প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি রক্ষা করতে অপারেশন সিঁদুর চালানো হয়েছে ৷ কোনও রকম রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়াই ভারতের সামরিক বাহিনীকে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করতে পাঠানো হয়েছিল ৷ অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বিশেষ আলোচনায় অংশ নিয়ে এভাবেই তোপ দাগলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি ৷ মিনিট চল্লিশের ভাষণে ভারতের ‘বিদেশ নীতির পঙ্গত্ব’ নিয়েও সরব হন রায়বরেলির সাংসদ ৷ তাঁর দাবি, অপারেশন সিঁদুরের পর কোনও দেশ পাকিস্তানের নিন্দা করেনি ৷ কিন্তু ইউপিএ আমলে কোনও ঘটনা ঘটলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিন্দা হত পাকিস্তানের ৷ এখন সেটা হয় না ৷ এখান থেকেই বোঝা যায় বিদেশ নীতির দিক থেকে ভারত কতটা দুর্বল হয়ে গিয়েছে ৷ মোদির ইমেজ রক্ষা করতেই যে অপারেশন সিঁদুর হয়েছে তা বোঝাতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং থেকে শুরু করে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন রাহুল ৷ তিনি বলেন, ” সামরিক অভিযানে সাফল্য় পেতে হলে দুটো বিষয় মাথায় রাখতে হবে ৷ প্রথম হল রাজনৈতিক ইচ্ছা ৷ আর দ্বিতীয় অংশ হল সামরিক বাহিনীকে পর্যাপ্ত স্বাধীনতা দেওয়া ৷ ” এরপরই ইন্দিরার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে রাজনৈতিক ইচ্ছা ছিল ৷ ভারতের দিকে সেভেন ফ্লিট আসছিল ৷ তাও তখনকার প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যা করা দরকার সেটা আমরা করব ৷ সেনাপ্রধান (ফিল্ড মার্শাল) শ্যাম মানেক শ ইন্দিরাকে বলেছিলেন, আমি গরমে অপারেশন করতে পারব না ৷ ছ’মাস সময় লাগবে ৷ ইন্দিরা তাঁকে সেই সময় দিয়েছিলেন ৷ আর তার ফলস্বরূপ এক লক্ষ পাক সেনা আত্মসমর্পন করেন ৷ কিন্তু এখানে সেটা হয়নি ৷ অপারেশন সিঁদুর করার কোনও রাজনৈতিক অভিপ্রায় সরকারের ছিল না ৷ শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর ইমেজ রক্ষা করতে ভারতের সামরিক বাহিনীকে সংঘর্ষে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল ৷ সামরিক বাহিনীকে বলে দেওয়া হয়েছিল পাকিস্তানের সেনাঘাঁটিতে আঘাত না হানতে ৷ এটা করা মানে কার্যত ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ানদের হাত বেঁধে যুদ্ধে পাঠানো ৷” প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সোমবার লোকসভায় জাানান অপারেশন সিঁদুর রাত একটা ৫ মিনিটে শুরু হয়েছিল ৷ ২২ মিনিট চলেছিল ৷ এরপর ১ টা ৩৫ মিনিট পাকিস্তানকে ফোন করে অপারেশনের কথা জানায় ভারত ৷ এই প্রসঙ্গের উল্লেখ করে রাহুল জানান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জানেন না তিনি নিজের অজান্তেই কত বড় সত্য প্রকাশ করে ফেলেছেন ৷ রাহুলের কথায়, ” পাকিস্তানকে হামলার কথা জানাবার ব্যাপারটা কাউকে একটা চড় মেরে জানিয়ে দেওয়ার মতো ৷ আমরা পাকিস্তানকে বলেছি, আমাদের দিক থেকে হামলা হয়েছে ৷ তোমরা আর পাল্টা হামলা করো না ৷ এটা আত্মসমর্পণের সামিল ৷” নিজের ভাষণের