রবিবার রাতে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে উত্তরবঙ্গের কোচবিহার জেলার খলিগঞ্জ থানা এলাকার চ্যাংড়াবান্ধা এলাকায়। জেলারই শীতলকুচি এলাকার ২৭ জন যুবকের একটি দল একটি পিক-আপ ভ্যান ভাড়া করে জলপাইগুড়ির জল্পেশের শিব মন্দিরের পথে রওয়ানা দিয়েছিল জল ঢালার উদ্দেশ্য নিয়ে। ওই পিক আপ ভ্যানে তাঁরা ডিজে বাজাবার জন্য বড় বড় বক্স তোলার পাশাপাশি জেনেরেটরও তুলেছিল। চ্যাংড়াবান্ধার ধরলা নদীর সেতু পার করার পরে পিক আপ ভ্যানের চালক লক্ষ করেন গাড়িতে থাকা সকলেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে। তা দেখে তিনি গাড়িটি চ্যাংড়াবান্ধা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই ১০ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। মৃতরা হল শুভঙ্কর বর্মন, স্বপন বর্মন, বাদল বর্মন, বিশাল তিরকি, বিভাস বর্মন, বিক্রম বৈশ্য, বাপি বর্মন, লক্ষ্মণ বর্মন, মানব বর্মন এবং সুশান্ত বর্মন। ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়া ১৬ জনকে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ঘটনার জেরে মাথাভাঙার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত বর্মা জানান, গাড়িতে থাকা জেনারেটরটি দিয়ে ডিজে বাজানো হচ্ছিল। সেই জেনারেটরটি কোনও ভাবে শর্ট সার্কিট হয়ে গিয়ে এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। তবে ওই পিক আপ ভ্যানের চালক পলাতক। গাড়িটি অবশ্য পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে। রাতেই দেহগুলি ময়নাতদন্ত করা হয়। সোমবার সকাল থেকেই সেই দেহ একটার পর একটা অ্যাম্বুলেন্সে চাপিয়ে নিহতদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। যারা হই হই করে শিবের মাথায় জল ঢালতে গিয়েছিল তাঁরাই ফিরছে নিথর হয়ে। এক একটা অ্যাম্বুলেন্স ঢুকছে আর পাড়ায় কান্নার রোল উঠছে। অন্যদিকে এলাকার মানুষের দাবি, ধর্ম নিয়ে ছেলেখেলা এবার বন্ধ হোক। তাঁদের দাবি, শ্রাবণ মাসে শিবের মাথায় জল ঢালতে যাওয়ার প্রবণতা দীর্ঘ কয়েক শতাব্দীর। কিন্তু বর্তমানে তরুণ প্রজন্ম এই ঘটনাকে খেলাচ্ছলে নিয়ে নিচ্ছে। নিজেদের নিরাপত্তার কথাটাও তাঁরা ভাবছে না। পরিশুদ্ধ মন ও শরীর নিয়ে জল ঢালার যে নিয়ম রয়েছে সেটাই আর মানছে না তাঁরা। ডিজে বাজিয়ে জল ঢালতে যাওয়ার কথা যেমন কোথাও বলা নেই, তেমনি মদ্যপ অবস্থায় বা গাঁজা-ভাং খেয়ে জল ঢালতে যাওয়ার কথাও কোনও ধর্মশাস্ত্রে বলা নেই। ধর্ম নিয়ে এই ছেলেখেলা এবার বন্ধ হোক। ১০টা তরতাজা প্রাণ হারিয়ে এখন এটাই শীতলকুচির উপলব্ধি।