দেশ

বিজেপি শাসিত রাজস্থানের পিটিয়ে খুন মালদার শ্রমিক

নৃশংস মারধরে ফেটে গিয়েছিল নাড়িভুঁড়ি। অপারেশন করেও বাঁচাতে পারলেন না চিকিৎকরা। সহকর্মীদের বেদম প্রহারে ‘ডাবল ইঞ্জিন’ রাজস্থানের জয়পুরে প্রাণ হারালেন বাংলার হরিশ্চন্দ্রপুরের পরিযায়ী শ্রমিক মোতি আলি (৪২)। এই ঘটনা ফের প্রশ্ন তুলে দিল বিজেপি শাসিত রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। কারণ, কয়েকদিন আগেই বাংলার আরও এক পরিযায়ী শ্রমিক পদ্মপার্টির হরিয়ানায় গোরক্ষকদের হাতে খুন হন। এই মর্মান্তিক মৃত্যুর ‘বিচার’ চেয়ে কেউ টুঁ শব্দ করছেন না কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিবার। গত মঙ্গলবার রাতে স্ত্রী রৌশনা বিবিকে ভিডিও কল করার সময় হাত দিয়ে কপাল ঢেকে রেখেছিলেন মোতি। স্ত্রীকে বলেছিলেন, টিফিন বাক্সের আঘাত লেগেছে। তারপর থেকেই অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে এই পরিযায়ীর। পরে রৌশনা ফের ফোন করলে অন্যজন রিসিভ করেন। তাঁর হাত থেকে ফোন নিয়ে মোতি বলেন, ‘আমি শেষ। আমার পেটে প্রচণ্ড ব্যথা। আজকেই পেটটা ফেটে যাবে।’ রৌশনার কথায়, ‘ফোনে জানতে পারি, স্বামীরই কয়েকজন সহকর্মী ওঁকে মারধর করেছে। ওরা বিহার এবং ওড়িশা বাসিন্দা। মারের চোটে নাড়িভুঁড়ি সব জড়িয়ে গিয়েছিল। মলদ্বার ফাটিয়ে দেওয়া হয়। অস্ত্রোপচারও করা হলেও, বাঁচল না।’ পরিবারের দাবি, জয়পুরে ওই সোনার দোকানে প্রায় ২০ বছর কাজ করছিলেন মোতি। তাঁকে মালিক একটু বেশি ভালোবাসতেন বলে বাকিদের হয়তো ঈর্ষা হতো। সেজন্য সামান্য ছুতোয় বেদম মার। তবে বাংলার পর পর দুই পরিযায়ী শ্রমিকের এহেন পরিণতিতে সুশীল সমাজ কেন ‘জাস্টিস’ চাইছেন না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মোতির পরিবারের সদস্যরা। মোতির দুই ছেলে। একজনের বয়স সাড়ে ছয়, অন্যজনের চার বছর। জমিজমাহীন পরিবারের একমাত্র রোজগেরের করুণ পরিণতির পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে অসহায় রৌশনার পাশে দাঁড়িয়েছেন রাজ্যের দুই প্রতিমন্ত্রী তাজমুল হোসেন ও সাবিনা ইয়াসমিন এবং বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সি। শনিবার তাঁরা মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। মোতির খুড়তুতো ভাই সাবির আলি বলেন, দাদা জয়পুরের মির্জা ইসমাইল রোডের গয়নার দোকানে ২০ বছর ধরে কাজ করত। কিছু দূরেই আমাদের আরেক খুড়তুতো ভাই কাজ করে। সে জানায় ৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে দাদা ও তাঁর কয়েকজন সহকর্মী দোকানের লাগোয়া বিশ্রামঘরে একসঙ্গে খেতে বসেছিল। সেই সময় কোনও কারণে কথা কাটাকাটি হয়। তখন সহকর্মীরা জোরে জোরে ওর পেটে লাথি মারে। দাদা শুধু নীতিন নামটাই বলতে পেরেছিল। দাদা ওই খুড়তুতো ভাইকে ফোন করলে সে এসে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে এবং দোকানের মালিককে বিষয়টা জানায়। মালিক চিকিৎসার সমস্ত খরচ বহন করেছেন বলে শুনেছি।  গত ৬ সেপ্টেম্বর হাসপাতালেই মারা যান মোতি।’ হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী তাজমুল বলেন, ‘রাজ্য সরকার অসহায় পরিবারের পাশে আছে।’