এই অংশে রাহুল প্রথমে ইন্দেনেশিয়ায় কর্মরত এক প্রতিরক্ষা কর্তা শিব কুমার এবং পরে দেশের চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ অনিল চৌহানের দুটি মন্তব্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন রাহুল ৷ ইন্দেনেশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে শিব কুমার বলেছিলেন অপারেশন সিঁদুরের সময় ভারতের যুদ্ধবিমান ধবংস হয়েছে ৷ আবার একটি বিদেশি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিডিএস বলেছিলেন যুদ্ধবিমান কেন ধ্বংস হল তা জানা দরকার ৷ সামরিক কৌশলে ভুল ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হবে বলেও তিনি জানান ৷ এই দুটি প্রসঙ্গ তুলে রাহুল বলেন, “সামরিক নেতৃত্ব ভুল করেনি ৷ ভুল করেছেন ভারতের রাজনৈতিক নেতারা ৷ অপারেশন সিঁদুরের লক্ষ্য ছিল, প্রধানমন্ত্রীর ইমেজ রক্ষা করা ৷ পহেলগাওঁয়ের রক্ত প্রধানমন্ত্রীর হাতে লেগে রয়েছে ৷ তাই তাঁর ভাবমূর্তি রক্ষা করতেই অপারেশন সিঁদুর করা হয়েছে ৷” ভারত-পাক সংঘর্ষবিরতির পর থেকে বারবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট দাবি করছেন, তিনিই এই সংঘর্ষ বন্ধ করেছেন ৷ এ প্রসঙ্গে রাহুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ইন্দিরার মতো সাহস থাকলে এখানে বলুন ট্রাম্প মিথ্যা কথা বলছেন ৷ ইন্দিরার 50 শতাংশ সাহস থাকলেও মোদি বলবেন ট্রাম্প মিথ্যা কথা বলছেন ৷” প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকেও নিশানা করেন রাহুল ৷ সোমবার লোকসভায় বিদেশমন্ত্রী বলেন, পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিন্দা করেছে ৷ এ প্রসঙ্গে রাহুলের দাবি, বিভিন্ন দেশ জঙ্গি হামলার নিন্দা করলেও কেউ পাকিস্তানের নিন্দা করেনি ৷ এটা দেশের বিদেশ নীতির ব্যর্থতা এবং নীতি পঙ্গুত্ব ৷ এই বিষয়ে নিজের বক্তব্যের সমর্থনে আরও একবার ট্রাম্পের প্রসঙ্গ তোলেন রাহুল ৷ তাঁর কথায়, “পহেলগাঁও হামলার মূল চক্রী আসিম মুনির (পাকিস্তানের সেনাপ্রধান) ৷ তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করছেন ৷ শুধু তাই নয়, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আসিম মুনিরকে তিনি ধন্যবাদ জানাতে চান কারণ তিনি ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে না গিয়ে সংঘাত শেষ করেছেন ৷ বিদেশমন্ত্রী কোন দুনিয়ায় বাস করেন জানি না ৷ তাঁকে মাটিতে নেমে আসতে বলব ৷” বক্তব্যের অন্য একটি অংশে রাহুল বলেন, “অপারেশন শেষে ভারত সরকার বলেছে, এখন থেকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপকে যুদ্ধ বলা হবে ৷ তার মানে কেউ যুদ্ধ করতে চাইলে শুধু একটা সন্ত্রাসবাদী হামলা করবে ৷ তিন চার মাস আগে আমি এই সভায় বলেছিলাম চিন আর পাকিস্তানকে আলাদা রাখা ভারতের বিদেশমন্ত্রীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ৷ এখন সেই সুযোগ আর রইল না ৷ ভারত সরকার ভেবেছিল তারা পাকিস্তানের সঙ্গে লড়ছিল কিন্তু পরে জানা গেল চিন আর পাকিস্তান একত্রে লড়াই করেছে ৷ শুধু তাই নয় চিন পাকিস্তানকে যুদ্ধের তথ্য দিয়েছে ৷”


