কলকাতা

বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালিদের হেনস্তার প্রতিবাদে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পদযাত্রা মুখ্যমন্ত্রীর, বললেন এটা শুধু ইমার্জেন্সি নয়, এর থেকেও ভয়ংকর অবস্থা

গত কয়েক দিনে অসম, দিল্লি, ওডিশা, হরিয়ানা, ছত্তিসগড়, মহারাষ্ট্র— বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলাভাষীদের হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। বাংলায় কথা বললেই হেনস্থার অভিযোগ উঠছে বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে। যথাযথ কাগজ দেখালেও বাংলাদেশি তকমা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। তারই প্রতিবাদে বুধবার পথে নামে তৃণমূল। একুশে জুলাইয়ের আগেই বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের । বুধবার কলেজ স্কোয়ার থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত দীর্ঘ মিছিলের পরে একাধিক ইস্যুতে কেন্দ্র ও বিজেপিকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, “এই যে রাজ্যে রাজ্যে বাঙালিদের হেনস্তা চলছে, এটা শুধু ইমার্জেন্সি নয়, ইমার্জেন্সির থেকেও ভয়ংকর । এটা সুপার ইমার্জেন্সিও নয়, এটা একটা ভয়ানক দুঃশাসনের চেহারা নিচ্ছে ।” সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ঘোষণা করেন, “২০২৬-এ বাংলা থাকবে আমাদের দখলে । তারপর ইন্ডিয়া জোট দিল্লি দখলের লড়াইয়ে নামবে ।” দিল্লি, বিহার, মহারাষ্ট্র ও ওড়িশার উদাহরণ তুলে ধরে মমতা অভিযোগ করেন, এই সমস্ত রাজ্যে যাঁরা বাংলা ভাষায় কথা বলেন, তাঁদের সঙ্গে চলছে নিত্যদিনের নিগ্রহ । দিল্লিতে বাঙালিদের জলের লাইন, বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী । অসম সরকার নাকি নোটিশ পাঠাচ্ছে বাংলা ভাষাভাষীদের ৷ এসবের বিরুদ্ধে সরব হয়ে তিনি বলেন, “বাংলা ভাষা কি অপরাধ ? রোহিঙ্গা বলে দেবে বাংলা বললেই ? এভাবে দেশ চলতে পারে না ।” মমতা বলেন, “এক কেন্দ্রীয় বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলা ভাষায় কথা বললেই সন্দেহভাজনদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো যাবে । লুকিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ভারত সরকার । আমরা সেটা চ্যালেঞ্জ করব । এটা রীতিমতো বাঙালিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ।” তাঁর কথায়, “ক্ষমতা থাকলে আমাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যান ।

আমি এখন আরও বেশি করে বাংলায় কথা বলব ।” পাশাপাশি, বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “তোমরা আঘাত করলে প্রত্যাঘাত কেমন হয়, তার ধারণা তোমাদের নেই । এবার খেলা হবেই । প্রস্তুত থাকো !” সোমবারের বক্তব্যে ভোটের প্রস্তুতি প্রসঙ্গেও বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী । তিনি বলেন, “ভোটার তালিকায় নাম তোলার কাজ যখন শুরু হবে, প্রয়োজনে একদিন কামাই করলেও ভোটার লিস্টে নাম তুলতেই হবে ।” তৃণমূলের কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “দেখে নেব ক’টা ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠাতে পারো । বাংলার মানুষ আমাদের জিতিয়েছে, আমাকে এখানে কাজ করতে দিন । না-হলে আমি সারা দেশে ঘুরে বেড়াব ।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যদি বাংলা ভাষায় কথা বললেই রোহিঙ্গা বলে ধরা হয়, তাহলে সীমান্ত দিয়ে সেই কথিত বাংলাদেশিরা দেশে ঢুকছে কী করে ? বিএসএফ, সিআইএসএফ কার হাতে ?” মমতার বার্তা, বাঙালিদের বিরুদ্ধে এই চক্রান্ত আর বরদাস্ত করা হবে না । সবশেষে, ওড়িশায় বাঙালি পর্যটকদের ওপর নিগ্রহের প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যদি ওখানে বাঙালিদের ওপর অত্যাচার হয়, তাহলে এখান থেকেও প্রতিবাদ হবে ।” সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, “বাংলাকে ছোট করে দেখবেন না । বাংলা দখলে আছে, থাকবে । আর এবার দিল্লি দখলের জন্য ইন্ডিয়া জোট তৈরি হচ্ছে ।” একুশে জুলাইয়ের সভা থেকে আরও বড় ঘোষণা আসবে বলেও ইঙ্গিত দেন তৃণমূল নেত্রী । প্রসঙ্গত, এদিন মিছিলের সামনের সারিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলের একগুচ্ছ প্রথম সারির নেতৃত্ব ।