দুর্গাপুজোর উৎসবের আমেজ কাটতেই ফের ইডির হানা। শুক্রবার ভোর থেকেই কলকাতা জুড়ে শুরু হয়েছে তল্লাশি অভিযান। পুর-নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুর দক্ষিণদাড়ির অফিস-সহ কলকাতার অন্তত ১০টি জায়গায় হানা দিয়েছেন ইডি আধিকারিকরা। অভিযানের খবর ছড়াতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে। দমকল মন্ত্রীর পাশাপাশি দক্ষিণ দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই দত্তের বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে। জানা গিয়েছে, পুর-নিয়োগ দুর্নীতির নথি ও আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত তথ্য উদ্ধার করতেই এই অভিযান। তবে এ বিষয় দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুর সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ভোরের আলো ফোটার আগেই ইডি দল পৌঁছে যায় নাগেরবাজারের শ্যামনগর রোডের শোভনা আবাসনে। সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরাও। প্রায় আধঘণ্টা ধরে বাড়ির বাইরে অপেক্ষা করার পর দরজা খুলে অভিযান শুরু করেন আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, এখানেই থাকেন শহরের একটি নামী বেসরকারি স্কুলের মালিক। ইডি সূত্রের খবর তাঁর আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত বেশ কিছু নথি ইডি-র হাতে আসার সম্ভাবনা রয়েছে । অন্যদিকে, নিউ আলিপুরে কলকাতা হাইকোর্টের এক বিশিষ্ট আইনজীবীর বাড়িতেও চলছে ইডির তল্লাশি। পাশাপাশি শরৎ বোস রোড, ঠনঠনিয়া এবং গিরিশ পার্ক থানা এলাকার ৮এ সরকার লেনেও অভিযান চালানো হচ্ছে। ইডি সূত্রের খবর ওই এলাকায় এক প্রভাবশালী চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্টের বাড়িতে চলছে তল্লাশি । এই চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট হিসেব দেখভালের পাশাপাশি স্টক ব্রোকার হিসেবে কাজ করেন ৷ তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। তাই জন্যই এই তল্লাশি। এর আগে বুধবারও ইডি পশ্চিমবঙ্গ ও গুজরাতের একাধিক জায়গায় একযোগে তল্লাশি অভিযান শুরু করে। রাত পর্যন্ত চলে সেই অভিযান। জানা গিয়েছে, তল্লাশিতে তদন্তকারীদের হাতে এসেছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি ও ডিজিটাল প্রমাণ। দুবাই ও জার্মানি-সহ একাধিক দেশে রত্ন আমদানি-রফতানির আড়ালে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে ৷ ইডি সূত্রের খবর, প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের দাবি, কালো টাকাকে সাদা করার উদ্দেশ্যেই এই বিপুল অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাঠানো হয়েছে। গত কয়েক বছরে একাধিক মামলায় রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী থেকে শুরু করে শাসক শিবিরের নেতা-নেত্রীদের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে ইডি থেকে শুরু করে সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ৷ চিটফান্ড হোক বা শিক্ষা এবং পুর-নিয়োগ দুর্নীতি কিংবা রেশন কেলেঙ্কারি- বিভিন্ন মামলায় জেলে গিয়েছেন তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা ৷ তৃণমূলের অভিযোগ, তাদের নেতা-নেত্রীদের ভয় দেখাতেই এভাবে অভিযান চালানো হয় ৷ নির্বাচন এলে সেই প্রবণতা আরও বাড়ে ৷ আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন ৷ তার আগে আরও এক মন্ত্রীর বাড়িতে হানা দিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ৷ এ নিয়ে তৃণমূল যে আরও একবার বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়াবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ৷


