আরও তীব্র হল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নবান্নের সংঘাত। সম্প্রতি রাজ্যের ৪জন নির্বাচনি অফিসারকে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন (ECI)। সেই সঙ্গে তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ মানেনি রাজ্য সরকার। এবার এনিয়েই রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে তলব করল নির্বাচন কমিশন। আগামীকাল অর্থাৎ বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে দিল্লিতে কমিশনের দপ্তরে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন চারজন WBCS আধিকারিককে সাসপেন্ড করতে বলেছিল। সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছিল ৷ প্রকাশ্যেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ নির্বাচন কমিশনকে যে চিঠি দিলেন তাতে দু’জনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে চারজনকে সাসপেন্ড বা পদক্ষেপ নেওয়া হল না। এই দু’জনকেও সাসপেন্ড করা হয়নি ৷ ভোটের কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে মাত্র ৷ সরকার বিষয়টি নিয়ে এখনও তদন্ত করছে বলে কমিশনকে জানিয়েছেন মুখ্যসচিব ৷ কমিশনকে দেওয়া মুখ্যসচিবের চিঠি থেকে জানা গিয়েছে, বারুইপুর পূর্ব (১৩৭) ও ময়না (২০৬) বিধানসভা কেন্দ্রের ফর্ম-৬ আবেদনপত্র নিষ্পত্তি সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগে এক নির্বাচনী আধিকারিক ও এক ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে ভোটার তালিকা সংশোধন ও নির্বাচন-সম্পর্কিত সমস্ত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে বলেও কমিশনকে জানিয়েছেন রাজ্য প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্তা ৷ মুখ্যসচিবের পাঠানো চিঠিটি পেয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সচিব সুজিত কুমার মিশ্র। এদিন বিকেল তিনটের মধ্যে চিঠিটি পাঠানোর কথা ছিল। সেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই মুখ্যসচিবের তরফে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর। মুখ্যসচিবের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কমিশনের ৫ অগস্ট ও ৮ অগস্ট পাঠানো চিঠির প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে। একই সঙ্গে বিদ্যমান প্রক্রিয়া ও নিয়মাবলী নিয়েও বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়েছে। মুখ্যসচিব জানান, জেলা ও স্থানীয় স্তরে আধিকারিকদের উপর একাধিক দায়িত্ব বর্তায় ৷ তার মধ্যে রয়েছে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্বাচন-সম্পর্কিত কার্যক্রম ৷ এই প্রতিটি কাজ শেষ করার নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে । ফলে অনেক সময় কিছু কাজ অধস্তন কর্মীদের কাছে ন্যস্ত করা হয়। তিনি এও জানান, দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ঠা ও দক্ষতার পরিচয় দেওয়া আধিকারিকদের বিরুদ্ধে বিস্তারিত তদন্তের আগেই শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা অতিরিক্ত কঠোর হতে পারে ৷ এর ফলে কেবল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই নয়, সমগ্র নির্বাচন সম্পর্কিত দায়িত্বে নিযুক্ত প্রশাসনিক আধিকারিকদের মনোবল ক্ষুণ্ণ হতে পারে। তবে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে, তমলুক ব্লকের পিএএও ও ময়না বিধানসভা আসনের এইআরও সুদীপ্ত দাস এবং বারুইপুর পূর্ব বিধানসভা আসনের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর সুরজিত হালদারকে ভোটার তালিকা সংশোধন ও নির্বাচন সম্পর্কিত কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তিন আধিকারিক দেবত্তম দত্ত চৌধুরী, তথাগত মণ্ডল এবং বিপ্লব সরকারের বিরুদ্ধে তদন্ত এখনও চলছে ৷ চিঠিতে আরও জানানো হয়েছে, তদন্ত সম্পূর্ণ হলে কমিশনকে বিস্তারিত ‘অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট’ পাঠানো হবে। প্রসঙ্গত কমিশনের তরফ থেকে আজকের মধ্যে দুই আধিকারিকের সাসপেনশন নিয়ে মুখ্যসচিবের কাছ থেকে জবাব চাওয়া হয়েছিল। মুখ্যসচিবের তরফ থেকে সময়ের মধ্যেই এর জবাব দেওয়ার পরেই এবার মুখ্যসচিবকে তলব করল নির্বাচন কমিশন।


