কলকাতা

রাজ্যে কোন ভুয়ো ভোটার নেই, বিজেপির দাবি খারিজ করে দিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন

রাজ্যে ১৭ লক্ষ ভুয়ো ভোটার আছে, দাবি বঙ্গ বিজেপির। কিন্তু বিজেপির এই দাবি সরাসরি খারিজ করে দিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। দিন কয়েক আগেই এমন অভিযোগ তুলে কমিশনের দপ্তরে দিস্তা দিস্তা কাগজ জমা দিয়েছিল গেরুয়া শিবির। এমনকী কমিশনের ফুল বেঞ্চের সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে বাংলার ভোটার তালিকায় ১৭ লক্ষ ভুয়ো নাম থাকার নালিশ ঠুকে ছিলেন গেরুয়া শিবিরের প্রতিনিধিরা। মঙ্গলবার সেই অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। স্পষ্ট বলেছেন, ‘যাবতীয় পদ্ধতি মেনে এবং রাজনৈতিক দলগুলির জ্ঞাতসারেই স্বচ্ছভাবে ভোটার তালিকা তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে।’ বিষয়টি নিয়ে এদিন বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর ৫ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই তালিকা পাঠানো হয় রাজনৈতিক দলগুলির কাছে। এরপর অক্টোবরে তৈরি করা হয় খসড়া ভোটার তালিকা। এর পরের দু’মাস তালিকায় সংযোজন ও বিয়োজনের প্রক্রিয়া চলতে থাকে। ওই সময়ের মধ্যে তালিকা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। তালিকায় সংযোজন-বিয়োজন সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য তাদের জানানো হয়েছে।’ অর্থাৎ, ইঙ্গিত স্পষ্ট, চূড়ান্ত তালিকা নির্ভুল। রাজীব কুমারের দাবি, ভোটার তালিকা তৈরির কাজ এতটাই স্বচ্ছতার সঙ্গে চলেছে যে, প্রতিটি ফর্মের (৬,৭ এবং ৮ নম্বর) নথি পর্যন্ত আপলোড করা হয়েছে। প্রতিটি ধাপ স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে কমিশন। এছাড়াও সমস্ত অভিযোগ ও দাবিদাওয়া সরেজমিনে অনুসন্ধান ও যাচাই করে তবেই চূড়ান্ত ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তারপরও অবশ্য এব্যাপারে কোনও ফাঁক রাখতে চাইছে না কমিশন। রাজীব কুমার বলেছেন, ‘এখনও এই সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ থাকলে জেলাশাসকদের তা শুনে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।’জেলাশাসক ও পুলিস সুপারদের পর এদিন কমিশনের রোষের মুখে পড়েন রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ আধিকারিকরা। সকালে রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব এবং রাজ্য পুলিসের ডিজির সঙ্গে বৈঠক করে ফুল বেঞ্চ। সাফ বার্তা দেওয়া হয়, কোনওভাবেই দায় এড়ানো যাবে না। জেলাশাসক ও পুলিস সুপারদের প্রতিটি ভুলের জন্য প্রশাসনের তিন শীর্ষকর্তাকেই জবাবদিহি করতে হবে। সূত্রের খবর, রাজ্যে সাম্প্রতিক নির্বাচনে হিংসা ও বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে কমিশনের প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছেন প্রশাসনিক কর্তারা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যে, নির্বাচন ঘোষণার পর মুখ্যসচিবকেও পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে।এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, ভোটে কালো টাকা ঠেকাতে একাধিক পদক্ষেপ করেছে কমিশন। এই প্রথম ইডি সহ মোট ২২টি এজেন্সিকে এই কাজে লাগানো হয়েছে। এছাড়া রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের রাশ যে তাদের হাতেই থাকছে, সেকথা এদিন আরও একবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাজীব কুমার। তিনি বলেন, ‘মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক, কমিশন নিযুক্ত অবজারভার ও রাজ্য পুলিসের নোডাল অফিসার বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা নিশ্চিত করবে।’ এপ্রসঙ্গে এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘বাংলার মানুষ আতিথেয়তা ভালোবাসেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনী যেন বাড়ি বাড়ি গিয়ে অত্যাচার না করে। আমরা চাই নিরপেক্ষ নির্বাচন।’