বিদেশ

১৭৮ বছরের থমাস কুক দেউলিয়া, বিশ্বজুড়ে কর্মহীন ২২ হাজার কর্মী

ব্রিটেনঃ দেনা মেটানোর জন‌্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করা যায়নি। যার জেরে সোমবার সকালে বন্ধই হয়ে গেল ১৭৮ বছরের ব্রিটিশ ভ্রমণ সংস্থা থমাস কুক। এক লহমায় বেকার হয়ে গেলেন সংস্থার ২২ হাজার কর্মী। আর বিদেশে ছুটি কাটাতে যাওয়া কয়েক লক্ষ পর্যটক এখন কার্যত ‘বন্দি’। তাঁদের উদ্ধারে শান্তির সময়ে দেশের ইতিহাসে বৃহত্তম অভিযান ‘অপারেশন ম‌্যাটারহর্ন’ শুরু করতে চলেছে ব্রিটেন সরকার। পর্যটকদের নিখরচায় দেশে ফেরাতে সরকার এবং অসামরিক বিমান পরিবহণ দপ্তর কয়েক ডজন চার্টার্ড বিমান ভাড়া করেছে।অর্থনৈতিক সংকট জাঁকিয়ে বসেছিল গত কয়েক বছর ধরেই। তবু সংস্থার তরফে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছিল পুনরুজ্জীবিত করার। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে দিল থমাস কুক। সংস্থার বন্ধ হয়ে যাওয়ার অর্থ বিশ্ব পর্যটনের দেড় শতকের ঐতিহ্যে আঘাত। ব্রেক্সিট নিয়ে অনিশ্চয়তার জেরে ভ্রমণপিপাসু ব্রিটিশ নাগরিকদের উৎসাহে ভাটার কথা কয়েক মাস আগেই জানিয়েছিল থমাস কুক। যার পরিণতিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল ঋণের বোঝা। ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় ১৪ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। অনলাইন ভ্রমণ সংস্থাগুলির রমরমাও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলে দিয়েছিল ওই সংস্থাটিকে। অংশীদার ও ঋণদাতা সংস্থাগুলির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও সমাধান না মেলায় কর্তারা শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেন। সংস্থার চিফ এগজিকিউটিভ পিটার ফানহুসার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। দেনা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়েছে সংস্থা। এত বছর ধরে যেসব পর্যটক, কর্মী আমাদের পাশে ছিলেন তাঁদের ধন্যবাদ। কোম্পানির বোর্ড সংস্থাকে টেনে তুলতে পারেনি এটা আমাদের ব্যর্থতা।’ বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় আটকে থাকা পর্যটকদের উদ্দেশে থমাস কুকের তরফে জানানো হয়েছে, সংস্থার সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশিকা না দেওয়া পর্যন্ত বিমান ধরতে যাবেন না। এই অবস্থায় পর্যটকদের ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। ভাড়া করছে প্রচুর বিমান। এমনকী, সুদূর মালয়েশিয়া থেকেও। কল সেন্টার, বিমানবন্দরে রয়েছেন সহায়ক কর্মীরাও। কিন্তু এত বড় ও জটিল কর্মকাণ্ড শেষ করতে সপ্তাহ দুয়েক লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই কিছুটা দুর্ভোগ সহ‌্য করতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন পরিবহণসচিব গ্রান্ট শ‌্যাপস। বছরে ১ কোটি ৯০ লক্ষ পর্যটককে দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যেত থমাস কুক। ছিল নিজস্ব বিমান, হোটেল, রিসর্ট। বিদেশে আটকে থাকা পর্যটকদের বিমা অনুযায়ী তাঁদের ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব সরকারের। ২০১৭-য় এভাবেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল মনার্ক এয়ারলাইন্স। আটকে পড়া যাত্রীদের ফেরাতে সরকারের পাঁচ কোটি পাউন্ড খরচ হয়েছিল। এবার অভিযান হবে আরও বড় আকারের। দ্বিগুণ অর্থ ব‌্যয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তার উপর থমাস কুকের কাছ থেকে বকেয়া অর্থ না মেলার আশঙ্কায় পর্যটকদের কাছ থেকেই পাওনাগণ্ডা আদায় করতে চাইছে বহু হোটেল কর্তৃপক্ষ। পর্যটকরা রাজি না হওয়ায় অনেককে হোটেলে আটকে দেওয়া হয়েছে। হস্তক্ষেপ করতে ছুটছেন ব্রিটিশ দূতাবাসের কর্মীরাও। কারণ, বিমার আওতায় হোটেলের খরচও সরকারি তরফে পাওয়া যাবে। বিপাকে প্রায় দশ লক্ষ ভবিষ‌্যৎ ভ্রমণার্থীও। যাঁদের টিকিট কাটা হয়েছিল। তবে তাঁরা বিমা সংস্থার তরফে অর্থ ফেরত পাবেন।