পরকীয়ার প্রতিবাদ করায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগ যুবকের বিরুদ্ধে ৷ মালদার বৈষ্ণবনগরের ঘটনায় জোড়া খুনের মামলায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷ অভিযোগ, খুনের ঘটনাকে ছিনতাই প্রমাণ করার চেষ্টাও করেছিলেন অভিযুক্ত ৷ ঘটনায় অভিযুক্ত যুবক আবদুল সালামকে সাতদিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানিয়েছিল বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশ ৷ তবে, মালদা জেলা আদালতের মুখ্য দায়রা বিচারক ধৃতকে পাঁচদিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন ৷ জানা গিয়েছে, মৃতের নাম রুকসানা খাতুন ৷ তাঁর বয়স ১৯ বছর ৷ বছর দেড়েক আগে ১০ বছরের আবদুল সালামের সঙ্গে দেখাশোনা করে বিয়ে হয় দু’জনের ৷ বৈষ্ণবনগর থানায় দায়ের হওয়া অভিযোগে মৃতের বাবা হোসেন মিয়াঁ জানান, তাঁর মেয়ে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন ৷ সম্প্রতি আবদুল এক তরুণীর সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়ান ৷ যা জানাজানি হতেই রুকসানার সঙ্গে অশান্তি শুরু হয় আবদুলের ৷ এমনকি রুকসানাকে মারধরও করতেন তাঁর স্বামী ৷ এ নিয়ে দুই পরিবারের উপস্থিতিতে গ্রামে সালিশি সভাও বসেছিল ৷ সেই সময় আবদুল সভার নির্দেশ মেনেও নিয়েছিলেন ৷ কিন্তু, পরবর্তীতে আবারও ওই তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেন আবদুল ৷ হোসেন মিয়াঁ জানিয়েছেন, গর্ভকালীন বিশ্রাম এবং প্রসবের জন্য কয়েকদিন আগেই মেয়ে তাঁর বাড়ি এসেছিলেন ৷ প্রথম সন্তানের জন্ম, তাই খুব উৎসাহী ছিলেন রুকসানা ৷ শনিবার রাত ন’টা নাগাদ তাঁর মোবাইলে একটি ফোন আসে ৷ ফোনে কথা বলতে-বলতে রুকসানা বাড়ির বাইরে বেরিয়ে যান৷ রাত সাড়ে ন’টা বেজে গেলেও তিনি বাড়ি না-ফেরায়, পরিবারের চিন্তা শুরু হয় ৷ তাঁরা মেয়ের মোবাইলে ফোন করেন ৷ কিন্তু, রিং হলেও ধরেননি রুকসানা ৷ এরপরেই পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন ৷ বাড়ির কাছেই অচেতন অবস্থায় রুকসানাকে পড়ে থাকতে দেখেন তাঁরা ৷ তাঁর কানের দুল আর মোবাইল ফোন পাওয়া যায়নি ৷ ডান কানে আঘাতের চিহ্ন আর গলায় দাগ দেখেন তাঁরা ৷ তা নজরে আসতেই, রুকসানাকে স্থানীয় বেদরাবাদ গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায় পরিবার ৷ সেখানকার চিকিৎসক রুকসানাকে মৃত ঘোষণা করেন ৷ এই ঘটনায় রবিবার ভোরে বৈষ্ণবনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন হোসেন মিয়াঁ ৷ অভিযোগ পেয়ে রুকসানার মোবাইলের কল লিস্ট খতিয়ে দেখে পুলিশ ৷ ছ’ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হয় আবদুল সালামকে ৷ পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, “এই ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) আবু বক্কর, এসডিপিও (কালিয়াচক) ফয়সাল রাজা এবং বৈষ্ণবনগর থানার আইসি তদন্তে নামেন ৷ তদন্তে মৃত গৃহবধূর স্বামীর নাম সামনে আসে ৷ তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয় ৷ দফায় দফায় জেরার পর আবদুল সালাম স্বীকার করে নেয় ৷” পুলিশ সুপার আরও বলেন, “পরকীয়ার কাঁটা সরাতেই পরিকল্পনা করে অভিযুক্ত তাঁর স্ত্রীকে খুন করেছেন ৷ তাঁর উপর যাতে কারও সন্দেহ না-হয়, তার জন্য বাবার বাড়িতে থাকাকালীন স্ত্রীকে খুন করার পরিকল্পনা করেন ৷ একই কারণে খুনের পর রুকসানার কানের সোনার দুল আর মোবাইল ফোন নিয়ে চলে যায় অভিযুক্ত যুবক ৷”