মালদাঃ কড়া গার্ড আর নকলে বাধা দেওয়ায় রাস্তায় টুকলি ছড়িয়ে পথ অবরোধ করেছিল উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা ৷ একই কারণে বৃহস্পতিবার ওই পরীক্ষাকেন্দ্রেই ভাঙচুর চালাল তারা৷ স্কুলে ঢুকে পরীক্ষার্থীদের সাহায্য করলেন অভিভাবকরাও ৷ মাদ্রাসার শিক্ষকদের মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ ৷
ব্যবধান মাত্র চারদিনের ৷ ১৮ মার্চ কড়া গার্ড আর নকলে বাধা দেওয়ায় রাস্তায় টুকলি ছড়িয়ে পথ অবরোধ করেছিল উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা ৷ একই কারণে বৃহস্পতিবার ওই পরীক্ষাকেন্দ্রেই ভাঙচুর চালাল তারা ৷ স্কুলে ঢুকে পরীক্ষার্থীদের সাহায্য করলেন অভিভাবকরাও ৷ মাদ্রাসার শিক্ষকদের মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ ৷ প্রধান শিক্ষককে রাস্তায় দেখে নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে ৷ ঘটনাটি ঘটেছে রতুয়া হাই মাদ্রাসায় ৷ ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ওই মাদ্রাসার শিক্ষকরা ৷ বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন এসআই অফ স্কুলসও ৷ ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হবে বলা জানা গিয়েছে ৷ তবে ইতিমধ্যেই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে এক অভিভাবককে আটক করেছে রতুয়া থানার পুলিশ ৷ গোটা ঘটনায় রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন ৷ এইবছর উচ্চমাধ্যমিকে রতুয়া হাই মাদ্রাসায় সিট পড়েছে ভাদো বিএসবি হাইস্কুল এবং ভালুকা রাইমোহন মোহিনীমোহন বিদ্যাপীঠের পরীক্ষার্থীদের ৷ গত শনিবার পলিটিক্যাল সায়েন্সের পরীক্ষা শেষের পর ভাদো বিএসবি হাইস্কুলের পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে রতুয়াভালুকা রাজ্য সড়ক অবরোধ শুরু করে ৷ গোটা রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয় টুকলি ৷ কেন পরীক্ষকরা কঠিন গার্ড দেবেন কেন তাদের নকল করতে দেওয়া হবে না এই দাবি তুলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন পরীক্ষার্থীরা ৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে রতুয়া থানার পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেছিল ৷ সেদিন অবশ্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের তরফে পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি ৷ এরপরে বৃহস্পতিবারও ভাদো বিএসবি হাইস্কুলের পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে আসেন ৷ বৃহস্পতিবার ছিল ফিজিক্স এডুকেশন ও নিউট্রিশন বিষয়ের পরীক্ষা ৷ এইদিনও তারা কড়া গার্ডের অভিযোগ তোলেন ৷ নকল করতে না দেওয়ায় পরীক্ষা হলেই ঝামেলা বাধায় পরীক্ষার্থীরা ৷ পরীক্ষা শেষের পর তারা প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকদের মারধর শুরু করে বলে অভিযোগ ৷ ভাঙচুর চালায় ক্লাসরুমে ৷ এমনকী এক শিক্ষকের মোটরবাইকও ভাঙচুর করা হয়েছে অভিযোগ উঠেছে ৷ এক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীদের সাহায্য করার অভিযোগ উঠেছে অভিভাবকদের বিরুদ্ধেও ৷ খবর পেয়ে দ্রুত মাদ্রাসায় চলে আসে রতুয়া থানার পুলিশ ৷ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পরীক্ষার্থীরা পালিয়ে যায় ৷ তবে ধরা পড়ে যান এক অভিভাবক ৷ প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আতাউর রহমান বলছেন বৃহস্পতিবার 19 নম্বর ঘরে ফিজিক্স পরীক্ষা ছিল ৷ নকল করতে দেওয়ার দাবিতে ওই ঘরের পরীক্ষার্থীরা হইচই শুরু করে দেয় ৷ পরীক্ষকরা কেন নকল ধরছেন তা নিয়ে তারা প্রশ্ন তোলে ৷ তাদের প্রশ্ন ওই ঘরে এতজন গার্ড কেন থাকবে আমি ওদের জানাই কাউন্সিলের নির্দেশেই গার্ড রাখা হয়েছে ৷ পরীক্ষকদের বাইরে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় তারা ৷ আমি চুপচাপই ছিলাম ৷ কিন্তু পরীক্ষার্থীরা একজন পরীক্ষককে মারতে অফিস রুমে চলে যায় ৷ এরপরেই তারা আমাকে মারতে শুরু করে ৷ তাদের অভিভাবকরাও আমার গায়ে হাত তুলেছেন ৷ আমি কোনওরকমে সরে যাই ৷ ওরা মাদ্রাসা ভাঙচুর করেছে ৷ পুলিশে খবর দিয়েছি ৷ পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে ৷ এই ঘটনার পর আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি ৷ আমাকে রাস্তায় দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে গিয়েছে ওরা ৷ ওই পরীক্ষার্থীরা সবাই ভাদো বিএসবি হাইস্কুলের পরীক্ষার্থী ৷ ঘটনার খবর পেয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে চলে যান এসআই অফ স্কুলস লাবণীতা চক্রবর্তীও ৷ তিনি বলেন পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ খুব কড়া নজরদারিতে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে ৷ ওদের দাবি ছাড় দিয়ে ওদের পরীক্ষা নিতে হবে ৷ মানে ওদের কিছু বলা যাবে না ৷ পরীক্ষা শেষের পর ওরা পরীক্ষাকেন্দ্রে ভাঙচুর চালিয়েছে ৷ এরপর কিছু অভিভাবক পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকে পড়ে ৷ ছাত্র ও অভিভাবকরা মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক এবং ১৯ নম্বর ঘরের পরীক্ষকদের আক্রমণ করে ৷ তবে পরীক্ষার মতো করেই আমাদের পরীক্ষা নিতে হবে ৷ নকল করতে দেওয়ার দাবি মেনে নেওয়া যায় না ৷ শিক্ষকদের নিরাপত্তার বিষয়টি প্রশাসন দেখছে ৷ এই ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ জানানো হবে ৷ নইলে পরীক্ষা নেওয়াটাই কঠিন হয়ে যাবে ৷ “