কলকাতা

ডাক্তারদের নিরাপত্তায় ‘প্যানিক বাটন’ সহ ১০টি  নির্দেশিকা নবান্নের, নিরাপত্তার নিয়ে অডিটের বিশেষ দায়িত্বে প্রাক্তন ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলনের সাফল্য। ডাক্তারদের নিরাপত্তায় রাজ্যের হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নে একগুচ্ছ নির্দেশিকা দিলেন মুখ্যসচিব। দশ দফা নির্দেশিকা দিয়ে স্বাস্থ্যসচিবকে এই সংক্রান্ত নোটিস পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সমস্ত হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘প্যানিক বাটন’ সিস্টেম চালু করা। রাতে পুলিশ। বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে। তিনি সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিরাপত্তার নিয়ে অডিটের বিষয়টি দেখভাল করবেন। আর জি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় হাসপাতালের নিরাপত্তার অভাবকে দায়ী করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের দীর্ঘ ৪১ দিনের আন্দোলনের অন্যতম দাবি ছিল, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা। তা নইলে কাজে ফিরবেন না বলেও জানিয়ে দেন তাঁরা। একে একে জুনিয়র চিকিৎসকদের সমস্ত দাবি সরকার মেনে নেওয়ার পরও তাঁরা কাজে ফিরতে রাজি হননি। কারণ হিসেবে ওই নিরাপত্তাহীনতার কথা বলেছেন। রাজ্য সরকার তার যথাযথ ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে বলে সাফ জানান জুনিয়র চিকিৎসকরা। এসবের পর বৃহস্পতিবার সন্ধেবেলা নবান্ন থেকে হাসপাতালগুলির সুরক্ষা পরিকাঠামো নিশ্চিত করতে সদর্থক পদক্ষেপ নেওয়া হল। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে দশ দফা নির্দেশিকা পাঠালেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বসানো হবে ‘প্যানিক বাটন’। যে কোনও অভিযোগ নিতে অভ্যন্তরীণ কমিটি এবং অন্য কমিটিগুলিকে কার্যকরী রাখতে হবে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তায় যাতে কোনওভাবেই কোনও খামতি না থাকে, তা নিশ্চিত করতে তৎপর রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয়ভাবে একটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করতে বলা হয়েছে। প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই হেল্পলাইন নম্বর দ্রুত চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তারদের জন্য পৃথক বিশ্রামকক্ষ ও শৌচালয়ের ব্যবস্থা করা হবে। হাসপাতালে পানীয় জলের বন্দোবস্ত যাতে ঠিকঠাক থাকে, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। সরকারি হাসপাতালগুলিতে কতগুলি শয্যা ফাঁকা রয়েছে, সেই সংক্রান্ত প্রতি মুহূর্তের তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য প্রতিটি হাসপাতালে এই সংক্রান্ত একটি ডিসপ্লে বোর্ড রাখতে হবে। কোনও রোগীকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করার ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয়ভাবে একটি ‘রেফারেল সিস্টেম’ দ্রুত চালু করার কথা বলা হয়েছে।

১. প্রতিটি সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসিটিভি, পানীয় জলের ব্যবস্থা, শৌচালয়, বিশ্রাম কক্ষ, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা যত দ্রুত সম্ভব করতে হবে। চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোও দ্রুত গড়ে তুলতে হবে।
২. সরকারি হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজগুলির নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যে রাজ্যের অবসরপ্রাপ্ত ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে বিশেষ দায়িত্ব দিচ্ছে রাজ্য।
৩. হাসপাতাল সংক্রান্ত অভিযোগ জানানোর সমস্ত কমিটি এবং অভ্যন্তরীণ কমিটিগুলিকে পুরোপুরি সক্রিয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৪. স্বরাষ্ট্র বিভাগের সঙ্গে কথা বলে সমস্ত সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুরুষ ও মহিলা পুলিশ কর্মী, নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করতে হবে। পুলিশের টহলদারি দল যাতে বিশেষ করে রাতে হাসপাতালে মোতায়েন করা হয় তাও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
৫. নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব তা করতে হবে।
৬. প্রতিটি হাসপাতালে বিশেষ প্যানিক অ্যালার্ম সিস্টেম চালু করার কথাও বলা হয়েছে। যাতে কেউ কোনও বিপদে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে সাহায্য পেতে পারেন।
৭. কোথায় কতগুলি বেড রয়েছে, কতগুলি প্রয়োজন তার বিস্তারিত তালিকা তৈরি করে দ্রুত রূপায়ণ করতে হবে।
৮. হাসপাতাল থেকে রোগী রেফার করার কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থা যত শীঘ্র সম্ভব চালু করতে হবে।
৯. চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের শূন্য পদের তালিকা তৈরি করে দ্রুত তা পূরণ করতে হবে।
১০. রোগী এবং রোগীর পরিজন-সহ হাসপাতালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তি করতে একটি কার্যকরী ব্যবস্থা গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব।
অর্থাৎ যে দাবিগুলি আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা জানাচ্ছিলেন তা দ্রুত পূরণের কথা বলা হয়েছে নবান্নের নির্দেশিকায়। এখন দেখার, সরকারি এই নির্দেশিকার পর জুনিয়র চিকিৎসকরা কাজে ফেরেন কি না।