জেলা

হিলিতে স্কুলের স্টাফ রুমে ঢুকে শিক্ষিকাকে বিবস্ত্র করে মারধর করার ঘটনায় গ্রেফতার ৪

ছাত্রীকে শাসন করায় স্কুলের স্টাফ রুমে ঢুকে শিক্ষিকাকে প্রায় নগ্ন করে শ্লীলতাহানি ও মারধর করার ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হল ৪জন। ঘটনাস্থল উত্তরবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট সদর মহকুমার হিলি থানা এলাকা। এই হিলি থানা এলাকার ত্রিমোহিনী প্রতাপচন্দ্র উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষিকাকে শুক্রবার দুপুরে স্কুল চলাকালীন সময়ে স্টাফ রুমের ভিতরে প্রায় নগ্ন করে শ্লীলতাহানি ও মারধর করে গ্রামের কয়েকজন। সেই ঘটনায় আরও নিন্দানীয় হয়ে ওঠে স্কুলের প্রধান শিক্ষক কমল কুমার জৈনের ভূমিকা। কেননা অভিযোগ ওঠে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও ওই শিক্ষিকাকে নিগ্রহের হাত থেকে বাঁচাননি, নিগ্রহকারীদের বাধা দেননি এমনকি গোটা বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে গোটা ঘটনাটি মিটমাট হয়ে গিয়েছে। পরে এই ঘটনা নিয়ে সর্বত্র নিন্দার ঝড় ও প্রতিবাদ শুরু হলে তিনি তাঁর অবস্থান বদল করেন। জেলা জুড়ে উঠল তীব্র প্রতিবাদের ঢেউ। দোষীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে পথে নামলেন একধিক শিক্ষক সংগঠন, ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলিও।  শনিবার রাতেই তিনি এই বিষয়ে হিলি থানায় ৫ জনের নামে অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয়েছে ৪ জনকে।জানা গিয়েছে, মূল ঘটনার সূত্রপাত গত বৃহস্পতিবার। সেদিন ত্রিমোহিনী প্রতাপচন্দ্র উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় স্কুল চলাকালীন সময়ে ক্লাসে না থেকে স্কুলের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করছিল নবম শ্রেণীর ছাত্রী জার্নাতুন খাতুন। বিষয়টি ওই সহকারী শিক্ষিকার নজরে আসে, তিনি বার কয়েক ওই ছাত্রীকে ক্লাসে ঢুকে পড়তে বললেও সে তা করেনি। তার জেরে ওই সহকারী শিক্ষিকা তাকে কান ধরে ক্লাস ঘরে ঢুকিয়ে দেন। সেই ঘটনার জেরে জানার্তুন বাড়িতে গিয়ে বলে ওই সহকারী শিক্ষিকা নাকি ধর্ম নিয়ে গালিগালাজ করেছে। তার জেরেই

শুক্রবার সকালে জানার্তুনের বাড়ির লোকেরা ও বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী ওই স্কুলে চড়াও হয়ে স্টাফ রুমে ঢুকে ওই সহকারী শিক্ষিকাকে বিবস্ত্র করে মারধর করে। তাঁর শ্লীলতাহানিও করা হয়। ঘটনার সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক সেখানে উপস্থিত থাকলেও তিনি কোনও পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ ওঠে। এমনকি ঘটনার পরে তিনি পুলিশকেও বিষয়টি জানাননি। সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা এই ঘটনার খবর পেয়ে স্কুলে এলে তিনি তাঁদের জানিয়ে দেন যে ঘটনার মিটমাট হয়ে গিয়েছে। শিক্ষিকাকে মারধর করা হলেও নাকি তাঁকে বিবস্ত্র করা হয়নি ও তাঁর শ্লীলতাহানির মতোও নাকি কোনও ঘটনা ঘটেনি।কিন্তু শনিবার এই ঘটনায় আশেপাশের স্কুলের পড়ুয়া থেকেই শিক্ষিকা রাস্তায় নেমে দোষীদের বিলম্বে গ্রেফতারির দাবি জানান। সেই সঙ্গে ত্রিমোহিনী প্রতাপচন্দ্র উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে কমল কুমার জৈনের অপসারনের দাবিও তলেন তাঁরা। কার্যত দিনভর চলে জেলার নানা প্রান্তে স্কুল পড়ুয়া ও শিক্ষকমহলের এই প্রতিবাদ বিক্ষভ। তার জেরেই শেষে শনিবার রাতে ওই সহকারী শিক্ষিকাকে নিয়ে হিলি থানায় গিয়ে ৪ জন মূল অভিযুক্তের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন কমল কুমার। সেই অভিযোগে যে ৫ জনের নাম ছিল তারা হল – ফিরদৌস মণ্ডল, আফ্রুজা মণ্ডল, জাকির হোসেন, মাসুদা খাতুন ও মাফুজা খাতুন। এদের মধ্যে শনিবার রাতেই পুলিশ জাকির হোসেন ছাড়া বাকি সকলকেই গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এদিন আদালতে এই ৪জনকেই তলা হয়েছে। সেই সঙ্গে জাকিরের সন্ধান শুরু করেছে পুলিশ।