দেশ

‘পরমাণু হুমকি পাকিস্তানের পুরনো অভ্যাস, ভারত ভয় পায় না’, পাক সেনাপ্রধানকে পালটা জবাব ভারতের বিদেশমন্ত্রকের 

আমেরিকায় বসে ভাতের উপর ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি দিয়েছে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। পারমাণবিক হামলার হুমকির জবাবে ভারতও কড়া ভাষায় প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, ভারত এই ধরণের কোনও হুমকিতে ভয় পায় না। বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, পারমাণবিক অস্ত্র প্রদর্শন পাকিস্তানের একটি পুরনো অভ্যাস। ভারত পারমাণবিক ব্ল্যাকমেলের কাছে নতি স্বীকার করবে না। এই দেশ নিজেদের রক্ষা করতে জানে। প্রতিবেশী দেশের মাটি থেকে করা এই মন্তব্যগুলি দুঃখজনক। বিশ্ব বুঝতে পারছে যে এই ধরণের বক্তব্য কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন। এমন একটি দেশও সন্দেহ জাগিয়ে তোলে যেখানে পারমাণবিক অস্ত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত নয় এবং জঙ্গিদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর যোগসূত্র রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়। মুনির বর্তমানে আমেরিকা সফরে রয়েছেন। দুই মাসের মধ্যে এটি তাঁর দ্বিতীয় মার্কিন সফর। এর আগে, 14 জুন তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন সেনাবাহিনীর 250তম বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। এছাড়াও, সেবার মুনির হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে দুই ঘণ্টার মধ্যাহ্নভোজের বৈঠক করেন। এই সফরে মুনির বলেন, “পাকিস্তান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে কারণ আমরা ভালো কাজের প্রশংসা করি।” দ্য প্রিন্টের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি রবিবার একটি অনুষ্ঠানে বলেন, “সিন্ধু নদীর উপর ভারত যখন বাঁধ তৈরি করবে তখন আমরা অপেক্ষা করব এবং ১০টি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে এটি ধ্বংস করব। সিন্ধু নদী ভারতের পারিবারিক সম্পত্তি নয়, আমাদের কাছে ক্ষেপণাস্ত্রের অভাব নেই।” মুনির আরও বলেন, “সিন্ধু জল চুক্তি বাতিল করার ভারতের সিদ্ধান্ত ২৫ কোটি মানুষের জন্য অনাহারের কারণ হতে পারে। আমরা একটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী জাতি এবং যদি আমরা ডুবি, তাহলে আমরা অর্ধেক বিশ্বকে সঙ্গে নিয়ে ডুববো।” টাম্পার গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে পাকিস্তানি ব্যবসায়ী আদনান আসাদের আয়োজিত এক নৈশভোজে আসিম মুনির এই হুমকি দেন। অনুষ্ঠানে প্রায় ১২০ জন প্রবাসী পাকিস্তানি উপস্থিত ছিলেন।

সিন্ধু নদী চুক্তিতে মোট 6টি নদী রয়েছে – সিন্ধু, ঝিলাম, চেনাব, রাভি, বিয়াস এবং শতদ্রু। এই ছয় নদীর তীরবর্তী প্রায় ১১.২ লক্ষ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এর মধ্যে ৪৭ শতাংশ জমি পাকিস্তানে, .৩৯ শতাংশ জমি ভারতে, ৮ শতাংশ জমি চিনে এবং ৬ শতাংশ জমি আফগানিস্তানে। এই চার দেশের প্রায় ৩০ কোটি মানুষ এই অঞ্চলে বাস করে। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান বিভক্ত হওয়ার আগেও ভারতের পঞ্জাব এবং পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের মধ্যে নদীর জল বণ্টন নিয়ে বিরোধ হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির আওতায় পাকিস্তান দুটি প্রধান নদী থেকে জল পেতে থাকে। এই চুক্তি ১৯৪৮ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। ১৯৪৮ সালের ১ এপ্রিল, যখন চুক্তির মেয়াদ ফুরলে ভারত ওই উভয় নদীর জল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এর ফলে পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের ১৭ লক্ষ একর জমির কৃষি ধ্বংস হয়ে যায়। যদিও পরবর্তী চুক্তিতে ভারত পাকিস্তানে জল সরবরাহ করতে সম্মত হয়। এরপর, ১৯৫১ সাল থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত, বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে জলবণ্টন নিয়ে আলোচনা হয় এবং অবশেষে ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর করাচিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহেরু এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের মধ্যে এই সিন্ধু জল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে ভারত সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করে