দেশ

চেনাব রেল ব্রিজ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি

22 এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা এবং তার জবাবে অপারেশন সিঁদুরের পর বুধবার প্রথম ভূ-স্বর্গে পা রাখলেন প্রধানমন্ত্রী ৷ এদিন চন্দ্রভাগা (চেনাব) নদীর উপর বিশ্বের সর্বোচ্চ আর্চ সেতু চেনাব রেল ব্রিজের উদ্বোধন করেন তিনি ৷ চেনাব নদী থেকে এই ব্রিজটি 359 মিটার উঁচুতে অবস্থিত ৷ তীর্থক্ষেত্র কাটরা থেকে শ্রীনগর সংযোগকারী এই সেতুটি 1.3 কিমি দীর্ঘ ৷ উপত্যকার যে কোনও আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে টিকে থাকবে চেনাব রেল ব্রিজ ৷ এছাড়া আঞ্জি ব্রিজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী ৷ এটি ভারতের প্রথম কেবল রেল ব্রিজ ৷ এরপর কাটরা-শ্রীনগর বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করেন তিনি ৷ এর ফলে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে রেলপথে যুক্ত হল কাশ্মীর ৷ এই বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে জম্মু ও শ্রীনগরের মধ্যে যাতায়াতের সময় কম লাগবে ৷ কাটরা জনপ্রিয় তীর্থক্ষেত্র ৷ দেশ এমনকী বিদেশ থেকে বহু পুণ্যার্থী এখানে বৈষ্ণদেবীর মন্দিরে আসেন ৷ তাই এই চেনাব রেল ব্রিজ, বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধনের ফলে শ্রীনগর-কাটরা যাতায়াতে সময় কিছুটা কম লাগবে এবং সহজ হবে ৷ ব্রিজ ও বন্দে ভারতের পাশাপাশি রাইসি জেলায় একটি মেডিক্যাল কলেজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী ৷ ঠিক একমাস আগে 6 মে রাতে পহেলগাঁওয়ের হামলার জবাবে পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের ন’টি জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংসের সামরিক অভিযান চালিয়েছিল ভারত ৷ অপারেশন সিঁদুর-এর একমাস পূর্তির দিনে জম্মু-কাশ্মীরে পৌঁছে একগুচ্ছ জনকল্যাণমূলক উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি ৷ বৈসরন উপত্যকায় পর্যটকদের জঙ্গি হামলা থেকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারান কাশ্মীরি যুবক আদিল ৷ তাঁর কথাও বক্তৃতায় উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি ৷ অপারেশন সিঁদুরের একমাস পূর্তি নিয়ে হুঁশিয়ারির সুরে তিনি বলেন, “আজ 6 জুন ৷ ঠিক একমাস আগে 6 মে রাতে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদীদের উপর সর্বনাশ নেমে এসেছিল ৷ এবার অপারেশন সিঁদুরের নাম শুনলে পাকিস্তানের তাদের লজ্জার পরাজয়ের কথা মনে পড়বে ৷ পাকিস্তানের সেনা এবং সন্ত্রাসবাদীরা কখনও ভাবতে পারেনি, ভারত পাকিস্তানের কয়েকশো কিমি ভিতরে ঢুকে এভাবে আক্রমণ শানাবে ৷ বছরের পর বছর পরিশ্রম করে সন্ত্রাসবাদের যে প্রাসাদ তারা তৈরি করেছিল, তা কয়েক মিনিট সময়ের মধ্যে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে ৷” এর আগে প্রথম এনডিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী কাশ্মীর সমস্য়ার সমাধানের পথ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছিলেন, জামুরিয়াত (গণতন্ত্র), কাশ্মিরিয়াত (কাশ্মীরে নিজস্বতা) এবং ইনসানিয়াত (মানবিকতা)- এই তিনটি বিষয়কে মাথাই রেখেই কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে হবে ৷ সেই বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে এদিন মোদি বলেন, “পহেলগাঁওয়ের হামলা মানবতা এবং কাশ্মিরী অস্তিত্বের উপর আক্রমণ ৷” তিনি বলেন, “দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের প্রতিবেশী দেশ মানবতা-বিরোধী ৷ এমনকী গরিব মানুষের রুজি-রোজগারেরও বিরুদ্ধে তারা ৷ 22 এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের ঘটনা তারই উদাহরণ ৷ পাকিস্তান মানবিকতাকে আক্রমণ করেছে ৷ কাশ্মীরের সত্তার উপর আক্রমণ চালিয়েছে ৷ ভারতে হিংসা ছড়ানোর তাদের উদ্দেশ্য ছিল ৷ কাশ্মীরের খেটে খাওয়া মানুষের আয়-উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চেয়েছিল ৷ এই কারণেই তো পাকিস্তান কাশ্মীরের পর্যটনকে আক্রমণ করেছে ৷ গত চার-পাঁচ বছরে এই পর্যটনের উন্নতি হচ্ছিল ৷ প্রতি বছর এখানে রেকর্ড সংখ্যায় পর্যটকরা ঘুরতে আসছিলেন ৷ এই পর্যটন থেকেই তো কাশ্মীরের পরিবারগুলির জীবনযাপন হত ৷ সেই পর্যটনকেই পাকিস্তান নিশানা করল ৷” এরপর তিনি পহেলগাঁওয়ে নিহত আদিলের কথা বলেন ৷ ওইদিন জঙ্গিদের গুলিতে যে 26 জনের মৃত্যু হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ছিলেন পনিওয়ালা আদিল ৷ প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “কেউ ঘোড়া চালান, কেউ পোর্টার, কেউ গাইড, কেউ গেস্ট হাউজ চালান, কারও দোকান-ধাবা রয়েছে ৷ কাশ্মীরের তরুণ আদিল জঙ্গিদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল ৷ তিনিও তো সেখানে রুটি-রুজির জন্য গিয়েছিলেন ৷ কিন্তু সন্ত্রাসবাদীরা তাঁকেও হত্যা করে ৷” জম্মু-কাশ্মীরের কাটরায় উপত্যকাবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার জন্য জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়ন ধাক্কা খাবে না ৷ এটা নরেন্দ্র মোদির প্রতিশ্রুতি ৷ আর কেউ যদি সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে তাকে সবার আগে মোদির মুখোমুখি হতে হবে ৷”