তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীরা যাঁরা বিজেপিতে গিয়েছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগই বিজেপির টিকিটে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সেই আশা তাঁদের পূরণ হয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি যাঁরা সেইভাবে বিজেপির হয়ে কাজ করেননি, তাঁরাও টিকিট পেয়েছেন। এমনকী প্রার্থী হয়েছেন মাত্র কয়েকদিন আগে দলে যোগ দেওয়া সেলিব্রিটিরাও। তা নিয়ে ক্ষোভ ছিলই দলের অন্দরে। গত কয়েকদিন ধরেই রাজ্যজুড়ে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। সেই ক্ষোভেরই বিস্ফোরণ হিসেবে এবার অনেক আসনেই বিক্ষুব্ধরা বিজেপি থেকে বেরিয়ে এসে নির্দল হয়ে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সুত্রের খবর, খোদ কলকাতার বুকে চলছে গোপন বৈঠক। ২-৩ দিনের মধ্যে তাঁরা সাংবাদিক বৈঠকও করতে পারেন। এই ‘দলীয় বিদ্রোহীদের নিয়েই চিন্তায় বঙ্গ বিজেপি। বেশ কয়েকদিন আগে অমিত শাহ এব্যাপারে রাজ্য নেতৃত্বকে ভর্ৎসনাও করেন। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল মাঠে নামলেও বরফ গলেনি। আট দফা নির্বাচনে প্রার্থী তালিকা যত প্রকাশ্যে এসেছে, তত ক্ষোভ-বিক্ষোভ বেড়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় গত ১৯ তারিখ কলকাতায় গোপন বৈঠক করেন বিভিন্ন জেলার প্রায় ১৬০ কেন্দ্রের আদি বিজেপি নেতারা। কয়েকজন রাজ্যস্তরের নেতাও ছিলেন সেখানে। বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, প্রায় ১৫৫টি আসনে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করানো হবে। ঘটনা জানতে পেরে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা শনিবার এবং রবিবার আদি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। যদিও সমাধান সূত্র বেরোয়নি। ইতিমধ্যে পুরুলিয়ার জয়পুর, বলরামপুর, পাড়া, বাকুঁড়ার বিষ্ণপুর, ছাতনা, পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি উত্তর এবং হুগলির পুরশুড়া আসনে আদি বিজেপিরা নির্দল হয়েই মনোনয়নপত্র জমা করে দিয়েছেন। চতুর্থ থেকে অষ্টম দফার ভোটের মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য এখনও হাতে সময় রয়েছে। ফলে আশঙ্কা বাড়ছে পদ্মের অন্দরে। এদিকে আজ, সোমবার বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য কৃষ্ণা ভট্টাচার্য হুগলির উত্তরপাড়া আসনে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। খুব শীঘ্রই প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁরা প্রতিবাদ জানাতে চলেছেন। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত কেন? ১৯ মার্চের বৈঠকে উপস্থিতদের বক্তব, আমরা ২৬০ জনের প্রার্থী তালিকায় মাত্র ২০ জন পুরনো বিজেপি নেতাকে খুঁজে পেয়েছি। বাকি সবই তৃণমূল এবং অভিনেতা-অভিনেত্রী। যাঁরা এতদিন তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করলেন, সেই আদি বিজেপিরা ঢাকা পড়ে গেল ফেসিয়াল করা মুখের আড়ালে! অথচ, দুর্দিনে এই নেতা-কর্মীরাই পদ্মফুলের ঝান্ডা নিয়ে হেঁটেছিলেন। এখন যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, সেই বিজেপিকে আমরাই চিনি না। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।