অযোধ্যায় যে রামমন্দির নিয়ে বিজেপির এত হইচই সেই অযোধ্যার লোকসভা আসন ফৈজাবাদেই ভোটের তরী ডুবেছে বিজেপির। ওই আসনে সমাজবাদী পার্টির অবধেশ প্রসাদ জিতেছেন ৫৪ হাজার ৫৬৭ ভোটে। আর রাজ্যে বিজেপি পেয়েছে মাত্র ৩৩ আসন। ফলাফল বেরিয়ে যাওয়ার পর বিজেপির এই হার নিয়ে কাটাছেঁড়া হচ্ছে বিস্তর। উঠে আসছে নানা কারণ। অযোধ্যায় বিজেপি প্রার্থী ছিলেন লাল্লু সিং। অন্যদিকে সমাজবাদী পার্টির তরফে প্রার্থী ছিলেন অবধেশ প্রসাদ। ৫ বারের বিধায়ক। দলিত। অযোধ্যার ভোটারদের এক বড় অংশ দলিত। সপা এলাকার দলিত মানুষজনকে বোঝাতে পেরেছিল এলাকার ছোট দোকান, ছোট ব্যবসায়ী, ছোট হাটেল সবাই ধুঁকছে। যেভাবে অযোধ্যায় উন্নয়ণের নামে বড় বড় গুজরাতের ব্যবসায়ীদের ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতেই ছোট ব্যবসায়ীরাই ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে! অযোধ্যায় রাম মন্দিরকে নিয়েই মেতেছিল মোদি সরকার। ফলে অবহেলা করা হয়েছে গোটা ফৈজাবাদকে। সাধারণ মানুষজন যখন একটা ঘর চাইছে, কাজ চাইছে সেই সময় যোগী সরকারের মুখে ছিল অযোধ্য়ার উন্নয়নের নামে রাম মন্দির। যার জেরে এলাকার মানুষের হতাশায় ভুগছিল। যারা জীবনের সব আয় মন্দির তৈরিতে দিয়ে দিয়েছেন তাদেরকেও মনে রাখেনি সরকার। রাম মন্দির নির্মাণে তিরিশ বছর কেটে গিয়েছে মামলা মোকদ্দমা করতে। তারপর মামলায় জয় হয়েছে মন্দির পক্ষের। কিন্তু মন্দিরের নামে যে রাজনীতি হয়েছে তা মেনে নিতে পারেনি সাধারণ মানুষ। তারা দেখেছে রাজনীতি হয়েছে কিন্তু তাদের উন্নতি হয়নি। মন্দির নির্মাণ হয়েছে অযোধ্যায়। তার প্রচার হয়েছে বিশাল। মন্দির শুধু নয়, অযোধ্যাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে তুলেছে যোগী সরকার। তার জন্য ভাঙা হয়েছে প্রচুর বাড়ি, দোকান এমনকি মন্দিরও। এতে মানুষ বাসস্থান হারিয়েছে, রুটিরুজি হারিয়েছে। তাদের সেভাবে সুরাহা করতে পারেনি সরকার। বিজেপি প্রার্থী লাল্লু সিংয়ের বিরুদ্ধে একটি প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া প্রবল ছিল। পাঁচ বারের বিধায়ক ছিলেন কিন্তু এলাকার উন্নয়নে তিনি কিছুই করেননি বলে দাবি অনেকের। যা কিছু হয়েছে তা বাইরের লোকদের জন্য। লাল্লু সিং বলে বেড়াতেন দেশের সংবিধান বদল করার জন্য ৪০০ আসন চাই। এমন কথা ভালো ভাবে নেয়নি সাধারণ মানুষ। ক্ষমতার নেশা ভয়ংকর নেশা। তাই ক্ষমতার চেয়ারে বসে নিজেকে ‘বিশ্বগুরু’ হিসেবে দেখানোটাই দস্তুর। এটাও ভালো চোখে নেয়নি সাধারণ মানুষ।