কলকাতা

রুবি পার্কে হিন্দু মহাসভার দুর্গা পুজোয় মহিষাসুরের বদলে জাতির জনক গান্ধিজি, নিন্দা সর্বত্র

কেমন আরাধনা! দেবী দুর্গা নিধন করছেন না মহিষাসুরকে। বধ করা হচ্ছে জাতির জনক মহত্মা গান্ধিকে! রুবি পার্কে হিন্দু মহাসভার এই পুজোকে কেন্দ্র করে স্বাভাবিক ভাবেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। এ কেমন পুজোর রাজনীতি! সপ্তমীর সন্ধ্যায় ভাইরাল হয়েছে এই ছবি। উল্লেখ্য, এবারে সপ্তমী পড়েছিল ২ অক্টোবর। গান্ধিজি-র জন্মদিবস। সেই দিনেই দেখা গিয়েছে পুজো উদ্যোক্তাদের ‘আসল মনোভাব’। আর তারপর থেকেই বইছে তীব্র সমালোচনার ঝড়। অসুরের বদলে দেবীর পায়ের কাছে আছেন জাতির জনক মহত্মা গান্ধি! বধ হচ্ছেন তিনি! স্বাধীন ভারতে এ কেমন থিম পুজো!হিন্দু মহাসভার বড় আদরের বিজেপি। এর আগে আরএসএসের বিভিন্ন কার্যকলাপে ফুটে উঠেছিল ‘গান্ধিজির প্রতি মনোভাব’। কোথাও আবার গান্ধি প্রতিকৃতিতে করা হয়েছিল গুলি। আবার তাদেরই ‘ঘনিষ্ঠ’ বিজেপি, স্বচ্ছ ভারতের প্রচার চালায় ‘গান্ধি চশমা’ ব্যবহার করে! জনতা জনার্দনের ক্ষোভ উগরে ওঠার পরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে হিন্দুত্বের ধ্বজাধারীরা। গান্ধিজির চশমা খুলে, মাথায় চুল পরিয়ে ‘সত্যি অসুর’ বানানোর চেষ্টা করেছেন আয়োজকরা। পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা বলছেন, ওপর মহলের চাপে বদলাতে হল গান্ধিজির চেহারা।

আর বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, এমন হয়ে থাকলে তা ঠিক নয়। জানা গিয়েছে, একাধিক রাজনৈতিক মহল সহ হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন সংগঠন থেকে সাধারণ মানুষ ওই পুজো কমিটির বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হবে। এসবের পরই অবশ্য নড়েচড়ে বসেন পুজোর আয়োজকরা। দ্রুত গান্ধীজির ওই চেহারা বদলানো হয়। মূর্তিতে গোঁফ ও মাথায় চুল পরিয়ে অসুরের চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। খুলে নেওয়া হয় চশমাও। প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও খানিক হোঁচট খেয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এরকম হয়ে থাকলে খারাপ বিষয়।’’ বিষয়টি নিয়ে হিন্দু মহাসভার তরফে ওই পুজো কমিটির কর্তা চন্দ্রচূড় গোস্বামী বলেছেন, ‘‘উপরওয়ালার চাপে গান্ধীজির চেহারা বদলাতে হল।’’ তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে হিন্দু মহাসভা। তৃণমূলের তরফে প্রতিক্রিয়া দিয়ে কঠোর নিন্দা করা হয়েছে। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘বিজেপির আসল মুখ সামনে এসেছে। ওরা আসলে গডসের পূজারি, গান্ধীর হত্যাকারীদের পূজারি।’’এবার ওরা নানাভাবে দোষ ঢাকতে নামবে। কিন্তু এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। গান্ধীজিকে নিয়ে নানা গবেষণা হতে পারে। তিনি জাতির জনক।’’ তাঁর কথায়, ‘‘গান্ধীজি আন্তর্জাতিক ইতিহাসে ভারতবর্ষের অন্যতম প্রতীক। তাঁকে নিয়ে এমন অবমাননা কোনওভাবে বরদাস্ত করা যায় না। এসব বিজেপির অন্তরাত্মা।’’