপর ১৩ নভেম্বর ২ টো ৫৬ মিনিটে শেষ হবে।

পঞ্জিকা অনুসারে অমাবস্যার তিথি- ১২ নভেম্বর অর্থাৎ ২৫ কার্তিক রবিবার পড়েছে কালীপুজো। সেদিন মা কালীর আরাধনা হবে। বেণীমাধব শীলের পঞ্জিকা অনুসারে কার্তিক অমাবস্যা তিথি পড়বে ১২ নভেম্বর ২০২৩ বেলা ২টো ৪৩ মিনিটে। অমাবস্যা তিথির অবসান হবে ১৩ নভেম্বর ২০২৩ রাত ২টো ৫৬ মিনিটে।

কালীপুজোর শুভ সময়- কালীপুজোর জন্য শুভ সময় থাকবে ১২ নভেম্বর রাত ১১টা ৩৯ মিনিট থেকে রাত সাড়ে বারোটা পর্যন্ত। এই ৫৩ মিনিটের মধ্যেই মা কালীর আরাধনার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় থাকবে।

পুজোর প্রদোষ কাল- বিকেল ৫ টা ২৯ মিনিট থেকে সন্ধ্যে ৮ টা ০৮ মিনিট পর্যন্ত। বৃষভকাল ৫ টা ৩৯ মিনিট থেকে ৭ টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত

অমৃত যোগ- দিবা ঘ ৬।৫০ গতে ৮।৫৭ মধ্যে ও ১১।৪৮ গতে ২।৩৯ মধ্যে এবং রাত্রি ঘ ৭।২৭ গতে ৯।১৪ মধ্যে ও ১১।৫৩ গতে ১।৪০ মধ্যে ও ২।৩৩ গতে ৫।৫৩ মধ্যে অমৃতযোগ।

কালী পুজোর দিনের বিশেষ কিছু নিয়ম-

১) কালীপুজোর দিন সকাল থেকে সারা রাত একটা ঘি-এর প্রদীপ ঘরের ঠাকুরের আসনে জ্বালুন, খেয়াল রাখতে হবে সেটা যেন নিভে না যায়।

২) কালী ঠাকুরের মন্দিরে কিছুটা আতপচাল, একটি গোটা নারকেল, ১০৮ টি জবা ফুলের মালা এবং কিছুটা ঘি দান করুন।

৩) কালী পুজোর দিন রাত্রে বাড়ির ছাদে একটা কালো পাঁচমুখী প্রদীপ জ্বালুন।

৪) কালী পুজোর দিন সন্ধ্যার পর বট গাছের গোঁড়ায় তিন বার কালো তিল রাখুন। (মনস্কামনা বলে)। মনের আশা পূর্ণ হবে।

৫) কালী পুজোর উপবাস যারা করেন, তারা পুজোর পরের দিন ব্রাহ্মণ ভোজন করান, তাতে ফল খুব ভাল পাবেন।

৬)কোনও মন্দিরে একটি খাড়া দান করুন।

কালি পুজোর দিন কোন কাজ গুলো করতে নেই

১) কালি পুজোর দিন এবং তার আগের দিন রাতে ভুল করেও শ্মশান বা কবর স্থানে একদম যেতে নেই। কারণ শাস্ত্র মতে এই সময় শ্মশানে বা কবর স্থানে নানা রকম নেগেটিভ শক্তি থাকে। এতে নিজের এবং পরিবারের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

২) এই দু-দিন মহিলারা কোনও ভাবেই রাতে চুল ছেড়ে ঘুমোবেন না। রাতে চুল খোলা রেখে ঘুমোলে নেগেটিভ শক্তি ভীষণ ভাবে আকর্ষিত হয়। এর ফলে আপনার এবং আপনার বাচ্চার ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এছাড়া মহিলাদের রাতে খোলা চুল থাকলে মা লক্ষ্মী দেবীও রুষ্ট হন।

৩) এই দু-দিন সন্ধ্যা বেলার পর কোনও মতে বাড়ি ঘর ঝাঁট দেওয়া যাবে না। মনে করা হয় এর ফলে মা লক্ষ্মী দেবীকে ঘর থেকে বিতারিত করে দেওয়া হয়। তাই সংসারে মঙ্গল চাইতে সন্ধ্যার আগেই ঝাঁট দিয়ে নিতে হবে।

৪) এই দু-দিন রাতে রান্না করার পর রান্না ঘর যেন কোনও ভাবে নোংরা না থাকে। বাসন পত্র খুব ভাল ভাবে পরিষ্কার করে রাখতে হবে, এতে আপনার এবং আপনার পরিবারের মঙ্গল হবে।

৫) এই দিন গুলোতে সন্ধ্যার পর যদি কেউ আপনার কাছ থেকে দুধ বা দুধ জাতীয় কোনও জিনিস চায় তা হলে তা কোনও মতে দেবেন না। এর ফলে আপনার বাড়ি থেকে পজেটিভ শক্তি কমতে থাকবে ও নেগেটিভ শক্তি বৃদ্ধি পাবে।