ক্রাইম

বিদেশে বহু মহিলাকে মাদক খাইয়ে ধর্ষণ, তল্লাশি চালিয়ে ৪৭টি ধর্ষণের ভিডিও উদ্ধার, সিডনি আদালতে দোষী সাব্যস্ত বিজেপি নেতা

সিডনির কুখ্যাত ধর্ষকের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তথা বিজেপির ঘনিষ্ঠতা প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির

সিডনি: কাজের নামে ডেকে ড্রাগ খাইয়ে অজ্ঞান করে চলত শারীরিক নিগ্রহ। সেই কীর্তির আবার ভিডিও করে রাখত সে। সিডনির সেই ‘সিরিয়াল ধর্ষক’ বলেশ ধনকড়কে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত। বিজেপির সমর্থনে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসীদের নিয়ে একটি সংগঠনও তৈরি করেছিল বলেশ ধনকড়। অস্ট্রেলিয়ায় বসে অন্তত ৫ জন কোরিয়ান মহিলাকে বাড়িতে ডেকে মাদক খাইয়ে অচৈতন্য করে ধর্ষণ করার অভিযোগে সোমবার ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করেছে সিডনির একটি আদালত। বলেশ ধনকড় নামে ৪৩ বছর বয়সি ওই ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়ায় বিজেপির সংগঠন ‘ওভারসিজ ফ্রেন্ডস অফ ভারতীয় জনতা পার্টি’র প্রধান। সূত্রের খবর, অভিযুক্ত বলেশ পেশায় একজন ডেটা এক্সপার্ট। কর্মসূত্রেই অস্ট্রেলিয়ায় থাকে সে। ২০১৮ সালে ৫ জন কোরিয়ান মহিলাকে মাদক খাইয়ে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছিল, সেই বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে এই অপরাধগুলি করেছিল সে। জানা গেছে, বছর কয়েক আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘কোরিয়ান অনুবাদক চাই’ বলে বিজ্ঞাপন দেয়। সেই সূত্র ধরে তার সঙ্গে একের পর এক মহিলা যোগাযোগ করেন। তাদের ক্যাফেতে ডেকে ‘ভুয়ো ইন্টারভিউ’ নিত বলেশ ধনকড়। সেখান থেকে মহিলাদের নিয়ে যেত নৈশভোজে। এরপর যে কোনও ছুতোয় তাদের নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়ে ড্রাগ খাইয়ে অচেতন করে দিত। তারপর চলত শারীরিক নিগ্রহ। তা রেকর্ড করেও রাখা হত। সেই অভিযোগে এবার ধনকড়কে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত। ৫ জন নির্যাতিতার সঙ্গেই একই হোটেল, কোরিয়ান রেস্তোরাঁ এবং ক্যাফেতে দেখা করেছিল বলেশ। তারপর সিডনির সিবিডি এলাকায় নিজের ষ্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টে তাদের ডেকে নিয়ে আসত অভিযুক্ত। এরপর ওয়াইন এবং অন্য পানীয়ের মধ্যে বিভিন্ন ডেট রেপ ড্রাগ মিশিয়ে ওই মহিলাদের খেতে দিত প্রাক্তন বিজেপি নেতা । সেসব খেয়ে তাঁরা অচৈতন্য হয়ে পড়লে তাঁদের ধর্ষণ করত বলেশ। শুধু তাই নয়, বেডসাইড অ্যালার্ম ঘড়ির পিছনে লুকিয়ে রাখা ক্যামেরা কিংবা নিজের মোবাইলে রেকর্ড করত ধর্ষণের ঘটনা। পুলিশ সূত্রে খবর, তার বাড়ি থেকে তল্লাশি চালিয়ে ধর্ষণের ৪৭টি ভিডিও উদ্ধার করে পুলিশ। সেগুলির বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মহিলাদের সঙ্গে যৌন সঙ্গম করতে দেখা গেছে বলেশকে। কোনও কোনও ভিডিওতে এমনটাও দেখা গেছে, ধর্ষণের সময়েই জ্ঞান ফিরে এসেছে নিগৃহীতার, এবং তিনি যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, প্ৰত্যেকজনকে ধর্ষণ করার ভিডিও নির্যাতিতাদের নাম সহ আলাদা আলাদা ফোল্ডারে সযত্নে রাখা ছিল। বলেশকে গ্রেফতার করার পর তার বিরুদ্ধে ৩৯টি অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়, সেগুলির মধ্যে ১৩টি ধর্ষণের মামলা। কিন্তু বলেশ আদালতে তার বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, ওই ৫জন মহিলা স্বেচ্ছায় তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছেন এবং তাঁদের ইচ্ছেতেই সঙ্গমের ঘটনা ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে। এরপর ৫ জন নিগৃহীতাকেই আদালতে ডেকে এনে জেরা করা হয় এবং তাঁদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। এছাড়া জুরিরা বিচারের জন্য ধর্ষণের ভিডিওগুলিও দেখতে বাধ্য হন। জানা গেছে, সেই ভিডিও দেখার সময় জুরিরা এতটাই অসুস্থ বোধ করছিলেন এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে তাঁরা বিচারকের কাছে তাড়াতাড়ি বাড়ি যাওয়ার জন্য আর্জি জানিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, বলেশ ধনকড় বিজেপির সমর্থক ‘ওভারসিজ ফ্রেন্ডস অফ বিজেপি’ সংগঠন গড়ে তুলেছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তিনি দেখা করে ছবিও রয়েছে তার। সেই ছবি এখনও জ্বলজ্বল করছে ধনকড়ের ওয়েবসাইটে। এমনকী, এনএসডব্লিউর সরকারি অনুষ্ঠানেও বক্তব্য রেখেছে সে। সবমিলিয়ে সিডনির কুখ্যাত এই ধর্ষকের সঙ্গে মোদি তথা বিজেপির ঘনিষ্ঠতা প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির।