লোকসভা নির্বাচনের আগেই স্যাটেলাইট চ্যানেল, পোর্টালে ‘নিয়ন্ত্রণ’ শুরু হয়ে গেছে। এবার স্থানীয় কেবল চ্যানেলে খবর পরিবেশনের ক্ষেত্রেও কার্যত ‘ফতোয়া’ জারি করল মোদি সরকার। কেবল অপারেটরদের স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল, নির্দিষ্ট কিছু স্থানীয় বিষয়ের বাইরে সাধারণ খবর তারা সম্প্রচার করতে পারবে না। বিধিনিষেধের এই তালিকায় থাকবে রাজনীতি সংক্রান্ত খবর এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলিও। ভোটের আগে সরকারি এই নির্দেশনামায় স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, সরকার ও শাসক বিরোধী খবর প্রচারে পাঁচিল তুলতেই কি এই উদ্যোগ? ২ ফেব্রুয়ারি মোদি সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক এই সংক্রান্ত বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। নতুন নিয়ম ইতিমধ্যে গোটা দেশে কার্যকর হয়ে গিয়েছে। আর পাশাপাশি শুরু হয়েছে বিতর্কও। কেন্দ্র সাফ জানিয়েছে, গাইডলাইন না মানলে চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়া হবে। বাজেয়াপ্ত করে নেওয়া হবে তাদের উপকরণও। কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত গাইডলাইনে কেবলের নিজস্ব চ্যানেলের অনুষ্ঠানকে ‘প্ল্যাটফর্ম সার্ভিস’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখানে স্থানীয় কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর অনুষ্ঠান পরিবেশন করা যাবে। এই বিষয়গুলির তালিকা কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক খবর কিন্তু তালিকায় নেই। স্থানীয় যে সব বিষয় দেখানো যাবে, তার মধ্যে আছে খেলাধুলো, যানবাহন চলাচল, আবহাওয়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, উৎসব, পরীক্ষা ও ফলাফল, ভর্তি, চাকরি-কেরিয়ার, জল, বিদ্যুতের মতো পরিষেবা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সতর্কবার্তা। এই সব বিষয় সংক্রান্ত অনুষ্ঠান পরিবেশন করতে গেলেও চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে কোম্পানি হিসেবে নথিভুক্তি করাতে হবে। কেবল টিভি সম্প্রচারে জড়িত মাল্টি সিস্টেম অপারেটরদের (এমএসও) সঙ্গে যুক্ত থাকবে কোম্পানিগুলি। গাইডলাইন সংক্রান্ত নির্দেশিকাটি ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর জারি করেছিল তথ্যমন্ত্রক। এক বছরের মধ্যে কোম্পানি তৈরি করে নথিভুক্ত করার নির্দেশ তখনই দেওয়া হয়েছিল। গত ১ ডিসেম্বর থেকে নতুন গাইডলাইন কার্যকর হয়ে গিয়েছে বলে তথ্যমন্ত্রকের সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও নাকি অনেক এমএসও এবং লোকাল কেবল অপারেটার (এলসিও) রেজিস্ট্রেশন না করিয়েই কেবল চ্যানেলের মাধ্যমে খবর সম্প্রচার করছে বলে দাবি মন্ত্রকের। তার উল্লেখ করে কেন্দ্র বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এর ফলে ফেক ও পেইড নিউজ সম্প্রচারের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, বিজেপি শাসিত ত্রিপুরায় ইতিমধ্যেই এনিয়ে তুমুল হইচই চলছে। ওই রাজ্যে স্থানীয় খবর সম্প্রচারের জন্য কোনও স্যাটেলাইট চ্যানেল নেই। যে বাংলা স্যাটেলাইট নিউজ চ্যানেলগুলি ত্রিপুরার মানুষ কেবলের মাধ্যমে দেখতে পান, সেগুলি কলকাতা ও অসম থেকে সম্প্রচারিত হয়। স্বাভাবিকভাবে সেখানে ত্রিপুরার খবর খুব একটা থাকে না। ওই রাজ্যে ২০টির বেশি কেবল নিউজ চ্যানেল চলে। সেখানে গুরুত্ব পায় ত্রিপুরার খবর। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকার পর ওই সব নিউজ চ্যানেলের পরিচালকরা মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মানিকবাবু বিষয়টি কেন্দ্রীয় তথ্যমন্ত্রী অনুরাগ সিং ঠাকুরকে জানান। এরপর কেবল পরিচালকদের প্রতিনিধিরা দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিবেচনার আশ্বাস দিলেও বিধিনিষেধ কিন্তু খুব একটা শিথিল হয়নি। দেশের অন্যতম এমএসও সংস্থা সিটি কেবল কর্তা সুরেশ শেঠিয়া বলেন, ‘এমএসওর আওতায় বহু নিউজ চ্যানেল দীর্ঘদিন ব্যবসা করছে। সরকার যদি স্যাটেলাইট চ্যানেলের মতো কোনও পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন তৈরি করে দেয়, তাহলে চ্যানেলগুলি বেঁচে যাবে। তা না হলে সরকারের নির্দেশ মানা ছাড়া আমাদের অন্য কোনও উপায় নেই।’