নির্বাচনের কমিশনের শীর্ষস্তরের আধিকারিকরা এখন পশ্চিমবঙ্গে রয়েছেন৷ ভোটার তালিকায় স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা SIR-এর প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতেই মূলত তাঁরা এসেছেন৷ পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের এখনও কয়েকমাস বাকি৷ এত আগে কমিশনের প্রতিনিধিরা কেন জেলায় জেলায় ঘুরছেন বৃহস্পতিবারই সেই প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এই পরিস্থিতিতে এসআইআর ইস্যুতে পালটা তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী৷ রাষ্ট্রপতি শাসনের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেন পালটা চাপে ফেলার চেষ্টা করলেন বাংলার শাসক দলকে৷ বিরোধী দলনেতা এদিন বলেন, ‘‘চূড়ান্ত ভোটার তালিকা বেরোনোর পরে যেকোনও দিন নির্বাচন ঘোষণা হতে পারে। অর্থাৎ বিধানসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে হয়। তাই পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও 20 থেকে 25 এপ্রিলের মধ্যে বিধানসভা নির্বাচনের সমগ্র প্রক্রিয়া শেষ না-করলে তারপর নিয়ম অনুসারে বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন হয়ে যাবে।” কিন্তু কেন এমন কথা বললেন শুভেন্দু অধিকারী? কেন তাঁর মনে হচ্ছে যে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ সময়মতো শেষ হবে না? এর নেপথ্যে রয়েছে ভোটার তালিকার স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা SIR. বিরোধী দলনেতা বলেন, “দীর্ঘদিন নির্বাচনে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি যে স্যার মানে হচ্ছে ভোটার তালিকার সম্পূর্ণ পূর্ণাঙ্গ সংশোধন। বিহারের মডেল মেনে স্যার-এর কাজ শেষ হলে ড্রাফট ভোটার লিস্ট বেরোবে। এর পর 15 দিন সময় থাকে আপত্তি জানানোর বা অন্য সংশোধনের জন্য। এবং তার 15 দিন বা একমাস পরে চূড়ান্ত ভোটার লিস্ট প্রকাশ করা হয়।’’ এর পরই তিনি জানান, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা বেরোনোর পরে যেকোনোও দিন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হতে পারে। কিন্তু বিএলও-রা ঠিকমতো কাজ না-করতে পারলে ভোটার তালিকা সময় মতো প্রকাশ করা যাবে না৷ তখন ভোটও সময়মতো হবে না৷ সেক্ষেত্রে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সম্ভাবনা থাকছে পশ্চিমবঙ্গে৷এখন প্রশ্ন হল বিএলও-রা কেন ঠিকমতো কাজ করতে পারবেন না? এই নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী কাঠগড়ায় তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷ বিরোধী দলনেতা অভিযোগ করেন, এসআইআর নিয়ে সাধারণ মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এর ফলে বুথ লেভেল অফিসার বা বিএলও-দের কাজ কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি৷ কেন তাঁর এমন মনে হচ্ছে, সেই ব্যাখ্য়াও এদিন দিয়েছেন শুভেন্দু৷ তাঁর আশঙ্কা, স্যার-এর কাজ করতে গেলে হামলার মুখে পড়তে পারেন বিএলও-রা৷ বিরোধী দলনেতা এদিন বলেন, “এটা আমরা আশঙ্কা করছি। না-হলেই ভালো। নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের আইডি কার্ড থাকা সত্ত্বেও যদি তাঁরা আক্রান্ত হন, তাহলে তার পুরো দ্বায়িত্ব রাজ্যকে নিতে হবে।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন আবারও অভিযোগ করেছেন যে স্যার-এর আড়ালে আসলে এনআরসি করতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ধরনের মন্তব্যেই আশঙ্কার কারণ বলেই জানাচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারী৷ একই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘‘এই রাজ্যে শেষবার 2011 সালে জনগণনা হয়েছিল। তাই জনগণনার মাপকাঠি ধরা যাবে না। তবে এই রাজ্যে দুটো বৈধ তথ্য আছে। একটা হচ্ছে জন্মহার আর একটা হচ্ছে ভোটার তালিকার বৃদ্ধি। গোটা ভারতবর্ষে জন্মহার অনুযায়ী ভোটার তালিকার বৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু এখানে একজন জন্মেছে আর আড়াই জন ভোটার হয়েছে৷’’ একই সঙ্গে শুভেন্দুর বার্তা, ‘‘অনুপ্রবেশকারীদের নাম ভোটার তালিকা থাকবে না৷ কিন্তু যাঁরা হিন্দু, বাংলাদেশ থেকে এখানে এসেছেন, তাঁরা হলেন শরণার্থী। তাঁরা সিএএ-তে নাম তুললে এমনিতেই ভোটার তালিকায় তাঁদের নাম থাকবে।’’


