ক্রাইম দেশ

কেন্দ্রীয় রিপোর্টে মুখ পুড়ল মোদি সরকারের!  শিশু যৌন নির্যাতনে দেশে শীর্ষস্থানে রয়েছে ৩ ‘ডবল ইঞ্জিন’ রাজ্য

কেন্দ্রীয় রিপোর্টে মুখ পুড়ল মোদি সরকারের। লোকসভায় লিখিতভাবে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি যে তথ্য তুলে ধরেছেন তা গেরুয়া শিবিরের মুখ পোড়াবার জন্য যথেষ্ট। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) রাজত্বপাটেও দাগ লাগিয়ে দিয়েছে। কার্যত মোদির মুখই পুড়িয়েছে। কেননা সেই তথ্য বলছে, ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পকসো আইনে মামলা নথিভুক্তি, সাজাপ্রাপ্তির হারের ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে সব থেকে বেশি ঘটনা ঘটেছে ৩টি বিজেপি শাসিত রাজ্যে, মানে ‘ডবল ইঞ্জিন’ রাজ্যে। সেই ৩টি রাজ্যের মধ্যে আবার শীর্ষে রয়েছে যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশ। পরের দুটি রাজ্য হল মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশ। শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনায় দেশের মধ্যে শীর্ষে এই তিন রাজ্যই ‘ডাবল ইঞ্জিন’! স্মৃতির দেওয়া তথ্য বলছে, ২০২১ সালে পকসো আইনে সবথেকে বেশি মামলা দায়ের হয়েছে যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশ। এখানেই শেষ নয়, ২০১৬ থেকে ২০২১ সালে অর্থাৎ মোদি জমানার প্রথম ছ’বছরে সারা দেশে পকসো আইনে মামলা নথিভুক্তির সংখ্যা লক্ষ্যণীয় মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে বলেই সরকারি হিসেব। কিন্তু উল্লিখিত সময়সীমায় প্রতি বছরই সাজাপ্রাপ্তির হার (কনভিকশন রেট) রয়ে গিয়েছে ৪০ শতাংশেরও নীচে। বিষয়টি সামগ্রিকভাবে যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন শিশু অধিকার ও সুরক্ষার সঙ্গে জড়িত মানুষজনেরা। দেখা যাচ্ছে ২০২১ সালে উত্তরপ্রদেশে পকসো আইনে মোট ৭,১২৯টি কেস নথিভুক্ত হয়েছে। মহারাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রদেশে এই সংখ্যা যথাক্রমে ৬,২০০ ও ৬,০৭০। মামলা বেশি দায়ের হলেও উল্লিখিত বছরে মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশে সাজাপ্রাপ্তির হার অত্যন্ত কম। যথাক্রমে ২৬.১ এবং ৩৩.৫ শতাংশ। ওই দু’টি রাজ্যের তুলনায় উত্তরপ্রদেশে এই হার বেশি, ৬৪.২ শতাংশ। কিন্তু তা ২০২০ সালের চেয়ে কম। সে বছর যোগীরাজ্যে পকসো আইনে সাজাপ্রাপ্তির হার ছিল ৭০.৭ শতাংশ। অর্থাৎ, মাত্র একবছরে বিজেপির ‘মডেল রাজ্যে’ পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রকের পরিসংখ্যান থেকে আরও দেখা যাচ্ছে যে, ২০১৬ সালে সারা দেশে এহেন নথিভুক্ত মামলার সংখ্যা ছিল ৩৬,০২২টি। ২০২০ সালে তা বেড়ে হয় ৪৭ হাজার ২২১। এবং ২০২১-এ ৫৩,৮৭৪। ২০২০-২০২১, এই এক বছরে যোগীরাজ্যে এমন মামলার সংখ্যা ৬,৮৯৮টি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৭,১২৯টিতে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় তথ্য এটাও বলছে, ২০১৬ থেকে ২০২১—এই সময়সীমায় সাজাপ্রাপ্তির সর্বোচ্চ হার দেখা গিয়েছে ২০২০ সালে। সেটি হল মাত্র ৩৯.৬ শতাংশ। ওই বছর ৪৭,২২১টি মামলায় ৫৯,০০২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। যদিও ৬,৫০০ জনের বেশি অভিযুক্তই খালাস পেয়ে গিয়েছে। শিশু-কিশোরদের যৌন হেনস্তার হাত থেকে বাঁচানোর লক্ষ্যেই ২০১২ সালে আনা হয় পকসো আইন। এই আইনে ১৮ বছরের কম বয়সিকে সব নাবালককে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়। ২০১৯ সালে সেই আইনে সংশোধনও হয়েছে। কিন্তু এই ধরনের অপরাধে লাগাম টানা যায়নি। লোকসভায় ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই উল্লিখিত পরিসংখ্যান প্রকাশ করে তা আবারও বোঝাল কেন্দ্র। কিন্তু এই তথ্যই এখন একাধারে মোদি সরকারের পাশাপাশি গেরুয়া শিবিরের ও বিজেপির মুখই বেশি করে পোড়াচ্ছে।