বিনোদন

সঙ্গীত জগতে ফের নক্ষত্রপতন! প্রয়াত সঙ্গীত শিল্পী তথা সুরকার বাপ্পি লাহিড়ি

ফের ভারতীয় সঙ্গীত জগতে নক্ষত্র পতন৷  মুম্বইয়ের হাসপাতালে মারা গেলেন বাঙালি সঙ্গীত শিল্পী তথা সুরকার বাপ্পি লাহিড়ি৷ বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। পিটিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, মুম্বইয়ের জুহুর ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে মত্যু হয় তাঁর৷  তবে তাঁর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ কী, এখনও পর্যন্ত হাসপাতালের তরফে সে বিষেয় জানা যায়নি৷ পিটিআই সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাত এগারোটা নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাপ্পি লাহিড়ি৷ যদিও বাপ্পি লাহিড়ির এই মৃত্যুসংবাদ কিছুটা অপ্রত্যাশিতই সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে৷ হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, ‘বাপ্পি লাহিড়ির পরিবার যখন তাঁকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছয় তখন তাঁর রক্তচাপ খুবই কম ছিল৷ আমরা তাঁর হৃদস্পন্দন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ব্যর্থ হই৷ ‘ শোকবার্তা জ্ঞাপন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ও ৷বুধবার সকালে টুইট করে মমতা লেখেন, “কিংবদন্তি গায়ক এবং সুরকার বাপ্পি লাহিড়ীর অকাল প্রয়াণের খবরে মর্মাহত। আমাদের উত্তরবঙ্গের একজন মানুষ, যিনি তাঁর নিখুঁত প্রতিভা এবং কঠোর পরিশ্রমের দিয়ে সর্বভারতীয় খ্যাতি এবং সাফল্যে উন্নীত হয়েছিলেন ৷ সঙ্গীত তাঁর অবদানের মাধ্যমে তিনি আমাদের গর্বিত করেছেন ।” বিজেপির পতাকাই হাতে তুলে নিয়েছিলেন এই কিংবদন্তী ৷ ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে হুগলির শ্রীরামপুর কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে লড়েন তিনি ৷ তাঁর প্রয়াণে শোক বার্তা জ্ঞাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ৷ 

https://youtu.be/9_qyX53WDec?list=RD9_qyX53WDec

১৯৭০-‘৮০-এর দশকে একের পর এক হিট গান উপহার দিয়েছেন বাপ্পি লাহিড়ি৷ ‘ডিস্কো ড্যান্সার’, ‘শরাবি’, ‘চলতে চলতে’- তালিকাটা দীর্ঘ৷ আবার বাংলাতেও অমর সঙ্গী সহ একাধিক জনপ্রিয় ছবির হিট গানের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাপ্পি লাহিড়ির নাম৷ হিন্দির মতো বাংলা সিনেমার সঙ্গীতকেও একই ভাবে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি৷ তাঁর গান ‘চির দিনই তুমি যে আমার’…আজও সবার মুখে মুখে ঘুরছে। ২০২০ সালে হিন্দি ছবি ‘বাগি থ্রি’-তে শেষবার বলিউডের কোনও ছবিতে সুর দিয়েছিলেন তিনি৷ বাপ্পি লাহিড়ির আসল নাম অলোকেশ লাহিড়ি। ১৯৫২ সালে জলপাইগুড়ি জেলায় তাঁর জন্ম। ডাক নাম ছিল বাপি। এক আত্মীয়ের রাখা নামেই আজ তিনি বিশ্ব কাঁপিয়েছেন। বাবা অপরেশ লাহিড়ি আর মা বাঁশুড়ি লাহিড়ি দুজনেই বাংলা সঙ্গীত জগতে পরিচিত নাম ছিলেন। গানের হাতেখড়ি পরিবারেই। মাত্র ১১ বছরে প্রথম গানে সুর, ‘কাঁকড়ার জাত’ অভিযোগকে নস্যাৎ করে বাপ্পিকে মুম্বইয়ে ব্রেক দেন এক বাঙালিই৷ বাপ্পি লাহিড়ির জীবন রঙিন৷ তবে, রয়েছে সংগ্রামও। তিন বছর বয়সেই তবলা শেখা তাঁর। ইচ্ছে ছিল মুম্বইয়ে পাড়ি দেওয়ার। সেটাই করলেন তিনি৷ মাত্র ১৯ বছর বয়সে মুম্বই পাড়ি দেন গায়ক। ১৯৭৩ সালে হিন্দী ভাষায় নির্মিত নানহা শিকারী ছবিতে তিনি প্রথম গান রচনা করেন৷ এরপর তাহির হুসেনের জখমী (১৯৭৫) ছবিতে কাজ করেন। মুম্বই পাড়ি দেওয়ার আগে মাত্র ১১ বছর বয়সে প্রথমবার গানে সুর দিয়েছিলেন তিনি৷ ৩৩টি ছবির জন্য ১৮০টি গান রেকর্ড করে ১৯৮৬ সালে গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নিজের নাম তুলে নিয়েছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি।  একমাত্র ভারতীয় মিউজিক ডিরেক্টর হিসাবে ১৯৮৯ সালে জোনাথন রসের লাইভ পারফরম্যান্সে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন৷ তাঁর আইকনিক গান জিমি জিমি আজা আজা… হলিউড ছবি ‘ You Don’t Mess With The Zohan’s’-এ ব্যবহার করা হয়েছিল। বাপ্পি লাহিড়ি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তাঁর সোনা অলঙ্কার পরার কাহিনী৷ তিনি বলেছিলেন, প্রথম সোনার চেন উপহার দিয়েছিলেন মা, এর পর স্ত্রী তাঁকে গণেশের লকেট দেওয়া এক চেন উপহার দেন। তিনি মনে করেন, সোনা তাঁর জন্য বেশ লাকি। আর সে কারণেই সোনা পরে থাকার সিদ্ধান্ত তাঁর।