দেশ

বাংলায় এজেন্সি এত সক্রিয় কেন? জবাব দিতে টালবাহানা, মোদি সরকারকে ভর্ৎসনা সুপ্রিমকোর্টের!

বাংলায় কেন্দ্রীয় এজেন্সির সক্রিয়তা সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে আবারও জবাব এড়িয়ে গেল মোদি সরকার। আর তার জেরে বুধবার কেন্দ্রকে পড়তে হল তিন বিচারপতির বেঞ্চের ভর্ৎসনার মুখে। সর্বোচ্চ আদালত প্রশ্ন তুলল, কেন বারবার সময় নিচ্ছেন? এতে আদালতেরই তো সময় নষ্ট হচ্ছে। তাতেও অবশ্য চুপই থাকলেন রইলেন কেন্দ্রের আইনজীবী তথা সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। রাজ্যের অনুমতি ছাড়া যখন ইচ্ছা যে কোনও মামলায় সিবিআই এফআইআর ও তদন্ত করতে পারে কি না, সুপ্রিম কোর্টে তা নিয়ে জবাব এড়াচ্ছে মোদি সরকার। পশ্চিমবঙ্গ সরকারই এই মামলা দায়ের করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। ভোট-পরবর্তী সংঘর্ষ ইস্যুতে সিবিআই তৎপরতার বিরোধিতায় হাইকোর্টের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করেই এই পদক্ষেপ। এক-আধবার সেই মামলার সামান্য শুনানি হলেও তা আর বেশি দূর এগয়নি। যখনই পরবর্তী তারিখ নির্ধারিত হচ্ছে, নানা ছুতোয় ‘সময়’ চেয়ে নিচ্ছে কেন্দ্র। শুনানি হয়ে যাচ্ছে মুলতুবি। প্রায় দু’বছর ধরে সমানে চলছে এই টালবাহানা। তার জেরেই এদিন এজলাসে ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হল মোদি সরকারকে। ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে সুপ্রিম কোর্টের কাছে ‘সময়’ চেয়ে যাচ্ছে মোদি সরকার। এদিনও তার অন্যথা হয়নি। অথচ পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রতিবারই প্রস্তুত ছিল সওয়ালের জন্য। রাজ্যের আইনজীবী হিসেবে এজলাসে হাজির ছিলেন কপিল সিবাল। কেন্দ্র বারবার সময় চাওয়ায় হাল্কা চালে তিনি বলেন, ‘এভাবে মামলা পিছোলে আমার মক্কেল (পশ্চিমবঙ্গ সরকার) তো আমাকেই সন্দেহ করতে শুরু করবে। তাই মামলার শুনানি তো অন্তত শুরু হোক।’ কিন্তু এদিন নয়, অন্যদিন শুনানি হোক— এই অবস্থানে অনড় ছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি আর্জি পেশ করেন, ‘প্রয়োজনে আগামী মঙ্গলবারও তা হতে পারে। নিদেনপক্ষে একদিন পর। এটা তো আর কোনও বাড়ি ভাঙার (ডেমোলিশন) মামলা নয় যে, এখনই শুনানি দরকার।’ তাঁর এবারের অজুহাত অবশ্য ছিল, ‘অন্য এজলাসে মামলা চলছে, সেখানে যেতে হবে। তাই মামলা পিছিয়ে দিন।’ শেষপর্যন্ত অবশ্য শুনানি পিছোতে সমর্থ হন তিনি।
বিচারপতি বি আর গাভাই, বিচারপতি পি এস নরসিমা এবং বিচারপতি অরবিন্দ কুমারের বেঞ্চ নিমরাজি হয়ে কেন্দ্রের আর্জি অনুমোদন করে। তবে সেই সঙ্গেই তিনজনে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এটাই শেষবার। বৃহস্পতিবার মামলা শুনব। কেন্দ্রের উদ্দেশে বিচারপতি গাভাইয়ের মন্তব্য, ‘কেন বারবার সময় নিচ্ছেন? আপনাদের যা বলার আছে, তা বলে নিন না। মামলা শুনবে বলে তৈরি আছে বেঞ্চ। কিন্তু সলিসিটর জেনারেল সময় চেয়ে আদতে আদালতেরই সময় নষ্ট করছেন। বৃহস্পতিবারও যদি শুনানি সম্পূর্ণ না হয়, তাহলে গোটা দিনটা নষ্ট হবে।’
ভোট পরবর্তী সংঘর্ষের মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু তার বিরোধিতায় ‘অধিকারে’র প্রশ্ন তোলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সংবিধানের ১৩১ অনুচ্ছেদকে হাতিয়ার করে সর্বোচ্চ আদালতে দায়ের করা হয় মামলা। সেটা ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট। প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকা ডিওপিটি অর্থাৎ কর্মিবর্গ মন্ত্রককে (যার অধীনে সিবিআই) বিবাদী করা হয়। প্রথম শুনানির তারিখ পড়ে ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর। আর সেদিনই কেন্দ্রের জবাব চেয়ে নোটিস ইস্যু করে শীর্ষ আদালত। তারপর থেকে ক্রমেই জবাব এড়াচ্ছে মোদি সরকার। কেন? তবে কি সিবিআই তৎপরতার জুতসই কোনও জবাব নেই কেন্দ্রের হাতে? এই প্রশ্নই তুলছে নবান্ন।