বিনোদন

স্তব্ধ টলিউড! শুটিং বয়কট পরিচালকদের, বিকেলে বৈঠকের ডাক

শেষ পর্যন্ত স্তব্ধই হতে চলল টলিউডের ফ্লোর। পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়কে ঘিরে পরিচালক এবং টেকনিশিয়ানদের সংঘাতের সুর গত কয়েকদিন ধরে চড়ছিল। রবিবার তা চরম আকার নেয়। পরিচালকরা জানিয়ে দেন, আজ, সোমবার থেকে তাঁরা অনির্দিষ্টকালের জন্য শুটিং ফ্লোরে যাবেন না। তাঁদের এই সিদ্ধান্তে অথৈ জলে পড়ল বাংলা সিনেমা, সিরিয়াল এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মের বিভিন্ন শুটিং। রবিবার থেকেই সব টিভি সিরিয়ালের শুটিং বন্ধ হয়ে গিয়েছে। টালিগঞ্জের টেকনিশিয়াদের সংগঠন ‘ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ান ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র বিরুদ্ধে একজোট হয়ে প্রতিবাদে নেমেছেন পরিচালকরা। স্টুডিয়োপাড়ার একাংশের ‘দাদাগিরি’র বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন তাঁরা। রাহুলের বিরুদ্ধে ফেডারেশনের অভিযোগ, তিনি একটি ওয়েবসিরিজ়ের কাজ শুরু করেন টালিগঞ্জে। কিন্তু চার দিন শুট করার পরে কাউকে কিছু না-জানিয়ে বাংলাদেশে গিয়ে বাকি শুটিং সেরে আসেন। এর প্রতিবাদেই রাহুলকে বয়কট করার কথা বলে ফেডারেশন। রাহুল নিজে ডিরেক্টর্স গিল্ডের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও প্রথমে গিল্ডই তাঁকে তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করেছিল। কিন্তু পরে তারাও মনে করে, রাহুল ভুল কিছু করেননি। ফলে সাসপেনশন তুলে নেওয়া হয়। শনিবার টেকনিশিয়ান্‌স স্টুডিয়োয় প্রযোজক সংস্থা এসভিএফের একটি সিনেমার শুটিং ছিল। পরিচালকের আসনে ছিলেন রাহুল। অভিযোগ, তাঁকে দেখেই টেকনিশিয়ানরা কাজ না-করে চলে আসেন। অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্যরা দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরেও শুটিং করতে পারেননি। এর পরেই নজিরবিহীন ভাবে প্রতিবাদ শুরু করেন পরিচালক, প্রযোজক এবং অভিনেতারা। পরিচালক এবং বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী শনিবারই দু’দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বলেছিলেন, ‘দু’দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান না-হলে সোমবার থেকে পরিচালকরা শুটিংয়ে যোগ দেবেন না।’ রবিবার এ নিয়ে দীর্ঘ বৈঠকে বসেন ডিরেক্টর্স গিল্ডের সদস্যরা। পরে গিল্ডের সম্পাদক সুদেষ্ণা রায় বলেন, ‘আমরা গিল্ডের সব সদস্যের মতামত নিয়েছি। আমরা কোনও হুলিয়া জারি করিনি। তবে অনুরোধ করেছিলাম, যাতে এই সমস্যার সমাধান না-হওয়া পর্যন্ত পরিচালকরা শুটিংয়ে না যান। সিংহভাগ সদস্যই তাতে সহমত পোষণ করেছেন। তাই আপাতত আমরা কেউই শুটিংয়ে যোগ দিচ্ছি না।’ যদিও কেউ কাজ করতে চাইলে তাঁকে বাধা দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন সুদেষ্ণা। একই সঙ্গে এই কর্মবিরতি শুধুমাত্র বাংলা ভাষার সিনেমা, সিরিয়াল, ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য প্রযোজ্য বলেও গিল্ড জানিয়েছে। সূত্রের খবর, প্রায় ২১০ জন পরিচালক আজ থেকে কাজে আসবেন না। এই জটিলতা কাটাতে রবিবার মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছিল অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সংগঠন ‘আর্টিস্টস ফোরাম’। তাদের তরফে এক বিবৃতিতে অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক, জিৎ এবং শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় আবেদন করেন, ‘আমরা কোনও ভাবেই চাই না শুটিং ব্যাহত হোক… সব শিল্পী, কলাকুশলী, প্রযোজক, পরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট সকলের স্বার্থে এই অচলাবস্থার দ্রুত অবসান হওয়া উচিত। প্রয়োজনে আর্টিস্টস ফোরাম মধ্যস্থতাকারীর দায়িত্ব নিতে রাজি।’ কিন্তু তার পরেও বরফ গলেনি। এ দিন পরিচালকদের তরফে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা মনে করি ফেডারেশন একটি সমগ্র ইন্ডাস্ট্রির একচ্ছত্র নিয়ামক হতে পারে না। ভুলভ্রান্তি, সমস্যা যা-ই হয়ে থাক, তার সুষ্ঠু সমাধান না-করে কাউকে জোর করে কর্মবিরতি নিতে বাধ্য করা অসাংবিধানিক। ভুল বোঝাবুঝি বুঝতে পেরে আমাদের ডিরেক্টর্স গিল্ড রাহুল মুখোপাধ্যায়ের উপরে আরোপিত কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরেও যে ভাবে টেকনিশিয়ানরা অসহযোগিতার পথে গিয়েছেন, তা শুধু রাহুলের জন্য নয়, প্রত্যেক পরিচালকের জন্যই অপমানজনক এবং ক্ষতিকারক।’ সাংবাদিকদের জন্য ফেডারেশনের তরফে জারি করা বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘প্রত্যেক সদস্যদের জানানো হচ্ছে যে আজ কিছু প্রযোজক, পরিচালক ও শিল্পী সংঘবদ্ধ হয়ে ফেডারেশনকে শেষ করে দিতে, আমাদের সকলের রুজি রুটিকে বিপন্ন করতে এবং গুপী শুটিংকে স্বীকৃতি দিতে- তারা গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ও মিথ্যা বদনাম দেওয়ার প্রতিবাদে এবং আমাদের অস্তিস্ত্ব ও পেটের অন্ন যোগানোর কর্মস্থলকে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার জন্য, বিকেল ৪টেয় টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে সকলকে আসার অনুরোধ করা হচ্ছে।’