করে লুট, বলে ঝুট – এই স্লোগান তুলেই মঙ্গলবার এসআইআরের প্রতিবাদে কলকাতার জোড়াসাঁকোর জনসভায় গর্জে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ড. বিআর আম্বেদকরের মূর্তি থেকে ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত মিছিল শেষে জনতার সমাবেশে তিনি কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন । মমতা বলেন, “যদি ভোটার তালিকা থেকে একটিও নাম বাদ যায়, আমি বিজেপির সরকার ভেঙে দেব ।” তাঁর দাবি, এসআইআর (SIR) শুধু একটি আইন নয়, এটি মানুষের অস্তিত্ব এবং নাগরিক অধিকারের উপর সরাসরি আঘাত । “আগে হয়েছিল নোটবন্দি, আর এখন হচ্ছে জনবন্দি” – এমনই মন্তব্য করে তিনি অভিযোগ তোলেন, এই আইন মানুষের মধ্যে ভয় ছড়ানো এবং বিভেদ তৈরির নতুন কৌশল । তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যখন তিন মাস পরই ভোট, তখন এই সময় এই আইন জারি করার প্রয়োজন কী ? নির্বাচন শেষে এই প্রক্রিয়া শুরু হলে মানুষ মেনে নিত, কিন্তু এখন এটা নিছক ভোট লুটের রাজনীতি ।” মমতার কথায়, ভাষার ভিত্তিতে নাগরিকত্ব নির্ধারণ অত্যন্ত লজ্জাজনক । তিনি বলেন, “শুধু বাংলা বললেই কেউ বাংলাদেশি হয় না, যেমন হিন্দি বা উর্দু বললেই কেউ পাকিস্তানি হয়ে যায় না । এই দেশ সবার – বাঙালি, বিহারি, মারাঠি, পাঞ্জাবি – সবার ।” তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, “1947-এর আগে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এক দেশ ছিল । এখন কাউকে বাইরের বলে নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়া সংবিধানের অপমান ।” মমতা প্রশ্ন তোলেন, “আবার কি আমাদের নিজের দেশেই নিজেদের পরিচয় প্রমাণ করতে হবে ?” তাঁর বক্তব্য, এই আইনের ফলে প্রত্যেককেই আবার নথি দেখাতে হবে । ক্ষোভের সুরে তাঁর প্রশ্ন, “2002 সালে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও ভোটার তালিকায় ছিল না, পরে যুক্ত করা হয়েছিল । এই আইনে আমাদেরও আবার প্রমাণ দিতে হবে যে আমরা ভারতীয় ?” বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে মমতা কটাক্ষ করে বলেন, “ওরা শত শত গাড়ির কনভয়ে ঘোরে, আর সাধারণ মানুষ খেতে পায় না । কৃষকরা বিপদে, অথচ ওরা টাকার রাজনীতি আর প্রচারের খেলায় ব্যস্ত । বিজেপি ভোটে নয়, নোটে জেতে । বিজেপি নোটবন্দি করেছে, এখন জনবন্দি করছে । পরের ধাপ হবে গণতন্ত্রবন্দি !” মমতার কথায়, “যারা আমাদের কাছ থেকে কাগজ চাইছে, আগে নিজেদের বাপ-দাদার কাগজ দেখাক ।” তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্র সরকার এসআইআরের নাম করে সাধারণ নাগরিকদের ভয় দেখাচ্ছে । তিনি বলেছেন, “আমাদের প্রমাণ দিতে হবে না যে আমরা এই মাটির সন্তান । দেশ চলে সংবিধান দিয়ে, কোনও দলের আদেশে নয় ।” তিনি অভিযোগ করেন, “বিজেপি সোশাল মিডিয়া ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে আমার বক্তব্য বিকৃত করছে । আমি যা বলি, তা কেটে নকল ভিডিয়ো তৈরি করে ছড়ায় । আমায় বদনাম করতে ফেক কনটেন্ট ছড়ানো হচ্ছে । বিজেপির সরকার করে লুট, বলে মিথ্যে – এটাই ওদের আসল নারা ।” তিনি জানান, আলিপুরদুয়ারের এক গ্রামে 2002 সালের ভোটার তালিকায় 700টি নাম ছিল, এখন তার মধ্যে 526টি কেটে দেওয়া হয়েছে । মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ভোটার তালিকার নামে ব্যাপক দুর্নীতি চলছে – অনেক জায়গায় আধার কার্ড করতে হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে । তাঁর কথায়, “যদি ভোটার লিস্ট মিথ্যা হয়, তবে কেন্দ্র সরকারও মিথ্যা ৷” তাঁর মতে, বিজেপির লক্ষ্য প্রায় দুই কোটি মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে মুছে দেওয়া, যাতে নির্বাচনী সুবিধা নেওয়া যায় । বলেন, “ওরা বিরোধীদের মুছে ফেলতে চায়, গরিব ও সংখ্যালঘুদের বাদ দিতে চায় । কিন্তু আমরা তা হতে দেব না ।” মমতা আরও জানান, তৃণমূলের তিন বিধায়ক অভিযোগ করেছেন যে ইডি-র কিছু আধিকারিক তাঁদের ফোন করে টাকা চেয়েছে মামলার বিনিময়ে । তিনি বলেন, “এ দেশে এখন গণতন্ত্র নয়, ভয় ও দুর্নীতির রাজ চলছে । কিন্তু আমরা ভাঙব না, লড়াই চালিয়ে যাব ।” বিজেপির ধর্মাচার নিয়ে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, “ওরা রামদেববাবুর দুধ খেয়ে ধর্মের কথা বলে ।” সবশেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি পদ ও চেয়ারের মর্যাদা দিই, কিন্তু তারও সীমা আছে । এখন সময় এসেছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্য বলার ।”


