গত মাসেই রান্নার গ্যাসের দাম সিলিন্ডার পিছু ৫০ টাকা বাড়িয়েছিল কেন্দ্র। আর এবার সপ্তাহের প্রথম দিনেই শহরে আচমকা দাম বাড়ল পেট্রল ও ডিজেলের। সোমবার কলকাতায় পেট্রলের দাম লিটার পিছু ৪০ পয়সা বেড়েছে। এক লিটার পেট্রল কিনতে খরচ এখন ১০৫ টাকা ৪১ পয়সা। ডিজেলের ক্ষেত্রে লিটার পিছু ২০ পয়সা বেড়ে দাম পৌঁছেছে ৯২ টাকা ১ পয়সায়। কিন্তু সাম্প্রতিককালে শুল্ক বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেনি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার। বাড়ানো হয়নি সেস। পরিবর্তন হয়নি ডিলারদের প্রাপ্য কমিশনেরও। তাহলে হঠাৎ দাম বাড়ল কেন? তবে কি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধপরিস্থিতির আঁচ এসে লাগল পেট্রল-ডিজেলে? সংঘর্ষবিরতির পরেও? পেট্রলিয়াম মন্ত্রক অবশ্য এব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছে। এই সংক্রান্ত কোনও তথ্য প্রকাশ্যে জানায়নি। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েলের তরফে যদিও জানা গিয়েছে, ‘বেস প্রাইস’ অর্থাৎ তেলের মূল দামের পরিবর্তনের কারণে দর বেড়েছে জ্বালানির। কেমন সেই পরিবর্তন? সেটাও সরকারিভাবে জানায়নি সংস্থাটি। তবে রাজ্যের ডিলাররা জানাচ্ছেন, রবিবার রাতে জ্বালানি কেনার যে চালান তাঁদের কাছে এসেছে, সেখানে লিটার পিছু পেট্রলের ‘বেস প্রাইস’ ছিল ৮০ টাকা ৩১ পয়সা। শনিবারের তুলনায় প্রায় ৩২ পয়সা বেশি। একইভাবে রবিবার প্রায় ১৭ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে ডিজেলের বেসিক প্রাইস গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ৭৫ টাকা ৫৯ পয়সা প্রতি লিটারে। এই দরের উপর শুল্ক, সেস এবং ডিলারদের কমিশন যোগ হয়ে সোমবারের বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয়, দিল্লি, মুম্বই বা চেন্নাইয়ের মতো মেট্রো শহরগুলিতে এদিন পেট্রল বা ডিজেলের দর ছিল অপরিবর্তিত। আবার দাম কমেছে পাটনায়। সেখানে লিটার পিছু পেট্রল ৩৫ পয়সা সস্তা হয়েছে। ডিজেলের ক্ষেত্রে দাম কমেছে ৯৩ পয়সা। গুরগাঁওয়ের মতো শহরেও জ্বালানির দাম কমেছে। বেসিক প্রাইস বা মূল দামের পরিবর্তন হলে তো সর্বত্র তার প্রভাব পড়া উচিত! অথচ দেশের বেশিরভাগ জায়গায় মাসের পর মাস জ্বালানির দর অপরিবর্তিত। স্রেফ পশ্চিমবঙ্গেই তা আচমকা বেড়ে গিয়েছে। কেন এমন হল? এর কোনও ব্যাখ্যা নেই সরকারি তরফে। ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সভাপতি প্রসেনজিৎ সেন বলেন, ‘শুধু যে সাধারণ পেট্রল ও ডিজেল নয়, প্রিমিয়াম বা ব্র্যান্ডেড জ্বালানিরও দাম একই হারে বেড়েছে। রাজ্যের সর্বত্র পেট্রল ও ডিজেলের দাম লিটার পিছু ৪০ ও ২০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। এবিষয়ে আমাদের আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। যেখানে আন্তর্জাতিক স্তরে ক্রুড বা অপরিশোধিত জ্বালানির দাম কমছে, সেখানে কেন শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই দাম বাড়ানো হল? এর কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।’ অনেকেরই বক্তব্য, সরাসরি শুল্ক না বাড়িয়ে ঘুরপথে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কৌশল নিয়েছে মোদি সরকার।


