পাকিস্তানকে হারাতেই বিরাটকে কাঁধে তুলে নিলেন রোহিত
একাই পাকিস্তানের থেকে ম্যাচ কেড়ে নিলেন বিরাট কোহলি। রবিবার এমসিজিতে টি-২০ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে ৪ উইকেটে হারাল ভারত। আগের বিশ্বকাপের মধুর প্রতিশোধ। অবিশ্বাস্য ইনিংস কিং কোহলির। একার হাতেই খাদের কিনারে থেকে দলকে জয়ের সরণিতে নিয়ে এলেন প্রাক্তন নেতা। একমাত্র বিরাটের পক্ষেই এটা সম্ভব। স্বভাবতই জেতার পর আবেগের বিস্ফোরণ ঘটল এমসিজিতে। ম্যাচ শেষেই কোহলিকে কোলে তুলে নেন রোহিত শর্মা। মেলবোর্নে যেন আগাম দীপাবলি। হবে নাই বা কেন? ৬ ওভারের মাথায় মাত্র ৩১ রানে ৪ উইকেট হারায় টিম ইন্ডিয়া। ইতিহাস বলছে, এই জায়গা থেকে কখনও ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ জিততে পারেনি ভারত। কিন্তু রবিবাসরীয় বিকেলে সেই মিরাকেল করলেন বিরাট। ৫৩ বলে ৮২ রানে অপরাজিত। ইনিংস সাজান ৪টি ছয় এবং ৬টি চার দিয়ে। একেবারে নাটকীয় ম্যাচ। প্রতি মোড়ে চমক। শেষ মিনিট পর্যন্ত টানটান উত্তেজনা। অবিশ্বাস্য বিরাট কোহলি। একমাত্র তিনিই পারেন। আজ আবার প্রমাণ করলেন কেন তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথে টিম ইন্ডিয়ার সবচেয়ে সফল ক্রিকেটার বরাবরই বিরাট। এর আগে ৯ ম্যাচে চারটে অর্ধশতরান ছিল। মোট রান ছিল ৪০৬। কিন্তু এদিন যা কীর্তি স্থাপন করলেন বিরাট, সেটা বহু বছর ধরে মানুষের মনে থেকে যাবে। ৮ বলে ২৮ রান প্রয়োজন ছিল। হ্যারিস রউফের বিধ্বংসী বোলিংয়ে একটি চার এবং ব্যাক টু ব্যাক ছক্কা হাঁকিয়ে ১৯তম ওভারেই জয়ের বীজ বপন করেন বিরাট। শেষ ওভারে ১৬ রান দরকার ছিল। প্রথম বলেই আউট হয়ে যান হার্দিক। এক রান নেন কার্তিক। ৪ বলে প্রয়োজন ১৫ রান। নওয়াজের তৃতীয় বল দু’রান নিলেন কোহলি। চতুর্থ বলে ওভার বাউন্ডারি। পরের বলে তিন রান। শেষ বলে দলের বৈতরণী পার করেন অশ্বিন। তবে কৃতিত্ব দিতেই হবে হার্দিক পাণ্ডিয়াকেও। কোহলিকে যোগ্য সঙ্গত দিয়ে দলের বিপদের সময় গুরুত্বপূর্ণ ৪০ রান যোগ করেন। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচের সেরা বিরাট কোহলি। একেই বলে প্রত্যাবর্তনের বিশ্বকাপ। এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আসিফ আলির ক্যাচ ফস্কানোর জন্য সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল। জুটেছিল ‘খালিস্তানি’ তকমা। বিশ্বকাপে তার প্রায়শ্চিত্ত করলেন অর্শদীপ সিং। ওভারের প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন দলের সেরা ব্যাটার বাবর আজমকে। নিজের দ্বিতীয় ওভারে তুলে নেন পাকিস্তানের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটার রিজওয়ানকে। দুই ওভার বল করে ১০ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে নেন ভারতীয় পেসার। মরুশহরের শাহিনকে মনে করান অর্শদীপ। টসে জিতে ফিল্ডিং নেন রোহিত শর্মা। মাথার ওপরে মেঘে ঢাকা আকাশ এবং থমথমে আবহাওয়ায় উইকেট থেকে সাহায্য পায় পেসাররা। