সম্পাদকীয়

মোদির মহিলা সংরক্ষণ বিল, ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত? নয়া মোড়কে প্রাচীন বিলেই ভোট-গিমিক!

মোদি সরকারের প্রচারে, আয়োজনে এবং অবশ্যই গিমিকে। মহিলা সংরক্ষণ বিল যে আসন্ন লোকসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদির মোক্ষম একটি তাস হতে চলেছে, সে ব্যাপারে সন্দেহের কোনও অবকাশ গেরুয়া শিবিরও রাখছে না। রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে মঙ্গলবার লোকসভায় এই বিল পেশ হয়েছে, সংবিধানের ইতিহাসে এটি হতে চলেছে ১২৮তম সংশোধনী-এই সবের শেষেও আড়ালে থেকে যাচ্ছে একটি প্রশ্ন। বিশেষ এই অধিবেশনে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ হয়ে গেলেও কার্যকর হতে কতদিন লাগবে? ছ’বছর। কারণ, প্রথম ধাপ, অর্থাৎ সংসদের দুই কক্ষে পাশ হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির সই পর্ব না হয় দ্রুতই মিটে যাবে। দ্বিতীয় ধাপ, রুলস তৈরি এবং বিজ্ঞপ্তি জারির পর কার্যকর হয়ে যাবে আইনও। তারপর? দীর্ঘ অপেক্ষা। লোকসভা এবং বিধানসভা আসন ডিলিমিটেশনের বা পুনর্বিন্যাসের পরই আসন সংরক্ষণ সম্ভব। আর সেই ডিলিমিটেশন হবে ২০২৬ সালে। আসন পুনর্বিন্যাস কীসের ভিত্তিতে হয়? জনগণনা। ২০২১ সালে যে জণগণনা করার কথা, আজও সেই সেন্সাস করে উঠতে পারেনি মোদি সরকার। ২০২৪ সালেও পারবে না। সুতরাং লোকসভা ভোটের আগে চটকদারি ঘোষণা মোদি সরকার শোনালেও ২০২৪ সালের ভোটে মহিলা সংরক্ষণ হবে না।আজ লোকসভায় এই বিলের আলোচনা। আর তাতে বিরোধীদের পক্ষে প্রধান বক্তার নাম? সোনিয়া গান্ধী। কোমর বেঁধেই আসরে নামছে বিরোধী শিবির। তাদের সাফ কথা, এটাই মোদি সরকারের গিমিক। এটাই ভোটের গেম প্ল্যান। নামেই লোকসভা ও বিধানসভায় মোট আসনের ৩৩ শতাংশ মহিলা সংরক্ষিত করার প্রতিশ্রুতি। আদপে হচ্ছে না কিছুই। সবটা নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজি। এই বিলের গুরুত্ব এমনই যে, অধিকাংশ বিরোধী দলই এর সমর্থনে সরকারের পাশে থাকবে। মানে, মহিলা সংরক্ষণ পাশ হচ্ছেই। কিন্তু ছ’বছর সময়সীমাটা এক্ষেত্রে মারাত্মক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ছ’বছরের অর্থ, ২০২৯ সাল। আরও একটি লোকসভা ভোটের বছর। এই বিলে আর একটি প্যাঁচ কোথায়? খসড়ায় বলা হচ্ছে, আইনে পরিণত হওয়ার ১৫ বছর পর মহিলা সংরক্ষণ ব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়া হবে। সুতরাং ২০২৯ সালের পর হাতে থাকবে মাত্র ৯ বছর। অর্থাৎ, ফের নতুন করে আইন না করলে মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের সুবিধা বেশিদিনের নয়।এই সংক্রান্ত বিল অবশ্য বহুবার অতীতে সংসদে উঠেছে। যাত্রা শুরু রাজীব গান্ধীর আমলে, ১৯৮৯ সাল। রাজীবের চেষ্টা ছিল, প্রাথমিকভাবে পঞ্চায়েত ও পুরসভা নির্বাচনে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ। তা তিনি পাশ করাতে পারেননি। কিন্তু নরসিমা রাওয়ের আমলে পঞ্চায়েত ও পুরসভায় ৩৩ শতাংশ মহিলা সংরক্ষণ আইন পাশ হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে এইচ ডি দেবগৌড়ার আমলে হয়েছিল লোকসভা ও বিধানসভায় মহিলা আসন সংরক্ষণ। তারপর থেকে দফায় দফায় প্রতিটি সরকার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে পারেনি। শেষবার ২০১০ সালে রাজ্যসভায় এই বিল পাশ হয়ে রয়েছে। তবে আটকে গিয়েছে লোকসভায়। এবারও বিল আনা হল। তবে পুরনোটাই নতুন মোড়কে। লক্ষ্য, ইতিহাস রচনা! মোদির প্রিয় সাবজেক্ট! পুরনো প্রকল্পের নতুন নাম। ২৭ বছর ধরে ছিল ‘মহিলা সংরক্ষণ বিল’। নাম বদলে এবার হল, ‘নারীশক্তি বন্দন অভিনিয়ম ২০২৩!’ হিন্দির জয়যাত্রা। মোদির নতুন ভারতে। তাহলে ইন্ডিয়াকে কি মোদি একেবারেই ভুলেছেন? তা কিন্তু নয়। এদিনের আত্মপ্রচার পর্বে তাঁর কথাতেই এসেছে মেক ইন ‘ইন্ডিয়া’। সংবিধানে এখনও ভারত যে ‘ইন্ডিয়া’ও।