জেলা দেশ

এবার নদিয়ার মহিলা পরিযায়ী শ্রমিককে হেনস্তা দিল্লি পুলিশের ! তারপর থেকেই নিখোঁজ স্বামী

চাঁচলের মুক্তার খানের ঘটনার পর, এবার নদিয়ার শান্তিপুরের বাসিন্দা পরিযায়ী শ্রমিক সাইদুল শেখ (৪৯) এবং তাঁর স্ত্রী শাকিলা বিবিকে হেনস্তার অভিযোগ দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে ৷ বাংলাদেশি সন্দেহে শাকিলা বিবিকে আটক করার অভিযোগ ৷ আর স্ত্রী আটক হতেই পুলিশের ভয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন সাইদুল শেখ ৷ গত বুধবারের ঘটনায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সাইদুল শেখের মা লালবানু বেউ (৭৫) ৷ পরিবারের দাবি, গত ১৬ বছর ধরে দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন সাইদুল এবং তাঁর স্ত্রী শাকিলা বিবি ৷ তাঁদের বাড়ি নদিয়ার শান্তিপুর পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৷ অভিযোগ, গত সপ্তাহের বুধবার দিল্লিতে শাকিলা বিবিকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায় ৷ সেই খবর পেতেই সাইদুল ভয়ে গা-ঢাকা দেন ৷ পরে দিল্লি পুলিশ শাকিলা বিবির পরিচয়পত্র দেখতে চায় ৷ কিন্তু, সঙ্গে কোনও পরিচয়পত্র না-থাকায় তাঁকে আটক করে পুলিশ ৷ শাকিলার পরিবারের অভিযোগ, দিল্লি থেকে শাকিলা ফোন করে তাঁদের জানিয়েছেন, বাংলায় কথা বলায় বাংলাদেশি সন্দেহে তাঁকে আটক করা হয়েছে ৷ আর তাঁর স্বামী সাইদুল সেই ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন ৷ এই পরিস্থিতিতে দিল্লি পুলিশ সাকিলার কাছে তাঁর ভারতীয় হওয়ার প্রমাণ দেখাতে বলে ৷ তবে, তাঁদের সব পরিচয়পত্র-সহ নথি শান্তিপুরের বাড়িতে রয়েছে বলে পুলিশকে জানান তিনি ৷ শান্তিপুরের বাড়িতে এই খবর পৌঁছতেই পরিবারের সদস্যরা থানায় যোগাযোগ করেন ৷ শান্তিপুর থানার তরফে তাঁদের আশ্বস্ত করা হয়েছে ৷ শাকিলা এবং সাইদুলের পরিচয়পত্র-সহ সব নথি পুলিশ জমা নিয়েছে ৷ শান্তিপুর থানার তরফে সেগুলি দিল্লি পুলিশের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে ৷ কিন্তু, ছেলে সাইদুলের কোনও খোঁজ না-পাওয়ায় দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন লালবানু বেউ ৷ তিনি বলেন, “ছেলে ও বউমা দিল্লিতে কাজ করে ৷ ওখানে পুলিশ ওদের ধরেছে ৷ আমার ছেলেটার কোনও খোঁজ নেই ৷ একসপ্তাহ হয়ে গেল, কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না ৷ আমার ক্ষমতা নেই, ওদের ছাড়িয়ে আনার ৷ এখন সরকারই ভরসা ৷ আমি শুধু আমার ছেলে-বউমাকে ফেরত চাই ৷” এ নিয়ে সাইদুলের প্রতিবেশী আমির মণ্ডল বলেন, “গত বুধবার ফোন আসে শাকিলাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে ৷ আর সাইদুল তারপর থেকেই ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ৷ বাংলায় কথা বলায় বাংলাদেশি সন্দেহে তুলে নিয়ে গেছে শাকিলাকে ৷ আমরা পুলিশকে জানিয়েছি ৷ ওদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হোক ৷ ওখানে আরও অনেককে ধরেছে দিল্লি পুলিশ ৷” এ বিষয়ে রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার আশিস মৈজ্য বলেন, “প্রশাসনের তরফে ওই দুই পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে ৷ তাঁদের পরিচয় পত্র-সহ বিভিন্ন নথি সংগ্রহ করা হচ্ছে ৷ দিল্লি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে, তাঁদের যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি ফেরানো যায়, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে ৷” উল্লেখ্য, গত রবিবার দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে মালদার চাঁচলের মুক্তার খান এবং তাঁর পরিবারকে হেনস্তার অভিযোগ ওঠে ৷ অভিযোগ করা হয়, মুক্তারের স্ত্রীর কোল থেকে দেড় বছরের কন্যাসন্তানকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে পুলিশ ৷ যা নিয়ে তোলপাড় পড়ে যায়, রাজ্য রাজনীতিতে ৷ এমনকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে সেই নিয়ে পোস্ট করে দিল্লি পুলিশের সমালোচনায় সরব হন ৷