কলকাতা

মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা সঙ্গে বৈঠক এডিজি জ্ঞানবন্ত সিংয়ের, ছিলেন সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও

আজ, বৃহস্পতিবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরার সঙ্গে দেখা করতে এলেন রাজ্যের এডিজি আইন-শৃঙ্খলা জ্ঞানবন্ত সিং। আসন্ন নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গের আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখতেই এই বৈঠক বলে জানা গিয়েছে। প্রায় ঘন্টা দুয়েক ধরে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। এর আগে বিরোধী দলগুলির পক্ষ থেকে রাজ্যে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের দাবি জনিয়ে কমিশনে একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। দু’দফায় উপ-নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈনও রাজ্য সফরে এসেছিলেন। পুরো বিষয়ের সমস্ত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল দিল্লিতে। এরপর গত বুধবার শহরে তিন দিনের সফরে আসে কমিশনের ফুল বেঞ্চ। নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ হয়। ভোটের সময় কোনও ধরণের গোলমাল না হয় সেই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখার জন্য। পাশাপাশি কোনগুলি স্পর্শকাতর বুথ, হানাহানি রুখতে ঠিক কোন ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে সেই বিষয়গুলিও এদিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। পাশাপাশি বুথ বাড়ানো নিয়েও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে পারে কমিশন। শোনা যাচ্ছিল, এপ্রিলের দিকে রাজ্যে বিধানসভা ভোট হতে পারে। তারপরই দু’দফায় বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। জানানো হয়, প্রথম দফায় রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বৈঠক হবে। পরে জেলাশাসক, পুলিস সুপার এবং পুলিস কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করবে নির্বাচন কমিশন। এদিনের বৈঠকে এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। তৃণমূলের পক্ষ থেকে দেখা করতে এসেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়। অন্যদিকে সিপিএমের তরফে ছিলেন রবীন দেব, শমীক লাহিড়ী, প্রবীর দেব, অশোক রায়, তপন গঙ্গোপাধ্যায় এবং গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়। কংগ্রেসের তরফে ছিলেন সৌম্য আইচ। বিজেপি পক্ষ থেকে এসেছিলেন দিলীপ ঘোষ, সব্যসাচী দত্ত, শিশির বাজারিয়া এবং স্বপন দাশগুপ্তরা। এদিন বৈঠকের পর তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘ রাজ্যে শব্দ সন্ত্রাস চলছে। গ্রামে গ্রামে গিয়ে ভয় দেখাচ্ছে বিএসএফ। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতেও বিএসএফ ভয় দেখাচ্ছে। ইভিএম, ভিভিপ্যাড নিয়ে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি যতক্ষণ না পর্যন্ত সন্তুষ্ট হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত মকপোল করে যেতে হবে। ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশের লোকও রয়েছে। ফলে অবিলম্বে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ চাইছি।’ অন্যদিকে সিপিএম নেতা রবীন দেব বলেন, ‘ভোটার তালিকায় বহু ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। অথচ মৃত ভোটারের নাম বাদ যায়নি। ফের স্ক্রুটিনি করা হোক। পর্যবেক্ষক যারা থাকে তারা পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে। পারস্পরিক প্রতিযোগিতা করে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছে তৃণমূল-বিজেপি। ধর্মের ভিত্তিতে ভোট চাইছে। সেটা বন্ধ করতে হবে।’ বৈঠকের পর বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে আবেদন করেছি। যাঁরা ভয়ের মধ্যে রয়েছেন তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়া হোক। যাতে মানুষ নির্বাচন কমিশনের উপর ভরসা রাখতে পারে। সারা ভারতে ভোট নিয়ে কোনও অশান্তি হয়নি। অথচ পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনে অশান্তি হয়েছে। গুলি চলেছে। মারা গিয়েছে মানুষ। ভোটাররা ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় তাঁদেরকে সুরক্ষা দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের যারা দিল্লি অথবা অন্য রাজ্য থেকে আসবে তাঁদেরকেও সুরক্ষা দিতে হবে। বুথের মধ্যে সেন্ট্রাল ফোর্স রাখা উচিত। বুথের বাইরে থাকুক রাজ্য পুলিস। নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হোক। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন তা এখন থেকেই নিশ্চিত করা হোক।’