হক জাফর ইমাম, মালদা: মালদা জেলার সাদুল্লাপুর মহাশ্মশানে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে বৈদ্যুতিক চুল্লি, চরম বিপাকে পড়েছেন জেলার সাধারণ মানুষ। মালদা জেলার সাদুল্লাপুরের দুটি ইলেকট্রিক সানিলিন তত্ত্ববধানে দায়িত্বে আছে মালদা জেলা পরিষদ। সেই জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে চরম উদাসীনতার অভিযোগ তুলে দিচ্ছেন মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনরা। সেই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়েই এবার তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত মালদা জেলা পরিষদকে চরম অস্বস্তিতে ফেলতে আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু করেছে বিজেপি।৭২ ঘণ্টার মধ্যে মহাশ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লি চালু না হলে শবদেহ নিয়ে মালদা জেলা পরিষদ ঘেরাও করার পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। তবে জেলা পরিষদের দাবি বৈদ্যুতিক চুল্লি দ্রুত সারিয়ে তোলার সবরকম চেষ্টা করা হচ্ছে। তার পরেও মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছে বিজেপি।উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মালদা জেলার ঐতিহ্যবাহী সাদুল্লাপুর মহাশ্মশানে প্রথমবারের বৈদ্যুতিক চুল্লি বসে। এই বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর খরচ বহন করেছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা মালদহের তৎকালীন সংসদ এ বি এ গনি খান চৌধুরী। আবু বরকত গনি খান চৌধুরীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিল মালদা জেলা বাসী।পরে আরো একটি বৈদ্যুতিক চুল্লি চালু করা হয় সাদুল্লাপুর মহাশ্মশানে। সেটিও বসানোর উদ্যোগ নেন গনি খান চৌধুরীই। তবে পরিষেবার কথা ভেবেই দুটি চুল্লিকে একসঙ্গে ব্যবহার করা হতো না। একটিকে চালু করে অপরটিকে বিশ্রামে রাখা হতো।কিন্তু ইলেকট্রিক চুল্লি স্থাপনের ১৫ বছর কেটে যাওয়ায় সমস্যা কর্ম ক্ষমতা হারাতে শুরু করেছে দুটি চুল্লিই। বর্তমানে এমন অবস্থা যে একটি চুল্লিও কাজ করছে না। ফলে ফের পুরনো দিনের মতো কাঠের চুল্লীতেই চলছে শবদাহ। এতে একদিকে যেমন তীব্র দূষণ ছড়াচ্ছে, তেমনই সময়ও লাগছে দীর্ঘক্ষন। এই পুরো বিষয়টি নিয়েই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন শ্মশান যাত্রীরা। তাদের বক্তব্য, সাদুল্লাপুর মহাশ্মশানের সঙ্গে মালদাবাসীর ভাবাবেগ যুক্ত। অন্যান্য শ্মশানের সঙ্গে এই মহাশ্মশানের পার্থক্য আছে। এই মহা শ্মশানের পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে আদিগঙ্গা নদী। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস, ভগীরথ স্বর্গ থেকে যে গঙ্গা নিয়ে এসেছিলেন পৃথিবীতে তারই একটা ধারা বয়ে যাচ্ছে সাদুল্লাপুর মহা শ্মশানের পাশ দিয়ে। সেই সাদুল্লাহপুরেই ইলেকট্রিক চুল্লির একটাও কাজ না করায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। রবিবার রাতে তার মায়ের শবদেহ করতে গিয়েছিলেন মালদা শহরের বাসিন্দা সুমন দেব। তিনি বলেন, বৈদ্যুতিক চুল্লির একটিও কাজ না করায় যা সমস্যা হয়েছে তা ভুক্তভোগীরায় জানেন। তিনি জানান, এক রাতে পর পর সাতটি শবদেহ এসেছিল সাদুল্লাপুরে। সকলেই একই সমস্যায় পড়েছিলেন। এই বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে বিজেপিও। দলের জেলা সভাপতি গোবিন্দ মন্ডল বলেন, সাদুল্লাপুরে শবদেহ করতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। আমাদের প্রতিনিধি দল জেলা পরিষদে গিয়েছিল বিষয়টি নিয়ে সভাধিপতির সঙ্গে কথা বলতে। কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে অন্যান্য কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ফিরে আসতে হয়েছে তাদের। জেলা পরিষদ চুল্লি সারানোর জন্য তিন দিন সময় চেয়ে ছিলেন। কিন্তু সাত দিন কাটতে চলল। সমস্যা মেটেনি। এই বিষয়ের সঙ্গে জেলার সাধারণ মানুষের ভাবাবেগ যুক্ত। আমরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দপ্তরেও চিঠি পাঠিয়েছি। সেখান থেকে উত্তর আসেনি। এবার ঠিক করেছি তিন দিনের মধ্যে চুল্লি ঠিক না হলে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে জেলা পরিষদের সামনে শবদেহ রেখে ধর্নায় বসবো। আমরাও দেখতে চাই চুল্লি সারানোর নামে সাধারণ মানুষকে আর কতদিন সমস্যার মধ্যে রেখে দেয় তৃণমূলের জেলা পরিষদ।
মালদা জেলা পরিষদের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মিরাজ হোসেন অবশ্য জানিয়েছেন, দ্রুত সারানোর চেষ্টা চলছে চুল্লিগুলিকে। পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করে সভাধিপতি গৌর চন্দ্র মন্ডল ইতিমধ্যেই ১৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছেন চুল্লি মেরামতের জন্য। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করা হচ্ছে। আগে ঠিক ছিল ৫ ই আগস্ট এর মধ্যে চুল্লি সারিয়ে ফেলা হবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথা ভেবেই সেই সময় কে ১ আগস্ট এর মধ্যে এগিয়ে আনা হয়েছে। সভাধিপতি গৌর মন্ডল বলেন, আমরা সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছি। সাদুল্লাপুর নিয়ে আমরা অত্যন্ত সচেতন। তাই দ্রুত টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে মৃত্যু নিয়ে আন্দোলন করতে চাইছে বিজেপি। তাদের সেই প্রয়াস সফল হবে না।