রাজনীতি

‘ওই ছাত্রী কেন ফাঁকা কলেজে একা গেলেন’? কসবা গণধর্ষণ-কাণ্ডে প্রশ্ন মদনের, শো-কজ করল দল

কসবা গণধর্ষণ-কাণ্ডে এবার নির্যাতিতা ছাত্রীর উপরই দায় চাপালেন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। শনিবার কামারহাটিতে দলীয় এক কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে মদন মিত্র বলেন, “ওই ছাত্রী কেন কলেজে একা গেলেন ? আমাদের পার্টির কোনও কর্মীকে জানিয়ে কেন গেলেন না ?ফাঁকা কলেজে একা চলে গেলেন ? আর দুর্বৃত্তরা এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করল। কলেজে একা না গেলে তো এই ঘটনাই ঘটত না।” প্রাক্তন মন্ত্রীর এই মন্তব্যে অখুশি তৃণমূল ৷ ওই মন্তব্য দলের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে – এই কারণ দেখিয়ে রবিবার তাঁকে শোকজ করা হল । দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি শোকজের চিঠি পাঠিয়ে তিনদিনের মধ্যে কৈফিয়ত তলব করেছেন। শোকজের চিঠি পাঠিয়ে রাজ্য সভাপতি লিখেছেন, “আপনার অযাচিত, অপ্রয়োজনীয় এবং অসংবেদনশীল মন্তব্য দলের ভাবমূর্তিতে গভীর আঘাত হেনেছে। তৃণমূল কংগ্রেস যে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এই ঘটনায়, আপনার বক্তব্য তার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এটি দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের সামিল। তিনদিনের মধ্যে আপনাকে কারণ দর্শাতে হবে।” তৃণমূল বিধায়কের এই মন্তব্য ঘিরে রাজনীতির অন্দরে রীতিমতো বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তবে, মদনের এই মন্তব্যে একটুও অবাক হচ্ছে না বিজেপি ও সিপিএম। তাদের দাবি, এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি। ওরা বরাবর ধর্ষকের পাশেই দাঁড়িয়েছে। এবারও দাঁড়ালেন। যদিও কামারহাটির তৃণমূল বিধায়কের মন্তব্য তাঁর ব্যক্তিগত বলে জানিয়ে দিয়েছে দলের রাজ‍্য নেতৃত্ব। কসবা গণধর্ষণ-কাণ্ডে যখন রাজ‍্য রাজনীতি তোলপাড় ঠিক তখনই দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে নির্যাতিতা ছাত্রীর দিকে একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। তাঁর কথায়, “আপনি তো ওঁদের চিনতেন। জানতেন আজকে কলেজ বন্ধ রয়েছে, পরীক্ষা চলছে । কলেজে কেউ নেই ।আপনাকে মেয়েদের বিভাগে সাধারণ সম্পাদক করার কথা বলল আর আপনি চলে গেলেন ? গেলেন যখন তখন চারটে বন্ধুকে নিয়ে গেলেন না কেন ? মা-বাবাকে জানিয়ে গেলেন না কেন ? পুরো ফাঁকা কলেজে আপনি চলে গেলেন ? আর দুর্বৃত্তরা তার অ্যাডভান্টেজ নিল।” এখানেই থেমে থাকেননি মদন মিত্র। কসবা গণধর্ষণ-কাণ্ডে নির্যাতিতা ছাত্রীর অভিযোগপত্রের বয়ান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে শাসকদলের এই বিধায়কের মনে। মদনের মতে, “আপনি বলছেন আপনার প্রেমিককে খুন করবে ! এত কিছু যদি আগে থেকেই জানতেন এবং তাঁদের চরিত্র সম্পর্কে যখন অবহিত ছিলেন তখন কাউকে জানালেন না কেন ? কিছু না-পারলে তৃণমূলের অফিসে গিয়ে যাঁরা দায়িত্বে রয়েছেন তাঁদের বলুন। আমাদের দলের কর্মীরা আপনাদের সঙ্গে যাবে। দরকার পড়লে আপনাদের নিরাপত্তার দায়িত্বও নেবে তাঁরা।” প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কসবা গণধর্ষণ-কাণ্ডে বিতর্কে জড়িয়েছেন তৃণমূল সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বন্ধু যদি বান্ধবীকে ধর্ষণ করে কে নিরাপত্তা দেবে ?” কল‍্যাণের এই মন্তব্য ঘিরে এমনিতেই বিতর্ক চলছিল। সেই বিতর্ক আরও বাড়ালেন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। যদিও মদন এবং কল্যাণের মন্তব্যকে তাঁদের ‘ব্যক্তিগত মতামত’ বলে দায় ঝেড়ে ফেলেছে তৃণমূল। বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, দল তাঁদের বক্তব্যের সঙ্গে কোনওভাবেই একমত নয়। পাশাপাশি, মদন এবং কল্যাণের মন্তব্যের নিন্দাও করেছে রাজ্যের শাসকদল। বিবৃতিতে তারা আরও জানিয়েছে,আমাদের অবস্থান স্পষ্ট ৷ মহিলাদের উপর অপরাধের ক্ষেত্রে বরাবরই ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও করা হবে। যারা এই নৃশংস ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে যেন কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়।