জেলা

অপহৃত যুবক, সিনেমার কায়দায় দুষ্কৃতীদের পাকড়াও করল পুলিশ

মাঝরাতে রাস্তা ধরে রুদ্ধশ্বাস দৌড়। একেবারে ফিল্মি কায়দায় শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার করল শিলিগুড়ি পুলিশ। সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে শিলিগুড়ির ভবেশ মোড় এবং কানকাটা মোড়ের মাঝে। অভিযোগ, ভবেশ মোড়ে একটি পানের দোকান থেকে স্কুটারে করে অপহরণ করা হয় এক যুবককে। এরপর চাওয়া হয় এক লক্ষ টাকা মুক্তিপণ। সেই টাকা নিতে গিয়েই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় ৫ দুষ্কৃতী। উদ্ধার করা হয় অপহৃত যুবককে। ঘটনায় যুক্ত আরও ৮ জন পলাতক বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। গোটা ঘটনায় দুটি বিলাসবহুল গাড়ি, দুটি স্কুটার বাজেয়াপ্ত করেছে নিউ জলপাইগুড়ি থানার পুলিশ।মঙ্গলবার দুপুরে অপহৃত যুবকের বাবা এনজেপি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। শিলিগুড়ি পুলিশের ডিসিপি রাকেশ সিংয়ের বক্তব্য, ‘৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে, কেন অপহরণ করা হলো তাও দেখা হচ্ছে।’ এনজেপি থানার ইস্টার্ন বাইপাসের ভবেশ মোড় এলাকায় পানের দোকান রয়েছে বাচ্চু পণ্ডিতের। সোমবার রাত আটটা নাগাদ ছেলে অভিনন্দন পণ্ডিতকে দোকানে বসিয়ে বাজারে যান তিনি। সেই সময়ে ফোনে খবর পান, দু’জন যুবক স্কুটার নিয়ে এসে জোর করে ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়েছে। অভিনন্দনের মোবাইলে কল করলে ফোন বন্ধ থাকায় সঙ্গে সঙ্গে পুরো বিষয়টি আশিঘর ফাঁড়ি এবং পরিবারের সদস্যদের জানান বাচ্চু। এসবের মধ্যেই অভিনন্দনের ফোন থেকে তাঁর মামার মোবাইলে কল আসে। অভিনন্দন জানায়, এক লক্ষ টাকা না দিলে অভিযুক্তরা তাঁকে ছাড়বে না। এক ঘণ্টার মধ্যে সেই টাকা নিয়ে আশিঘর ফাঁড়ির কানকাটা মোড় এলাকায় আসতেও বলা হয়। ঘটনাটি এনজেপি থানা এলাকার হলেও আশিঘর ফাঁড়ির ওসি পাপ্পু সিং কয়েকজন পুলিশ কর্মীকে নিয়ে অপহৃতের বাবার সঙ্গে কানকাটা মোড়ে যান। পুলিশ সাদা পোশাকে দূরে দাঁড়িয়ে থেকে যুবকের বাবাকে টাকা দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। অপহরণকারীদের কথামতো একটি সাদা রঙের গাড়ি তাঁর সামনে এসে দাঁড়ায়। সে সময়ে পুলিশ এবং যুবকের আত্মীয়রা ওই গাড়িটি আটকে দিলে দু’জনকে আটক করে আশিঘর ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে, নিজেদের অপারেশন সফল হয়েছে ভেবে গাড়ি নিয়ে আরও তিনজন যুবক চলে আসে সেখানে। কিন্তু ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযুক্তরা বুঝতে পারে অন্য রকম কিছু একটা ঘটেছে। তাই টাকা না নিয়ে সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করে তাঁরা। এ বার অপহৃত যুবকের জামাইবাবু এবং শ্যালক অপহরণকারীদের পিছু নেন। কিছুটা দূরে গিয়ে গাড়িতে থাকা অভিযুক্তরা বুঝতে পারে পিছনে দু’জন তাঁদের ফলো করছে। আচমকা গাড়ি থামিয়ে দু’জনকে বেধড়ক মারধর করতে শুরু করে তাঁরা। এরপর অপহৃতের জামাইবাবুকে গাড়িতে তুলে নিয়ে এলাকা থেকে চম্পট দেয়। ততক্ষণে আশিঘর ফাঁড়ির পুলিশ এনজেপি থানাকেও পুরো বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে। ফলে শহর জুড়ে নাকা তল্লাশি শুরু করে দেয় পুলিশ। পালানোর সময়ে সেই চেকিং–এ গিয়ে আটকে যায় অপহরণকারীদের গাড়ি। দুষ্কৃতীরা পালানোর চেষ্টা করলে রাত আড়াইটে নাগাদ এনজেপি এলাকায় দৌড়ে গিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অপহৃত যুবক এবং তাঁর জামাইবাবুকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।