ফ্রান্স ২ (থিও ৫’, মুয়ানি ৭৯’),
মরক্কো ০
স্পেন-পর্তুগালের মতো হেভিওয়েটদের রুখে দিয়েই সারা বিশ্বের নজর কেড়েছিল মরক্কোর ফুটবল। কিন্তু বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে মরক্কোকে ২-০ গোলে হারিয়ে দিল ফ্রান্স। আগামী ১৮ ডিসেম্বর লুসেল স্টেডিয়ামে হবে আর্জেন্টিনার সঙ্গে ফ্রান্স বিশ্বকাপের ফাইনাল। ফ্রান্সের সামনে এখন শুধু ফাইনাল ল্যাপ। লিওনেল মেসির দলকে হারালেই রাশিয়ার পর ফের কাতারে তাদের হাতেই উঠবে কাপ। এদিন পাঁচ মিনিটের মধ্যে গোল খেয়ে গিয়ে মরক্কো, এবারের সবচেয়ে বিস্ময়কর টিম মরক্কো, যে লড়াইটা লড়ল তা গোলে পরিণত করা গেল না। প্রথমার্দ্ধের মাঝামাঝি এল ইয়ামিকের একটা অসাধারণ ব্যাকভলি হুগো লরিসের হাতে লেগে লাগল পোস্টে। এটা ছাড়া আফ্রিকার দেশটার পক্ষে বলার মতো কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। যে টিমটা বেলজিয়াম, স্পেন, পর্তুগালকে হারিয়ে গোটা দুনিয়াকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল, তারা কিন্তু সেমিফাইনালে হতাশই করল। ফিফা র্যাংকিংয়ে মরক্কো ২২, আর ফ্রান্স ৪। এই পার্থক্যটাই শেষ পর্যন্ত বড় হয়ে গেল। চ্যাম্পিয়নরা শেষ পর্যন্ত চলে গেল ফাইনালে। ফ্রান্স যে মরক্কোর বিরুদ্ধে জিতবে এটা নিয়ে কারোর মনে কোনও সন্দেহ ছিল না। ব্যাতিক্রম মরক্কোর সমর্থকরা। গোটা আফ্রিকা এবং আরব দেশগুলি থেকে এসেছিল তারা। বুকে একটাই স্বপ্ন। আফ্রিকার একটা দেশকে বিশ্ব কাপের ফাইনালে খেলতে দেখা। কিন্তু শুরুতেই সেই স্বপ্নটা বিরাট ধাক্কা খেল। পাঁচ মিনিটের মধ্যে গোল খেয়ে গেল মরক্কো। তাদের যে গোলকিপার ইয়াসিন বোনো টুর্নামেন্টে প্রায় অপ্রতিরোধ্য ছিলেন ,আগের পাঁচটা ম্যাচে খেয়েছেন মাত্র একটা গোল, তাও সেটা আত্মঘাতী, সেই বোনোও যেন গোলটা বাজে খেলেন। রাফায়েল ভারানের থেকে বল পেয়ে গ্রিজম্যান দেন এমবাপেকে। প্যারিস সাঁ জাঁম-র তারকা এমবাপের শট প্রতিহত হয়ে চলে আসে সবার অলক্ষ্যে উঠৈ আসা লেফট ব্যাক থিও হার্নান্ডেজের কাছে। এ সি মিলানের ছয় ফুট দুই ইঞ্চির থিও বাঁ পা-টা অনেক উঁচুতে তুলে শট নিয়ে গোল করে এগিয়ে দিলেন ফ্রান্সকে। শুরুতেই এই গোলটা খেয়ে ভেঙে পড়ার বদলে ফুঁসে উঠল মরক্কো। এবং এর পর থেকে খেলাটা হয়ে গেল ফ্রান্স ডিফেন্স বনাম মরক্কো আ্যাটাক। দিদিয়র দেশঁর ব্যাক ফোর ছিল কুন্দে, ভারেন, ইব্রাহিম কোন্তে এবং থিও হার্নান্ডেজ। তাঁদের সামনে চুয়ামেনি এবং ফোফানা। এই প্রথম শুরু থেকে খেললেন ফোফানা। কারণ চোটের জন্য ছিলেন না রাবিয়। কিন্তু তাতে কোনও ফারাক চোখে পড়ল না। পরিবর্ত ফুটবলারদের দাপট স্তব্ধ করে দিল মরক্কোকে। তাদের স্ট্রাইকারদের ব্যর্থতা তারা মাঠ জুড়ে খেললেও গোলের মুখ খুলতে পারেনি। বিরতির পরেও মরক্কোর আক্রমণ ছিল ভয়ঙ্কর। কিন্তু ফরাসিদের আক্রমণে যেন সেই তেজ ছিল না। বাঁ দিক দিয়ে কিলিয়ান এমবাপের দৌড় ঠিকই ছিল। গেমমেকার আঁতোয়া গ্রিজম্যান অনেক বেশি নীচে নেমে খেলছিলেন মরক্কোর আক্রমণ রুখতে। তাই অলিভার জিরু কিংবা ওসুমানু দেম্বলে তেমন কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারেননি। ৬৫ মিনিটে অলিভার জিরুকে তুলে নিয়ে মার্কাস থুরঁকে নামালেন দেশঁ।১৯৯৮ সালের ফরাসি বিশ্ব জয়ের নায়ক লিলিয়াম থুরঁর ছেলে মার্কাস নামার পর ফরাসি আক্রমণের ধার বাড়ল। কিন্তু গোলটা করে ফেললেন দেম্বলের বদলি কোলো মুয়ানি। মাঠে নামার ৪৪ সেকেন্ডের মধ্যে গোল করে ফেললেন মিডফিল্ডার মুয়ানি। বক্সের মধ্যে তিনজনকে কটিয়ে শট নিলেন এমবাপে। সেই শট প্রতিহত হয়ে চলে এল একেবারে ফাঁকায় থাকা মুয়ানির কাছে। খুব কাছ থেকে গোল করতে ভুল করেননি মুয়ানি। ম্যাচের বয়স তখন ৭৯ মিনিট।