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রথম বল থেকেই সুইং করান ভুবনেশ্বর এবং অর্শদীপ। দুই প্রান্ত থেকে সুইং সামলাতে হিমসিম খায় পাকিস্তানের ব্যাটাররা। অর্শদীপের ওভারের প্রথম বলেই শূন্য রানে ফিরে যান বাবর আজম। মাত্র ১ রানে প্রথম উইকেট হারায় পাকিস্তান। বেশিক্ষণ উইকেটে টিকে থাকতে পারেনি রিজওয়ানও। ১২ বলে ৪ রানে আউট হন পাক ওপেনার। ১৫ রানে দলের সেরা দুই ব্যাটারকে হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় পাকিস্তান। এরপর দলের হাল ধরেন ইফতিখার আহমেদ এবং শান মাসুদ। পাওয়ার প্লের শেষে ২ উইকেটে ৩২ রান ছিল পাকিস্তানের। ৫০ রানে পৌঁছতে ৯ ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। তারপর খোলস ছেড়ে বেরোন ইফতিখার। শান মাসুদের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৭৬ রান যোগ করেন। ৩৪ বলে ৫১ রান করে আউট হন। পার্টনারশিপ ভাঙেন মহম্মদ শামি। এরপর অহেতুক বেহিসেবী শট খেলতে গিয়ে উইকেট ছুড়ে দেন শাদাব খান (৫) এবং হায়দার আলি (২)। জোড়া উইকেট নিয়ে আবার ভারতকে ম্যাচে ফেরান হার্দিক। কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে একপ্রান্ত আঁকড়ে রাখেন শান মাসুদ। মহম্মদ নওয়াজ (৯) এবং আসিফ আলি (২) ব্যর্থ হলেও শেষদিকে শাহিনকে নিয়ে দেড়শো রানের গণ্ডি পার করেন শান। ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান তোলে পাকিস্তান। ৫২ রানে অপরাজিত থাকেন শান মাসুদ। তিনটে করে উইকেট নেন অর্শদীপ সিং এবং হার্দিক পাণ্ডিয়া। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়ে ভারত। মাত্র ১০ রানে ২ উইকেট হারায় টিম ইন্ডিয়া। ফ্লপ দুই ওপেনার কেএল রাহুল (৪) এবং রোহিত শর্মা (৪)। তবে এবার শাহিন জুজুতে ভরাডুবি নয়, ভারতের টপ অর্ডারের ব্যর্থতার পেছনে দায়ী নাসিম শাহ এবং হ্যারিস রউফ। চোট সারিয়ে দীর্ঘদিন পরে মাঠে ফিরে বিষাক্ত বোলিং পাওয়া যায়নি শাহিনের থেকে। শুরুতেই দুই উইকেট হারানোর পর মনে হয়েছিল ভারতকে ম্যাচে ফেরাবে বিরাট কোহলি-সূর্যকুমার যাদব জুটি। প্রথম বলে সুদর্শন স্ট্রেট ড্রাইভে বাউন্ডারি মেরে তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রি। কিন্তু ১৫ রানে হ্যারিস রউফের বলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন। পাওয়ার প্লের শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ভারতের রান ছিল ৩১। ম্যাচটা ধরতে হার্দিকের পরিবর্তে অক্ষরকে পাঠান রোহিত। কিন্তু লাভ হয়নি। ব্যক্তিগত ২ রানে রানআউট হন অক্ষর। ৩১ রানে ৪ উইকেট হারায় ভারত। এই জায়গা থেকে প্রত্যাবর্তন সহজ নয়। এককথায় অসম্ভব। অবিশ্বাস্যকে একমাত্র সম্ভব করতে পারতেন বিরাট কোহলি। করলেনও। মিরাকেল করে দেখালেন প্রাক্তন অধিনায়ক। ঠাণ্ডা মাথায় হার্দিককে নিয়ে লক্ষ্যে অবিচল থাকলেন কোহলি। ৪৩ বলে ৫০ রান সম্পূর্ণ করেন বিরাট।