গত ২০১১ সালে পরিবর্তনের পরে বাংলায় ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন ‘দিঘা হবে গোয়া’। অর্থাৎ গোয়ার ধাঁচেই তিনি দিঘাকে দেশবিদেশের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলবেন। সেই ঘোষণা নিয়ে রাজনীতির পাশাপাশি বিরোধী দলের সমর্থকেরা কেউ কেউ সমালোচনায় মেতে উঠেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, দিঘা কেন গোয়া হবে! তাই গত এক দশক ধরে তিনি দিঘার উন্নয়নে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। এবার সেই দিঘার বুকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তৈরি করতে চলেছে জলের নীচে (Underwater) পার্ক। এর জন্য ইতিমধ্যেই হিডকো ডিপিআর তৈরি করে ফেলেছে। এই পার্ক নির্মাণের জন্য জমি চিহ্নিত হলেই তা নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে জানা গিয়েছে। এবার এই দিঘার বুকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সিঙ্গাপুরের(Singapore) একটি ‘আন্ডারওয়াটার পার্ক’ বা জলের নীচে থাকা পার্কের আদলে একটি পার্ক নির্মাণ করতে চাইছে। প্রাথমিক ভাবে এই পার্ক নির্মাণের জন্য ১৪২ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। গোটা প্রকল্পটি রূপায়ণ করবে হিডকো। দিঘার বুকে কোথায় এই পার্ক গড়ে তোলা হবে সেই বিষয়ে অবশ্য এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে সেই পার্ক গড়ার জন্য জমি খুঁজতে দিঘা- শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদকে চিঠি দিয়েছে হিডকো। আশা করা হচ্ছে জমি মিললেই আগামী বছর থেকেই সেই পার্ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে যাবে। মূলত দিঘা সহ বাংলার উপকূলে সমুদ্রের নীচে যে ধরনের প্রাণী ও উদ্ভিদের দেখা মেলে, যে জীব বৈচিত্র্যের দেখা পাওয়া যায় সেটাই তুলে ধরা হবে ওই পার্কে।
আগেই দিঘার আকর্ষণ বাড়াবার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে যেমন আন্তর্জাতিক মানের কনভেনশান সেন্টার তৈরি করেছেন তেমনি পুরীর আদলে সেখানে জগন্নাথ মন্দির গড়ার কাজেও হাত দিয়েছেন। দিঘায় আসা পর্যটকেরা যাতে শঙ্করপুর, মন্দারমণি, তাজপুর থেকে ঘুরে আসতে পারেন আর সেই যাত্রাপথে তাঁরা যাতে সমুদ্রের রূপ্সহোভা দেখতে পারেন তার জন্য মেরিন ড্রাইভও নির্মাণ করেছেন। আগামী দিনে এই পথে রোপওয়ে নির্মাণের ভাবনাচিন্তা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই দিঘায় তৈরি হয়েছে হেলিপ্যাড। একই সঙ্গে সেখানে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাস ডিপোকে ঢেলে সাজানো হয়েছে যাতে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষেরা বাসে করে সহজেই দিঘায় পৌঁছাতে পারেন বা সেখান থেকে সহজেই বাড়ি ফিরে আসতে পারেন। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী নজর দিয়েছেন নিরাপত্তার দিকেও। সমুদ্রে স্নান করতে নেমে যাতে কেউ বিপদে না পড়েন তার জন্য নিত্যদিন কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন নুলিয়া ও সিভিক ভলেন্টিয়ারদের মাধ্যমে। যদিও এখনও মৃত্যুর ঘটনা সম্পূর্ণ ঠেকানো যায়নি। সমুদ্রের তীরে নানা রকমের বিনোদনমূলক খেলা ও রাইডের ব্যবস্থাও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। নানান সময়ে সেখানে আয়োজন করেছেন নানা উৎসব ও বিনোদনমূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও। আর এর জন্য নিত্যদিন এখন দিঘায় পর্যটক উপচে পড়ছে।
প্রতীকী ছবি।