সেন্সাসের আগেই নাগরিকত্ব নির্ধারণ? বিহার ভোটের মুখে এমনই জল্পনা আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে। আর তার সূত্রপাত নির্বাচন কমিশনের একটি নির্দেশিকায়। তাতে সাফ জানানো হয়েছে, ভোটার তালিকায় নাম থাকাটাই যথেষ্ট নয়। সংশ্লিষ্ট ভোটারকে এবার দিতে হবে নাগরিকত্বের সমর্থনে যথাযোগ্য নথি এবং ‘ঘোষণাপত্র’। একে মুচলেকা বললেও খুব ভুল হবে না। ব্লক লেভেল অফিসাররা (বিএলও) বাড়ি বাড়ি যাবেন এবং সেই তথ্য যাচাই করে আপলোড করবেন। আপলোডের কাজ অবশ্য ভোটার নিজেও করতে পারবেন। এখানেই শেষ নয়, নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলিকেও আগে থেকে জানিয়ে দিতে হবে বুথ লেভেল এজেন্টের নাম। কমিশন একে বলছে ইন্টেনসিভ রিভিশন অব ইলেক্টোরাল রোলস। বিহার দিয়ে শুরু হচ্ছে প্রক্রিয়া। তারপর তা কার্যকর হবে গোটা দেশে। এর নেপথ্যে বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের আসল লক্ষ্যটা কী? এই প্রশ্নেই ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সাফ দাবি করেছেন, নির্বাচন কমিশনকে সামনে রেখে বিজেপি আসলে ভোটার তালিকায় কারচুপির পথ খুলে দিচ্ছে। এই কাজে নামানো হচ্ছে কমিশন এবং অন্যান্য এজেন্সিকে। আর সেইসঙ্গে গোটা দেশকে তুলে দিতে চাইছে এনআরসির আগ্নেয়গিরির উপর। ২০১৯ সালে সিএএ কার্যকর হওয়ার আগে থেকেই দেশজুড়ে বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। বিপাকে পড়ে সরকার ঘোষণা করেছিল, সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট, ১৯৮৬’কেই রেফারেন্স পয়েন্ট ধরা হবে। অর্থাৎ, ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে যাঁরা এদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন, বা যাঁদের বাবা-মা জন্ম নিয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকে ভারতীয়। এবারও সেই সমীকরণে এগিয়েছে কমিশন। জানিয়েছে, ২০০৩ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত তালিকায় নাম তোলা ভোটারদের একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে। সঙ্গে দিতে হবে সাম্প্রতিক ছবি, নিজের হাতে সই করা নাগরিকত্বের ঘোষণাপত্র এবং নথি। সঙ্গে আরও একগুচ্ছ শর্ত। এখানেই কেন্দ্রকে নিশানা করেছেন মমতা। রথযাত্রা উপলক্ষ্যে দীঘায় এসেও সাংবাদিক সম্মেলন করে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন নির্বাচন কমিশনকে। স্পষ্ট জানিয়েছেন, এই প্রক্রিয়া গোটা দেশের জন্য অশনিসঙ্কেত। মমতা বলেন, ‘এই নির্দেশিকা শুধু বিহারের জন্য নয়। ভবিষ্যতে সব রাজ্যে কার্যকর করবে ওরা। আসলে এর লক্ষ্য বাংলার মানুষ। বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিকরা। খবর পেয়েছি, ওড়িশার কটকে ১০০ জন পরিযায়ী শ্রমিককে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আমাদের কয়েকজন মানুষ বালেশ্বরেও আটক রয়েছেন। মুখ্যসচিবকে বলেছি ওখানকার সরকারের সঙ্গে কথা বলতে। এটা এখন রোজকার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলায় কথা বললেই তাদের হেনস্তা করা হচ্ছে।’ আগামী বছর বাংলায় যেহেতু বিধানসভা নির্বাচন, তাই এই ইস্যুতে গেরুয়া শিবির বাড়তি জলঘোলা করছে বলেই ইঙ্গিত দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘ওরা বিহারে কিছু করবে না, কারণ সেখানে বিজেপি সরকার রয়েছে। আসল লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গ। কারণ ওরা ভয় পেয়েছে। এটা কি এনআরসি চালুর পরিকল্পনা? এটা তার থেকেও বিপজ্জনক। গণতন্ত্রের জন্য অশনিসঙ্কেত। বাবা-মায়ের বার্থ সার্টিফিকেট দিতে বলছে! কোথায় পাবে? এটা কি আসলে এনআরসি চালুর পরিকল্পনা?’ তাঁর আশঙ্কা, এই নির্দেশিকাকে ঢাল করে অনেকের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। আর সেই ফাঁকা জায়গা ভরাট করবে ‘বহিরাগত’রা। মমতার অভিযোগ, ‘প্রধানমন্ত্রীর আসনকে আমি সম্মান করি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে কাজ করছে। রাজনৈতিক দলগুলো কি বন্ডেড লেবার? আমরা কেন এজেন্টদের নাম আগে জানাব? ওটা দু’দিন আগে ঠিক হয়। ওরা আগে নাম জেনে নিয়ে ভয় দেখাবে। কিনে নিতে চাইবে। কেন দেব তথ্য?’


