ফের একবার পুলিশের মানবিক রূপ দেখল শহর। দাদুর শেষকৃত্যের জন্য শ্মশানে গিয়েছেন বাবা-মা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা দিশেহারা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে নির্দিষ্ট সময় হলে পৌঁছে নজির গড়লেন হাওড়া ব্রিজ ট্রাফিক গার্ডের ওসি ইনস্পেক্টর শৌভিক চক্রবর্তী। শনিবার ছিল মাধ্যমিকের ভূগোল পরীক্ষা। কিন্তু, এর মাঝেই দাদুকে হারিয়েছে নেতাজি সুভাষ রোডের বাসিন্দা এক ছাত্রী। ফলে বাধ্য হয়েই দাদুর শেষকৃত্যের জন্য শ্মশানে ছুটতে হয়েছে তাঁর মা-বাবাকে। অগত্যা পরীক্ষা দিতে একাই বেরিয়ে পড়ে সে। এ বছর তাঁর পরীক্ষার সিট পড়েছে শ্যামবাজারের আদর্শ শিক্ষা নিকেতনে। কিন্তু, স্কুলের রাস্তা চিনতে না পেরে দিকভ্রষ্ট হয়ে যায় ওই ছাত্রী। সময়মতো পরীক্ষার হলে পৌঁছতে না পারার ভয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েই কাঁদতে শুরু করে। কার কাছে সাহায্য চাইবে তাও বুঝে উঠতে পারেনি ছাত্রী। সকাল ১১টা বেজে ২০ মিনিট নাগাদ স্ট্র্যান্ড রোডে রাজা কাটরার কাছে টহল দিচ্ছিলেন হাওড়া ব্রিজ ট্রাফিক গার্ডের ওসি ইনস্পেকটর শৌভিক চক্রবর্তী। হঠাতই তাঁর নজরে পড়ে, স্কুল ইউনিফর্ম পরা এক কিশোরীর দিকে। পথচলতি একাধিক মানুষের কাছে সাহায্য চাইছে সে। অথচ কেউই সেভাবে তাকে সাহায্য করতে পারছে না। অঝোরে কাঁদছে মেয়েটি। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থামিয়ে কিশোরীর কাছে পৌঁছে যান শৌভিক। এক মুহূর্তও সময় নষ্ট না করে মেয়েটিকে তাঁর গাড়িতে তুলে নেন শৌভিক। ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমে খবর দিয়ে তৈরি করিয়ে নেন ‘গ্রিন করিডর’। রাস্তায় কোথাও না থেমে ঝড়ের গতিতে গাড়ি পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে যায় কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে ১১টায়। তখন সবে দরজা খুলছে স্কুলের। অভিভূত হয়ে যায় কিশোরী। তবে সময়মতো পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ট্রাফিক পুলিশের আধিকারিক শৌভিককে ধন্যবাদ জানিয়েছে ওই ছাত্রীটি। পুলিশকাকুর তরফে ‘বেস্ট অফ লাক’ শুনেই এদিন পরীক্ষায় বসে কিশোরী। ওই পরীক্ষার্থী শ্রীজৈন বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী বলে জানা গিয়েছে। কলকাতা পুলিশের তরফে তাঁর এই কীর্তি সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার হতেই কুর্নিশ জানাচ্ছেন নেটিজেনরা।