আজ অক্ষয় তৃতীয়া। অক্ষয় তৃতীয়া হল চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয় তিথি। বৈদিক বিশ্বাস হল এই বিশেষ তিথিতে যে শুভকাজ করবেন, তার ফল পাবেন অনন্তকাল। পঞ্জিকা অনুযায়ী, ২৬ এপ্রিল সকাল ৬ টা ৩৬ মিনিট থেকে ১০টা ৪২ মিনিট পর্যন্ত বিষ্ণুর পুজো করার জন্য উপযুক্ত সময়। তবে এবার লকডাউনের জেরে হয়তো গঙ্গায় স্নান করতে যাওয়া সম্ভব হবে না। মন্দিরও বন্ধ থাকছে। ফলে বাড়িতেই পুজো করতে হবে। অক্ষয় তৃতীয়ায় রোহিনী নক্ষত্র ও শোভন যোগ সবচেয়ে শুভ বলে মনে করা হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, অক্ষয় তৃতীয়ায় বিষ্ণুর পুজো করলে সম্পদ বৃদ্ধি হয়। একইসঙ্গে বিষ্ণু ও শিবের পুজো করলেও ফল পাওয়া যায়। আজ গঙ্গায় স্নান করতে যাওয়া সম্ভব না হলে বাড়িতেই গঙ্গাজলে স্নান করার পর বিষ্ণুমূর্তিতে চন্দন মাখাতে হবে। এর সঙ্গে দিতে হবে তুলসিপাতা। সম্ভব হলে বেলপাতাও দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া দুধ, দই, ঘি, মধু ও চিনি দিয়ে পঞ্চমৃত তৈরি করা যেতে পারে। পুরাণ অনুযায়ী, মহাভারতে পাণ্ডবরা যখন নির্বাসনে ১৩ বছর কাটিয়ে ফেলেন, তারপর একদিন ঋষি দুর্বাসা তাঁদের আস্তানায় প্রবেশ করেন। দ্রৌপদী তাঁকে অক্ষয় পাত্রে খেতে দেন। এই আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে দুর্বাসা বলেন, ‘আজ অক্ষয় তৃতীয়া। আজ যে ছোলার ছাতু, গুড়, ফল, বস্ত্র, জল ও দক্ষিণা দিয়ে বিষ্ণুর পুজো করবে, সে সম্পদশালী হয়ে উঠবে।’ আবার এও কথিত আছে কুবেরের লক্ষ্মীলাভের ঘটনা থেকেই আজকের অক্ষয় তৃতীয়ায় লক্ষ্মীলাভের ধারণা। তাই এই দিনটিতে অনেকে লক্ষ্মীপুজো করেন। এদিন দান ধ্যানও করেন অনেকে পুণ্যের ঝুলি ভরে নেওয়ার আশায়। বর্তমান কালে এই দিনেই হালখাতা করেন বাঙালি ব্যবসায়ীরা। বিনায়ক হল গনেশের আরেক নাম আর সেই কারণে অনেকেই তাই এই উপবাস থেকে ব্রত পালন করেন। এই তিথিতে, সিদ্ধিদাতা গণেশকে দিনে দুবার, একবার বিকেলে এবং একবার বিকেলে আরাধনা করা হয়। শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতে ব্যবসার জন্য শুভ দিন হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনে তাই পয়লা বৈশাখের মত হালখাতার পুজো করা হয়।
এই দিনে যে সকল তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল সে ঘটনাসমূহ থেকে কিছু উল্লেখ করা হল –
১) এদিনই বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম জন্ম নেন পৃথিবীতে।
২) এদিনই রাজা ভগীরথ গঙ্গা দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন।
৩) এদিনই গণপতি গণেশ বেদব্যাসের মুখনিঃসৃত বাণী শুনে মহাভারত রচনা শুরু করেছিলেন।
৪) এদিনই দেবী অন্নপূর্ণার আবির্ভাব ঘটে।
৫) এদিনই সত্যযুগ শেষ হয়ে ত্রেতাযুগের সূচনা হয়।
৬) এদিনই কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেন। এদিনই কুবেরের লক্ষ্মী লাভ হয়েছিল বলে এদিন বৈভব-লক্ষ্মীর পুজো করা হয়।
৭) এদিনই সুধামা দ্বারকায় গিয়ে শ্রীকৃষ্ণের সাথে দেখা করেন এবং তাঁর থেকে সামান্য চালভাজা নিয়ে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর সকল দুঃখ দূর করে দেন।
৮) এদিনই দুঃশাসন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করতে যান এবং দ্রৌপদীকে রক্ষা করেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।
৯) এদিন থেকেই পুরীধামে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উপলক্ষ্যে রথ নির্মাণ শুরু হয়।
১০) কেদার বদরী গঙ্গোত্রী যমুনত্রীর যে মন্দির ছয়মাস বন্ধ থাকে এইদিনেই তার দ্বার উদঘাটন হয়। দ্বার খুললেই দেখা যায় সেই অক্ষয়দ্বীপ যা ছয়মাস আগে জ্বালিয়ে আসা হয়েছিল।