রবিবার দুপুরেই তিনি কলকাতা থেকে সড়কপথে রওয়ানা দিয়ে পৌঁছে যান দুর্গাপুরে। সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার কিছু পরে মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে করে দুর্গাপুর থেকে রওয়ানা দেন পুরুলিয়ার পথে। দুপুর ১টা নাগাদ শহরের মানভূম ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউট স্কুলে তাঁর হেলিকপ্টার নামে। সেখান থেকে তিনি সোজা চলে আসেন শহরের রবীন্দ্রভবনে। যোগ দেন প্রশাসনিক বৈঠকে । সেই বৈঠকে শুরু থেকেই তাঁকে রীতিমত ক্ষুব্ধ ছিলেন সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছিল। তিনি বলেন, জন পরিষেবায় কোনও ঢিলেমি দেওয়া চলবে না। জেলায় প্রশাসনিক কাজকর্ম কেমন হচ্ছে, জনতা কেমন পরিষেবা পাচ্ছেন, তা খতিয়ে দেখতেই মমতার এই প্রশাসনিক বৈঠক। কাজের যাবতীয় তথ্য–পরিসংখ্যান হাতে নিয়ে অসন্তুষ্ট মমতা প্রশ্ন তোলেন, ‘অনেক কাজ দেখছি, বলা হচ্ছে, আন্ডার প্রসেস। এই আন্ডার প্রসেস ব্যাপারটা কী? খায় না মাথায় দেয়?’ অর্থাৎ কাজ চলছে নয়, কাজ হয়ে গিয়েছে, এটাই শুনতে চান তা স্পষ্ট করে দিলেন মমতা। কোনও কাজে ঢিলেমি তিনি বরদাস্ত করবেন না, তা স্পষ্ট করে দিলেন এদিনের প্রশাসনিক বৈঠকে। মুখ্যমন্ত্রী যখনই কোনও জেলায় গিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করেন তখনই সেই জেলার প্রশাসনিক কাজকর্ম কেমন হচ্ছে, জনতা কেমন পরিষেবা পাচ্ছেন, এসব খতিয়ে দেখেন। খোঁজখবর নেন জেলার উন্নয়নমূলক কাজকর্মগুলি নিয়ে। সেই সঙ্গে আমজনতার অভিযোগও খতিয়ে দেখেন। এদিনও তার ব্যতিক্রম ছিল না। আর সেই খতিয়ে দেখার কাজ খোঁজ নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর নজরে পড়ে পুরুলিয়া জেলায় ৫-৬ বছর আগে যে সব কাজ শুরু হয়েছিল হয় তার বেশিরভাগকেই জেলা প্রশাসনের তরফে দেখানো হয়েছে ‘আন্ডারপ্রসেস’। আবার কিছু কিছু কাজ শুরুই হয়নি। এতেই ক্ষিপ্ত হন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক কাজে লালফিতের ফাঁস, দীর্ঘসূত্রতার যে ট্র্যাডিশন বছরের পর বছর চলছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার আসার পর তা অনেকটাই মিটেছে। সেই কাজে আরও গতি আনাই তাঁর লক্ষ্য। আর তাই কোনও কাজে ঢিলেমি তিনি পছন্দ তো করেনই না, বিলম্বের খবর শুনে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেন। এদিনও কার্যত সেটাই করেছেন। এদিন প্রশাসনিক বৈঠকের শুরু থেকেই জেলার কাজকর্ম নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অসন্তোষ দৃষ্টি এড়াচ্ছিল না সংবাদমাধ্যমেরও। বৈঠক শুরুর কিছুক্ষণ পরই হাতে কাগজপত্র নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক কাজের স্টেটাস আন্ডারপ্রসেস। এই ব্যাপারটা কী? কত কাজ আন্ডারপ্রসেস? যে সব প্রকল্পের কাজ হচ্ছে না, সেগুলিকেই এভাবে দেখানো হচ্ছে। দেখুন, কিছু আন্ডারপ্রসেস বলে এড়িয়ে যাবেন না। আমি চাই, সব কাজ সময়ের মধ্যে মিটিয়ে ফেলুন। আন্ডারপ্রসেসের তালিকা বাড়াবেন না। ৫-৬ বছরের কাজ পড়ে আছে, আর তোমরা দেখাচ্ছো সেটাকে আন্ডারপ্রসেস। আমি সব আন্ডারপ্রসেস কাজগুলো সিএসকে দিয়ে দিলাম।’ এদিন ফের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাজ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিএলআরও অফিসে গেলে সাধারণ নাগরিক সাহায্য পাচ্ছেন না, দালালচক্রের শিকার হচ্ছেন। এসব অভিযোগ জমা পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কাজে। আর তাতেই ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।