মালদা

প্রশাসনের চাপে স্কুলে পুনরায় পঠন পাঠন শুরু করতে বাধ্য হল বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ

হক জাফর ইমাম, মালদাঃ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে চিন্তামণি চমৎকার বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সন্দীপন দেবনাথের শিক্ষাবিরোধী এবং অনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা খবরের জের, অবশেষে প্রশাসনের চাপে স্কুলে পুনরায় পঠন পাঠন শুরু করতে বাধ্য হলেন চিন্তামণি চমৎকার বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষককের সরকারি নির্দেশ বিরোধী, আগামী ১৩ ই মার্চ পর্যন্ত সমস্ত শ্রেণীর ক্লাস বন্ধের নির্দেশ,যা ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তার বিরোধিতা করে শিক্ষাদপ্তর জানিয়েছেন, কোন অবস্থাতেই ক্লাস বন্ধ রাখা যাবে না। এহেন চাপের মুখে প্রধান শিক্ষক তড়িঘড়ি বিদ্যালয়ে পুনরায় চালু করলেন ক্লাস। প্রতিদিন নিয়ম করেই সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত চলছে প্রতিটি বিভাগের পঠন-পাঠন। সাথে স্কুলের অন্যান্য কাজকর্ম। নির্বিঘ্নে চলছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কর্মসূচি ও।স্কুল খোলায় খুশি অভিভাবক এবং ছাত্রীরা ও। তবে অভিভাবক মহলের একটা অংশের বক্তব্য, যে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার দোহাই দিয়ে কোন সরকারি নির্দেশ না থাকা সত্ত্বেও যেভাবে প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে সমস্ত শ্রেনীর ক্লাস আগামী ১৩ ই মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকার তুঘলুকি নির্দেশ জারি করেছিলেন, এটা কতটা নৈতিক? এখনতো বিদ্যালয় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হচ্ছে, পাশাপাশি সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত প্রাথমিক বিভাগের সমস্ত শ্রেণীর পঠন পাঠন এর কাজ ও চলছে নির্বিঘ্নে। তাহলে, কি কারণে, প্রধান শিক্ষক, অসুবিধার কথা বলে বিদ্যালয় এর সমস্ত শ্রেণীর পঠন-পাঠন বন্ধের নির্দেশ জারি করেছিলেন ? এক্ষেত্রে, ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত এবং দোষী প্রমাণ হলে অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবিও তুলেছেন অভিভাকদের একটা অংশ। সূত্রের খবর, ২৬ শে ফেব্রুয়ারি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর দিন চিন্তামণি চমৎকার বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিটি শ্রেণীর দুটি করে ক্লাস হলেও,পরের দিনই অর্থাৎ ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রধান শিক্ষক কোন সরকারি নির্দেশ ছাড়াই ঘোষণা করে দেন যে, আগামী ১৩ ই মার্চ পর্যন্ত বিদ্যালয়ের সমস্ত শ্রেণির পঠন-পাঠন বন্ধ থাকবে। শিশুরা বিদ্যালয় আসবে না। পরে, অভিভাবকদের একটা অংশ প্রধান শিক্ষককে এর কারণ জানতে চাইলে, তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা সংক্রান্ত কারণে হাই স্কুলের আপত্তির কথা জানান। যদিও পরে এ ব্যাপারে পরে হাই স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাই স্কুলের আপত্তির কথা ঠিক নয়, তারা প্রাথমিক বিভাগে ৮ টা ৩০ পর্যন্ত ক্লাস চালাতে কোন আপত্তি করেননি। আর বিদ্যালয় ভবনের নিচতলার প্রতিটি ঘরে ফাঁকা থাকায় এই সমস্ত ঘরে প্রাথমিক বিভাগের ক্লাস হলে তাদের কোন আপত্তিও নেই বলে তারা জানিয়ে দেন। এর পরই চিন্তামণি চমৎকার বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের এই বেআইনি, শিশু স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ এবং অভিযোগ জানান অভিবাবক দের একটা অংশ। অভিযোগ জানানো হয়, এই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের তরফেও। এরপরই পুরো ঘটনার তদন্তে নামে প্রশাসন। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে ডেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, তার এই সিদ্ধান্ত কোন অবস্থাতেই সরকারি আইন মোতাবেক নয়। বিদ্যালয়ে দ্রুত ক্লাস চালু করতে হবে। না হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সূত্রের খবর, এরপরই এই অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক তার এই বেআইনী কাজ কে আইনি চাদরে মুড়তে হাই স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি লিখিত বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেন, যাতে এটা বোঝা যায় যে হাই স্কুলের আপত্তিতেই তিনি পঠন-পাঠন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। হাই স্কুল এ ধরনের কোন কাগজ দিতে অস্বীকার করায়, রণে ভঙ্গ দেন প্রধান শিক্ষক।
শেষে, শাস্তির আশঙ্কায় এই বেআইনি নির্দেশ ফিরিয়ে নিয়ে প্রধান শিক্ষক পুনরায় প্রত্যেক শ্রেণীর ক্লাস পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেই মোতাবেকই বিদ্যালয় চালু হয়েছে সমস্ত শ্রেণীর পঠন পাঠন। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা থাকায় সকাল ৮ টা ৩০ পর্যন্ত সমস্ত শ্রেণীর ক্লাস চলছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া নেয়ার চেষ্টা করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কিছু বলতে রাজি হননি। অন্যদিকে, প্রধান শিক্ষকের শিক্ষা বিরোধী এবং বেআইনি ভাবে ক্লাস বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে, প্রশাসন এবং শিক্ষা দপ্তরের কর্তারা তাকে আবার বিদ্যালয়ে পুনরায় ক্লাস চালু করতে বাধ্য করায়, খুশি অভিভাবকরা।