আমফানের ত্রাণের জিনিস নিয়ে দুর্নীতির তদন্ত কত দূর এগোল, তা জানতে চাইল কলকাতা হাইকোর্ট। আমফানের পর সরকারের তরফে বসিরহাট-২ ব্লকের ঘোরারস কুলিন গ্রামে পাঁচটি ট্রাকে ত্রাণ পাঠানো হয়েছিল। সেই ত্রাণ বণ্টন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। নাম জড়ায় স্থানীয় গ্রামপঞ্চায়েত উপপ্রধানের। সেই মামলার অগ্রগতি কত দূর হল তা নিয়ে জানতে চাইল হাইকোর্ট। পুলিশের এই তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট মঙ্গলবার তলব করল ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। ২ সেপ্টেম্বর ২০২১ মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তকে। তবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল রাজ্যের উদ্দেশে প্রশ্ন ছোঁড়েন, আমফানের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে দুর্নীতির ঘটনা কীভাবে ঘটে ? ২০২০ সালে রাজ্যের তরফে বসিরহাটের ২ নম্বর ব্লকের বিলি করা হয় আমফান ত্রাণ। ব্লকের ঘোরারস কুলীন গ্রামে পাঁচ ট্রাক ভর্তি ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয় বণ্টনের জন্য। অভিযোগ ওঠে, সেই সামগ্রী গ্রাম পঞ্চায়েত উপপ্রধান বাড়ির গোডাউনে বেআইনি মজুত করার। সম্প্রতি মালতিপুর স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে দুটি ট্রাক বোঝাই ত্রাণ সামগ্রী গ্রামবাসীরা উদ্ধার করে। তাঁদের অভিযোগ ত্রাণ সামগ্রী পাচার হয়ে যাচ্ছিল এলাকা থেকে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ পেয়ে মাটিয়া থানায় এফআইআর রুজু হয়। স্বতঃপ্রণোদিত এফআইআর রুজু পুলিশ করলেও, মামলায় গ্রামবাসীদের অভিযোগ ছিল ভারতীয় দণ্ডবিধির উপযুক্ত ধারা যোগ না করার। এরপরেই কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়। মামলার শুনানির শুরুতেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের কাছে জানতে চান, ত্রাণ সামগ্রী দুর্নীতির অভিযোগে পুলিশ কী পদক্ষেপ করেছে? মামলায় যে অভিযোগ উঠছে তার কী উত্তর রাজ্যের কাছে রয়েছে? প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত জানান আদালতকে, বিষযটি সবিস্তারে জেনে রিপোর্ট দিতে চায় রাজ্য।
প্রসঙ্গত, আমফানের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই আকাশ পথে ঝড়ে বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুর্গতদের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন তিনি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ, তার কানাকড়িও দেননি তিনি। তা সত্ত্বেও রাজ্যের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ত্রাণ এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়েছে। তার পরেও ত্রাণ বণ্টনে রাজ্যের সর্বত্রই তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দুর্নীতির ভূরি ভুরি অভিযোগ ওঠে। জেলায় জেলায় শুরু হয় বিক্ষোভ। পরিস্থিতির চাপে পড়ে পদক্ষেপ করে সরকার। শোকজ কিংবা বহিষ্কার করা হয় শ’খানেক তৃণমূল নেতা-পঞ্চায়েত-প্রধানকে। ৩ মাসের মধ্যে তদন্ত করে সিএজি-কে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। উল্লেখ্য, নির্বাচনী প্রচার সভায় সরাসরি দলীয় নেতাদের এনিয়ে বার্তা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং।