জেলা

ডাম্পারের নম্বর প্লেট নকল করে কয়লা পাচার, গ্রেফতার বিজেপি নেতা

কয়লাপাচার-কাণ্ডে এবার এক বিজেপিকে নেতাকে ধরল পুলিস। যোগেন্দ্রকুমার সাহা ওরফে মনু নামে ওই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ইসিএলে কয়লা পরিবহণে যুক্ত ডাম্পারের নম্বর জালিয়াতি করতেন। সেই নম্বরের উপর ভর করে কয়লা পাচার হতো দেদার। এই গোটা প্রক্রিয়াটি ঠিকঠাকভাবে চালাতে ডাম্পার মালিক, চালক ও ট্রান্সপোর্টারদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল একটি সিন্ডিকেট। যার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন পেশায় পরিবহণ ব্যবসায়ী এই বিজেপি নেতা। শুক্রবার রাতে দুর্গাপুরে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিস কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ। শনিবার মনু আসানসোল আদালতে তোলা হয়। বিচারক অভিযুক্তের জামিনের আবেদন খারিজ করে চারদিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। শিল্পাঞ্চলে কয়লাপাচার কাণ্ডে এই প্রথম কোনও বিজেপি নেতা ধরা পড়ল। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তুমুল শোরগোল। অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির। 
তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন দাসু বলেছেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি ইসিএলের একাংশের যোগসাজশ ছাড়া কয়লা পাচার অসম্ভব। এখন দেখছি কেন্দ্রের শাসক দলের নেতাদের হাত ধরেই ইসিএলের কয়লা লুটের ছক কষা হয়েছে।’ শিল্পাঞ্চলে বেশ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী যোগেন্দ্রকুমার। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, তাঁরই নেতৃত্বে চলত সিন্ডিকেট। কিন্তু কীভাবে? কমিশনারেট সূত্রে খবর, বিভিন্ন খাদান থেকে সাইডিংয়ে কয়লা যায় ডাম্পারে করে। কয়লা তোলার আগে ওইসব ডাম্পারের নম্বর ইসিএলের কাছে নথিভুক্ত করাতে হয় মালিকদের। এবার একই নম্বরের নকল নম্বর প্লেট লাগানো একটি ডাম্পারে ব্ল্যাক স্টোন মজুত করে প্রস্তুত থাকতেন চালক। খাদান থেকে কয়লা বোঝাই ডাম্পার বের হলেই কালো পাথর বোঝাই ওই ডাম্পার সময় মতো সাইডিং পৌঁছে যেত। মাঝ পথে কয়লা বোঝাই লরি পাচারকারীরা ইচ্ছে মতো গন্তব্যে পাঠিয়ে দিত। বীরভূম, বাঁকুড়ার বিভিন্ন কারখানাতেও এই অবৈধ কয়লা পাঠিয়েছে সিন্ডিকেটের মাথারা। গত ২৬ জুন সিআইএসএফ ও পুলিসের যৌথ অভিযানে রানিগঞ্জ থানার পাঞ্জাবিমোড় এলাকায় তিনটি ডাম্পার আটক হয়।  দুটি ডাম্পারের নম্বর একই ছিল (WB 37C 3592)। একটি লরিতে ১৮ মেট্রিক টন কয়লা মজুত ছিল। অন্যটি খালি। পিছনে ব্ল্যাক স্টোন বোঝাই অন্য একটি লরি। যৌথ অভিযান দেখেই দুই ডাম্পার চালক গা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। একজন ধরা পড়ে যান। তিনিই পুলিসকে জানান, কালিপাহাড়ি ও সিপি থেকে কয়লা বোঝাই লরি সাতগ্রাম সাইডিংয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই কয়লার বদলে একই নম্বরের থাকা খালি লরিটি সেখানে ব্ল্যাক স্টোন আনলোড করে এসেছে। পরের দিন রানিগঞ্জ থানার পুলিস মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ মামলার তদন্তভার  নিজেদের হাতে নেয়। তাতেই উঠে আসে অন্যতম চক্রী মনু সাহার নাম। এক সময়ে বিজেপির এসসি মোর্চার জেলা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মনু। পরিবহণ ব্যবসা ছাড়াও বর্তমানে তাঁর নামে একটি বেসরকারি কলেজ রয়েছে। দিল্লি সহ বিভিন্ন জায়গায় হোটেল রয়েছে বলেও পুলিস জানতে পেরেছে। সম্প্রতি চাকরি প্রতারণার মামলাতেও নাম ছড়িয়েছিল তাঁর।