বিক্রমের সঙ্গে তাঁদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যখন বিক্রম চাঁদের মাটি থেকে ২.১ কিলোমিটার দূরে ছিল। কিন্তু তারপর বিক্রমের কী হল? এটাই এখন বড় প্রশ্ন। বলা হচ্ছিল বিক্রমকে যদি নামার জন্য ইসরো থেকে কন্ট্রোল তখন নাও করা হয় তাহলেও সে নিজের সুবিধামত জায়গা খুঁজে নেমে যাবে। এই পরিমাণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তার ছিল। তাহলে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ সম্ভব হল না কেন? এখানেই ক্র্যাশ ল্যান্ডিংয়ের সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। যা উড়িয়ে দিচ্ছেন না ইসরোর বিজ্ঞানীরাও। বিক্রম যখন নামছিল তখন ব্রেক কষার নিয়ম মেনেই নামছিল। একদম ঠিকঠাক। কিন্তু চাঁদের অনেকটা কাছে পৌঁছে একবার দেখা যায় বিক্রম তার নির্দিষ্ট রাস্তা ছেড়ে পাশে সরে যায়। কিন্তু দ্রুত আবার নিজের জায়গায় ফেরত আসে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন এই সময়ে বিক্রম কিছুটা হেলে গিয়েছিল। কিন্তু নিজেকে সামলে নেয়। এরপর নিজের রাস্তায় ফিরেও আসে। কিন্তু এই ফেরত আসার পরই বিক্রমের সঙ্গে সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন হতে পারে যেভাবে গতি নিয়ন্ত্রণের কথা ছিল তা ঠিকমত করে উঠতে পারেনি বিক্রম। কোথাও ভুল ত্রুটি হয়। যারফলে সে তার গতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়নি। শনিবার ভোররাত ২.২৫ মিনিট নাগাদ সংযোগ ছিন্ন হওয়ার কথা ঘোষণা করে দেন ইসরোপ্রধান কে সিবন। সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছেও এভাবে ব্যর্থ হওয়ায় চন্দ্রযান-২-র পুরো দলটাই ভেঙে পড়েছে। কিন্তু কোনওমতেই তাদের এতদিনের চরম খাটনিকে অস্বীকার করতে পারবে না কেউই। পুরুষ, মহিলা বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার, প্রযুক্তিবিদ, কর্মী মিলিয়ে পুরো চন্দ্রযান-২ অভিযানের দলে ছিলেন ১৬৫০০ জন। বিক্রমের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া হৃদয় বিদারক হওয়া সত্ত্বেও ইসরোর বিজ্ঞানীরা মনে করছেন এতে চন্দ্রায়ন-২ মিশনের ক্ষতি হয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। মূল অরবিটার চন্দ্রায়ন-২ এখনও চাঁদের কক্ষে ঘুরছে। সফলভাবেই ঘুরছে। ২ হাজার ৩৭৯ কেজির অরবিটারটি চাঁদকে আরও ১ বছর প্রদক্ষিণ করতেই থাকবে।
অবতরণের ব্যর্থতার সম্ভাব্য কারণ –
অবতরণযান বিক্রম এবং নিয়ন্ত্রণকক্ষের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়াকেই আপাতত প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছে ইসরো। কারণ চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, তার ভূমির প্রকৃতি এবং ধুলো যে কোন অবতরণযানের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক বলে মনে করা হয়। তাই সম্ভাবত অবতরণ যানটি সম্ভবত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দ্রুত গতিতে অবতরণের সময় চাঁদের বুকে আছড়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন সফলভাবে চাঁদের বুকে মহাকাশযান অবতরণ করাতে সমর্থ হয়েছে। ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত ২১ বছরে আমেরিকা ও রাশিয়া মোট ৯০ বার চন্দ্রযাত্রার চেষ্টা চালায়। ইসরায়েল গত এপ্রিল মাসে ‘বেরেশিট’ নামে একটি মহাকাশযান চাঁদের বুকে নামানোর চেষ্টা করলেও সেটি ব্যর্থ হয়।