জেলা

পিএম কেয়ারের নামে টাকা তুললে, কোথায় গেল টাকা, কেউ পায়নি, রেল-কোল বিক্রি করে দিচ্ছো, কোথায় গেল টাকাঃ মমতা

‘সাগরে বন্দর হয়নি কেন ? সাগরে ট্রেন আসেনি কেন? সাগরে সেতু হয়নি কেন? হোদল কুতকুত জবাব দাও’

কিছুদিন আগেই সুন্দরবনে ভোট প্রচারে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরুদ্ধে সরব হন তিনি। অমিত শাহ আক্রমণ শানেন ‘ভাইপো অ্যান্ড কোম্পানি’র বিরুদ্ধেও। এদিন কার্যত তার জবাবী সভা করতে সুন্দরবন ঘেঁষে পাথরপ্রতিমা ও সাগরে সভা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুটি জায়গা থেকেই বিজেপিকে আক্রমণ শানানোর পাশাপাশি অমিত শাহকে এদিন নাম না নিয়েই ‘হোদল কুতকুত’ বলা আক্রমণ শানিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ‘আমি বিজেপি-র মতো দাঙ্গাবাজ নই, ধান্দাবাজ নই। পাথরপ্রতিমায় আড়াই হাজার টিউবওয়েল দেওয়া হয়েছে। বাংলা আবাস যোজনাতে ৩০ লক্ষ বাড়ি তৈরি করে দিয়েছি। ক্লাস নাইনের ছেলেমেয়েরা আগামী দিনে সবুজ সাথী সাইকেল পাবে। ক্লাস টুয়েলভের ছেলেমেয়েরা স্মার্ট ফোনের জন্য ১০ হাজার টাক পাবে। দুয়ারে দুয়ারে রেশন পৌঁছবে। কৃষকদের জন্য বছরে দশ হাজার টাকা। শস্য বিমা বিনা পয়সা করে দি। কোনও কৃষক মারা গেলে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। তৃণমূল কংগ্রেসে সব চোর? আমি চোর? আমি ডাকাত? আমি খুনি? আমি মানুষকে জীবন দিয়ে ভালবাসি। তুমি শালা খুনি, ডাকাতদের সর্দার। পিএম কেয়ারের নামে টাকা তুললে, কোথায় গেল টাকা, কেউ পায়নি, রেল বিক্রি করে দিচ্ছো, কোথায় গেল টাকা। কোল বিক্রি করে দিচ্ছো। কোথায় গেল টাকা। কেউ পায়নি। এদিন মমতা তাঁর প্রথম সভা করেন পাথরপ্রতিমায় কলেজ মাঠে। সেখান থেকেই তিনি আম্ফান নিয়ে আক্রমণ শুরু করেন অমিত শাহকে। বলেন, ‘ওরা বলে আমফানের সময় নাকি ওরা টাকা দিয়েছিল। ১৯ লক্ষ লোককে আমরা বাঁচিয়েছিলাম। আমি নবান্নে বসে পাহারা দিয়েছিলাম। নবান্নটা থরথর করে কাঁপছিল। আমি ভাবছিলাম কখন আমফানটা বিদায় নেবে। আমারা আমফানের সময়ে ৩ লক্ষ বাড়ি করে দিয়েছিলাম। ৬ কোটির মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ের আগেই ১৯ লক্ষ মানুষকে সরিয়ে নিয়েছি। নরেন্দ্র মোদী একদিন ঢং করে দেখতে এল, প্লেনে করে। বলল টাকা দিয়ে গেলাম, এক হাজার কোটি টাকা। আমার প্রশ্ন এটা কার টাকা? মাছের তেলে মাছ ভাজা। আমার রাজ্য সরকারের প্রাপ্য টাকা দিয়ে বলল দিয়ে গেলাম। এক পয়সা দেয়নি।’ একই সঙ্গে আক্রমণ শানিয়েছেন মোদিকেও। বলেছেন, ‘লোককে দেখে এমনভাবে নমস্কার করবে, যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না। গুজরাটে, উত্তরপ্রদেশে দাঙ্গা কে করেছে? তুমি যদি মনে কর নির্বাচনের সময় নাটক করে ভুল বোঝাবে, তা হবে না। বলেছিল ১৫ লক্ষ টাকা করে দেবে। দিয়েছে? ভোটের আগে গ্যাসের দাম ১০০ টাকা কমাবে, আবার বাড়াবে। বিনা পয়সায় চাল দেব, আর ৯০০ টাকা দিয়ে ফোটাতে হবে? পিএম কেয়ারের নামে টাকা তুললে, কোথায় গেল টাকা? কেউ পায়নি। রেল বিক্রি করে দিচ্ছ, কোথায় টাকা? কোল বিক্রি, সেল বিক্রির টাকা কোথায় গেল? ত্রিপুরায় পিএফ তুলে দিয়েছে, ১০ হাজার শিক্ষকের চাকরি খেয়ে নিয়েছে। গ্রুপ ডি স্টাফদের ক্যাজুয়াল করে দিয়েছে।’ মমতা এদিন দিলীপ ঘোষের বারমুডা প্রসঙ্গেও বিজেপিকে খোঁচা মারতে ছাড়েননি। বলেছেন, ‘ বিজেপিকে এপ্রিল ফুল করে দিন। বিজেপিকে এই মাটিতে রাজনৈতিকভাবে কবর দিন। বলে পোয়াতি হলে মেয়েরা ডিম সিদ্ধ খাবে না, ওদের মাথা খাবে? সালোয়ার কামিজ পরবে না, শাড়ি পরবে না, ওরা হাফ প্যান্টুল পরিয়ে দেবে। আর ভোট চাইবে। কে কী পরবে না পরবে, তার নিজের ব্যাপার। বিজেপি আসলে বলবে মেয়েদের ঘরের বাইরে বেরোতে দেব না, মেয়েদের স্কুলে পাঠাব না। বিজেপি হল বহিরাগত গুন্ডা, দুর্যোধন, দুঃশাসনের পার্টি।’ মমতা ছুঁয়ে গিয়েছেন আইএসএফ প্রসঙ্গও। বলেছেন, ‘ সংখ্যালঘুদের কাছে বলব, বিজেপির সঙ্গে ডিল করে সিপিএম, কংগ্রেস আরেকটা নতুন রাজনৈতিক দল এসেছে। হঠাত্‍ করে বিজেপি থেকে গজিয়েছে। বিজেপি টাকা দিয়ে ওদের পাঠিয়েছে। সংখ্যালঘুদের ভোট ভাগ করে নেওয়ার জন্য। আমি অনুরোধ করব, জীবন নিরাপত্তা, শান্তিতে থাকতে চাইলে আপনার একটা ভোট অন্য কাউকে দিয়ে নষ্ট করবেন না। যে সিপিএম, সেই বিজেপি। যে সংখ্যালঘুর নামে বলছে, সে বিজেপির কাছ থেকে প্রচুর টাকা নিয়েছে।’ সাগরের সভা থেকে মমতা সব থেকে বেশি আক্রমণাত্মক হন অমিত শাহের প্রতি। বলেন, ‘হোদল কুতকুত বলে বেড়াচ্ছে মমতাদি কোনও কাজ করেনি। আমরা বলেছিলাম ৫০ হাজার পুকুর কাটব, সাড়ে তিন লক্ষ কেটেছি। আর তুমি হোদল কুতকুত, তুমি কী করেছ? সাগরে বন্দর হয়নি কেন হোদল কুতকুত জবাব দাও। সাগরে ট্রেন আসেনি কেন হোদল কুতকুত জবাব দাও। সাগরে সেতু হয়নি কেন হোদল কুতকুত জবাব দাও। ওই হোদল কুতকুতের কথায় কেউ বিশ্বাস করবেন না।’