সম্পাদকীয়

ব্রিগেডে এক লক্ষের গীতা পাঠ, অমৃতকালের স্বপ্নকে পিছনের সারিতে সরিয়ে মোদির নির্বাচনী ব্রহ্মাস্ত্র হতে চলেছে সেই হিন্দুত্ব!

২৪-এ ভোট পেতে ফের হিন্দুত্বে শান বিজেপির। ব্রিগেডে লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ থেকে শুরু হতে চলেছে লোকসভা ভোটের ডঙ্কা বাজানো। আত্মনির্ভর ভারত, চন্দ্রযান, জি২০, অমৃতকালের স্বপ্ন-এর ফেরিকে পিছনের সারিতে সরিয়ে এবারেও নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী ব্রহ্মাস্ত্র হতে চলেছে সেই হিন্দুত্ব। তাই ২৪ ডিসেম্বর কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ অনুষ্ঠানের প্রধান পুরোহিত হয়ে মঞ্চে উঠবেন প্রধানমন্ত্রী। সরযূ নদীর তট নয়। মেরুকরণের চেনা অস্ত্রে শান দিয়ে বাংলা থেকেই হিন্দুত্বের ধ্বজা উড়িয়ে মোদি রওনা হবেন অযোধ্যার দিকে। আসলে লোকসভা ভোটের দিকে। শুক্রবার দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের পর বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দাবি করেছেন, ‘২৪ ডিসেম্বর কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠে অংশ নিতে তাঁদের আমন্ত্রণ নরেন্দ্র মোদি গ্রহণ করেছেন। ওইদিন তিনি কলকাতায় উপস্থিত থাকবেন।’ এক বছর আগে এমনই এক ডিসেম্বরে কলকাতায় এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী-বন্দরের নাম বদলাতে। এর মাঝে বহু রাজ্যে গিয়েছেন তিনি এবং প্রায় প্রতিবার কোনও না কোনও প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। বাংলার ভাগ্যে কিন্তু তার ছিটেফোঁটাও জোটেনি, রুটিনমাফিক দু’একটা বন্দে ভারত ছাড়া। অথচ আজ হিন্দুত্বের হুঙ্কার ছাড়তে এই পশ্চিমবঙ্গকেই বেছে নিয়েছে তাঁর বিগ্রেড। তাই প্রধানমন্ত্রী আবার আসছেন-গীতাপাঠে। সুকান্ত মজুমদার অবশ্য দাবি করেছেন, এই আয়োজনের সঙ্গে সরাসরি বিজেপির যোগ নেই। তিনি বলেন, ‘লক্ষ কণ্ঠ গীতাপাঠ কমিটি এর উদ্যোক্তা। ওই কমিটিতে বিভিন্ন সংগঠন জড়িয়ে রয়েছে।’ গেরুয়া শিবিরের দাবি, এর আগে এভাবে লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠের আয়োজন কোথাও হয়নি। গীতাপাঠের আসর শুরুর মুহূর্তে ৫০ হাজার মহিলা লাল পাড়, সাদা শাড়ি পরে শঙ্খধ্বনিও করবেন। প্রশ্ন উঠছে, এই কর্মসূচির হাত ধরেই কি হালে পানি পেতে চাইছে বঙ্গ বিজেপি? কারণ, তাদের গোষ্ঠী কোন্দলের আঁচ দিল্লি পৌঁছে গিয়েছে। ইন্ডোর ও আউটডোরে শোনা গিয়েছে দুই গোষ্ঠীর পারস্পরিক হুঁশিয়ারিও। ইন্ডোর, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন অথবা পার্টি অফিসে গিয়ে শুক্রবার সুকান্তবাবুরা দলীয় কর্মসূচি নির্ধারণ করছিলেন। আর সে সময়ই আউটডোরে দেখা যাচ্ছিল বিদ্রোহের ঝড়।  এদিনও দিল্লিতে বিজেপির অন্যতম কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা বঙ্গ নেতৃত্বের উদ্দেশে তোপ দেগে বলেছেন, ‘বর্তমান নেতাদের নেতৃত্বে নির্বাচনে গেলে ৩৫টি আসনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব নয়।’ দুর্নীতির অভিযোগও তুলেছেন তিনি।