জমি আন্দোলনের ভূমি নন্দীগ্রাম থেকেই এবার জিতে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই তৃণমূল প্রার্থী তালিকায় নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম জ্বলজ্বল করছে। মঙ্গলবার সেই নন্দীগ্রামেই প্রথম কর্মীসভা করলেন তৃণমূল নেত্রী। আর পা রেখেই নন্দীগ্রামের কর্মীসভায় তিনি ফিরিয়ে আনেন পুরনো স্লোগান, ‘ভুলতে পারি সবার নাম, ভুলব না কো নন্দীগ্রাম’। তিনি বলেন, ‘এখানে ২ কামরার ঘর নিয়েছি। ৩ মাস অন্তর আসব। পরে একটা কুঁড়েঘর বানিয়ে নেব। নন্দীগ্রামকে মডেল নন্দীগ্রাম হিসেবে তৈরি করতে চাই। নন্দীগ্রামে কোনও বেকার থাকবে না। নন্দীগ্রামে কোনও নিরক্ষর থাকবে না। নন্দীগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করব’।সেই কর্মীসভায় বিজেপিকে আক্রমণ করলেন, একই সঙ্গে এক দশক আগে জমি আন্দোলনের কথা বলে তাঁর লড়াই-ভূমিকার কথা উস্কে দিলেন। একাধিকবার বললেন, ‘ভুলতে পারি সবার নাম, ভুলবো নাকো নন্দীগ্রাম’। সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম- একদিকে জমি আন্দোলনের ধাত্রীভূমি, অন্যদিকে মমতার রাজনৈতিক উত্থানের অন্যতম পীঠস্থান। তৃণমূল সুপ্রিমো এদিন জানান, তিনি ভেবেইছিলেন যে এবার হয় সিঙ্গুর অথবা নন্দীগ্রাম থেকে ভোটে দাঁড়াবেন। তবে, কেন নন্দীগ্রামকেই তিনি বেছে নিলেন তাও সাফ জানালেন এদিনের কর্মীসভায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি শেষভার যখন নন্দীগ্রামে এসেছিলাম তখন এখানকার বিধায়ক দল ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। বিধায়কপদ খালি ছিল। তখন আমি আপনাদের থেকে জানতে চাই যে নন্দীগ্রামে যদি আমি দাাঁড়াই তাহলেকেমন হবে? তখন আপনাদের সাহস-উন্মাদনা দেখে আমি নন্দীগ্রামের দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। মনে রাখবেন, ভুলতে পারি সবার নাম ভুলবো নাকো নন্দীগ্রাম।’ এই প্রসঙ্গেই সিঙ্গুরে আন্দোলনের প্রসঙ্গ টানেন মমতা। বলেন, ‘সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামকে আমি যুক্ত করে দিয়েছিলাম। আমার ইচ্ছা ছিল সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের মধ্যে যে কোনও একটা সিটে লড়াই করব। শেষ পর্যন্ত নন্দীগ্রামকেই বেছে নিয়েছি।’ এদিন নন্দীগ্রামের বটতলার সভায় মমতা বলেন, “আমিও হিন্দু ঘরের মেয়ে। আমার সঙ্গে হিন্দু কার্ড খেলতে যাবেন না। হিন্দু ধর্মের আদর্শ মানুষকে ভালবাসা। আমি সকালে উঠে চণ্ডীপাঠ করে বাড়ি থেকে বের হই।” থার্টি-সেভেনটি করছেন বলেও হুঙ্কার ছাড়েন মমতা। শুরু করে দেন চন্ডীপাঠ থেকে নানা মন্ত্রোচ্চারণ।”এখানেই থামেননি তৃণমূলনেত্রী। এবারের নির্বাচনে ‘খেলা হবে’ স্লোগান এখন নেতা-নেত্রীদের মুখে মুখে। এদিনও খেলার কথাই বারে বারে উঠে আসে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বক্তব্যে। তৃণমূলনেত্রী বলেন, “হিন্দু ধর্ম আমায় শেখাচ্ছেন? ধর্ম নিয়ে খেলবেন? খেলা হবে। সরস্বতী পাঠ, লক্ষ্মীপাঠ, চন্ডীপাঠ, জগদ্ধাত্রী পাঠ জানেন। এক-দুলাইন মুখস্থ করে করে ভাষণ দিচ্ছেন। পা টেনে টেনে হেটে মিথ্য়া কথা বলবেন না।”পুরনো স্মৃতি উস্কে দিতে এদিন কর্মীসভায় তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘স্কুটারে তমলুক থেকে চণ্ডিপুর হয়ে নন্দীগ্রাম এসেছিলাম। সিপিএম ধরতেই পারেনি। কীভাবে তখন মানুষের উপর অত্যাচার করা হয় তখন দেখেছিলাম। তার পর গোটা বাংলা জুডে আন্দোলন করেছি। সেই সময়ে তাহের, সুফিয়ানরা ছিল। ভয়ে অনেকে সেই সময়ে বের হয়নি। যদি মনে করেন আপনাদের ঘরের মেয়ে, তাহলে আমাকে বলবেন তবেই আমি মনোনয়ন জমা দিতে যাব।’ মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে নন্দীগ্রামই যে আগামী দিনে বাংলার মডেল আসন হতে চলেছে এদিন তাও স্পষ্ট করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাবনীপুর ছেড়ে নন্দীগ্রাম থেকে ভোটে লড়াই করায় তাঁকে ‘বহিরাগত’ বলে কটাক্ষ করছে বিজেপি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘কেউ কেউ বলে বেরাচ্ছে, আমি নাকি বাইরের লোক। আরে আমি তো বাংলার লোক। নিজেরা দিল্লি-রাজস্থানের লোকেদের নিয়ে আসছ। আর আমি কলকাতা থেকে এখানে দাঁড়াচ্ছি বলেই দোষ? আমি বহিরাগত হলে মুখ্যমন্ত্রী হতে পারতাম? যারা হিন্দু-মুসলিম করছেন তাদের আমি বলে রাখি। আমিও হিন্দু ঘরের মেয়ে। আমার সঙ্গে হিন্দু কার্ড খেলতে যাবেন না।’ এরপরই চণ্ডীপাঠ শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। গত ১০ বছর ভবানীপুরের বিধায়ক ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের কর্মীসভায় সেখানকার উন্নয়নের কথা বলেন তিনি। বলেন, ‘আমার ভবানীপুর গিয়ে দেখে আসবেন। আগামী দিনে নন্দীগ্রামকে মডেল নন্দীগ্রাম করে তুলব। নন্দীগ্রামে কোনও ঘরে বেকার থাকবে না। শিক্ষায় কেউ পিছিয়ে থাকবে না। শহিদদের স্মরণ করে এ বারের ইস্তেহারে বিশ্ব বিদ্যালয় রাখছি।’ তিনি যে ভোটে জিতে নন্দীগ্রামকে ভুলবেন না তা জানাতেই সেখানে দু’কামরার ঘর ভাড়া নেওয়ার কথা জানান মমতা। আগামীতে দু-তিন মাস অন্তরই নন্দীগ্রামে আসবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন তৃণমূল নেত্রী। ১লা এপ্রিল ইভিএমে বিজেপি সহ বিরোধীদের ‘এপ্রিল ফুল’ করে দেওয়ার জন্য নন্দীগ্রামবাসীর কাছে এদিন আর্জি জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।