দুর্গাপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনসভা ঘিরে যখন জোর প্রস্তুতি, ঠিক তখনই সোশাল মিডিয়ায় এক আবেগঘন বার্তা দিলেন তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলাম । মতুয়া সম্প্রদায়ের এক পিতার কান্না ও তাঁর দু’পুত্রের দুঃখ-কষ্ট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীকে জবাবদিহি চান তিনি। তাঁর অভিযোগ, বাংলাভাষীদের উপর বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে ‘বিদ্বেষের রাজনীতি’ চলছে এবং তারই বলি হচ্ছেন সাধারণ হিন্দু বাঙালি শ্রমিকরা।
সামিরুলের শেয়ার করা ভিডিওতে রানাঘাটের বাসিন্দা নিশিকান্ত বিশ্বাস অভিযোগ করছেন, তাঁর দুই ছেলে-মণীশঙ্কর ও নয়ন—রুজির সন্ধানে মহারাষ্ট্রে গিয়েছিলেন ৷ কিন্তু গত ছ’মাস ধরে সেখানে পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন তাঁরা ৷ নিশিকান্তের দাবি, তাঁদের ঘর ছাড়ার একমাত্র কারণ ছিল মায়ের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করা ৷ অথচ আজ সেই অসুস্থ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত মা শয্যাশায়ী এবং ছেলেদের অনুপস্থিতিতে বাড়ির অবস্থা করুণ। তিনি আরও জানান, তাঁর পরিবার বিজেপিকেই ভোট দিয়েছিল। এমনকি, বিজেপির মন্ত্রী তথা সর্বভারতীয় মতুয়া মহাসংঘের নেতা শান্তনু ঠাকুরের দেওয়া পরিচয়পত্রও ছিল ছেলেদের কাছে। তবু তা কোনও সুরক্ষা দিতে পারেনি মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকারের পুলিশের হাতে । সামিরুল ইসলাম প্রশ্ন তুলেছেন, “যদি তাঁরা ভারতীয় নাগরিক না হন, তাহলে শান্তনু ঠাকুর কীভাবে তাঁদের পরিচয়পত্র দিলেন ?”
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তৃণমূল সাংসদের খোলা প্রশ্ন:
১) বাংলা থেকে মহারাষ্ট্রে কাজ করতে যাওয়া হিন্দু মতুয়া যুবকদের কেন ‘বিদেশি’ তকমা দিয়ে জেলে পুরে রাখা হয়েছে ?
২) বিজেপি নেতারা বারবার বলেন সব বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীই রোহিঙ্গা। তবে হিন্দু ভারতীয়দের এই অবস্থা কেন ?
৩) শান্তনু ঠাকুরের দেওয়া পরিচয়পত্র যদি বৈধ হয়, তবে এই গ্রেফতারিকে কীভাবে বিচার করবেন ?
৪) বাঙালি হিন্দুদের ‘বাংলাদেশি’ বলে দাগিয়ে দেওয়ার প্রবণতা কি বিজেপির জাতীয়তাবাদী মুখোশ খুলে দিচ্ছে না ?
এই প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, “আপনি আজ রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, নেতাজির নাম নেবেন। কিন্তু তাঁদের ভাষা, তাঁদের পরিচিতি-বাঙালি পরিচয়-আপনারাই তো বারবার লাঞ্ছিত করছেন । আমরা অনুপ্রবেশকারীদের পক্ষে নই । আমাদের লড়াই সেই হিন্দু ভারতীয় নাগরিকদের জন্য, যাঁদের শুধুমাত্র বাংলা ভাষা বলার কারণে অপমানিত হতে হচ্ছে ।”
প্রধানমন্ত্রীর সফরের ঠিক আগেই সামিরুলের এই পোস্টকে রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে তৃণমূল ৷ কারণ, এই ইস্যুতে বারবার সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও । বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলা ভাষাভাষী শ্রমিকদের ‘বাংলাদেশি’ বা ‘রোহিঙ্গা’ বলে চিহ্নিত করে হেনস্থার ঘটনার কড়া প্রতিবাদ করেছেন তিনি। সামিরুল জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই তিনি এই বিষয়ে বিশেষ নজর রাখছেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই ভিডিও ও অভিযোগ 2026 বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র বিরুদ্ধে বড় অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। কারণ, বিজেপি যাঁদের ‘ঘরের লোক’ বলেছে, সেই মতুয়া সম্প্রদায়ই এবার বঞ্চনার অভিযোগ তুলছে । সামিরুল স্পষ্ট বলেন, “আপনি হয়তো এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাবেন, কিন্তু এই মতুয়া ভাইদের চোখের জলই 2026 নির্বাচনে বাংলার রায় জানিয়ে দেবে।”


