যিনি মণিপুরে জাতিগত হিংসার ৯৬৪ দিন পরে গিয়ে সহানুভূতি প্রকাশ করেছিলেন, তাঁর হঠাৎ বাংলার প্রতি এই অতিরিক্ত উদ্বেগ আদতে সহমর্মিতা নয়-বরং নিছক রাজনৈতিক নাটক বলেই মনে হয়
উত্তরবঙ্গের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আবহে শুরু কেন্দ্র-রাজ্য তরজা। জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় সোমবার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের উপর হামলার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্যকে কখনও ‘রাজনৈতিক নীচতা’, কখনও আবার ‘রাজনৈতিক নাটক’ বলে তীব্র সমালোচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রীকে ‘মনে করিয়ে দিলেন’ তিনি বিজেপির নন, দেশের প্রধানমন্ত্রী ৷ তদন্ত বা প্রশাসনিক রিপোর্ট আসার আগে সরাসরি রাজ্য সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেসকে দোষারোপ করা ‘সাংবিধানিক মূল্যবোধের পরিপন্থী’ বলেও দাবি করেন মমতা। সোমবার রাতে এক্স হ্যান্ডলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লেখেন, “জনপ্রতিনিধিদের উপর আক্রমণ তৃণমূলের অসংবেদনশীলতার পরিচয় দেয়। পাশাপাশি দেখিয়ে দেয় পশ্চিমবঙ্গের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা করুণ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে।” পোস্টের পরের অংশে প্রধানমন্ত্রী আরও লেখেন, “প্রাকৃতিক বিপর্যয় আমাদের সবাইকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এমতাবস্থায় হিংসার পথে না হেঁটে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং শাসক দলের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে মননিবেশ করা উচিত ছিল। তবু আমি চাইব বিজেপি কর্মীরা যেভাবে এতদিন মানুষের পাশে থেকেছেন সেভাবেই আগামিদিনেও কাজ করে যাবেন।” প্রধানমন্ত্রীর ওই পোস্টের ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই পাল্টা জবাব দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্স হ্যান্ডলেই তিনি লেখেন, “উত্তরবঙ্গের মানুষ এখন ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস পরবর্তী পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করছেন ৷ আর সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী যথাযথ তদন্তের অপেক্ষা না করেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের রাজনীতিকরণ করেছেন। এটি দুর্ভাগ্যজনক ও গভীরভাবে উদ্বেগজনক।’ মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, বিজেপি নেতারা স্থানীয় প্রশাসনকে কিছু না জানিয়েই বিশাল কনভয় ও কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে দুর্গত এলাকায় গিয়েছিলেন। তাঁর প্রশ্ন, “তাহলে এই ঘটনার দায় রাজ্য প্রশাসন বা তৃণমূল কংগ্রেসের উপর কীভাবে চাপানো যায়?” এরপরই প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি আক্রমণ করে মমতা লেখেন, “তিনি (প্রধানমন্ত্রী মোদি) কোনও তথ্যপ্রমাণ যাচাই না করে এবং আইনি তদন্ত বা প্রশাসনিক প্রতিবেদন ছাড়াই তৃণমূল কংগ্রেস ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দোষারোপ করেছেন। এটি শুধু নিম্নমানের রাজনীতির উদাহরণ নয়, সাংবিধানিক নীতিরও লঙ্ঘন। গণতন্ত্রে আইন তার নিজস্ব পথে চলবে-কোনও রাজনৈতিক টুইটের উপর নির্ভর করে নয়।” মণিপুর প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী আরও লেখেন, “যিনি মণিপুরে জাতিগত হিংসার ৯৬৪ দিন পরে গিয়ে সহানুভূতি প্রকাশ করেছিলেন, তাঁর হঠাৎ বাংলার প্রতি এই অতিরিক্ত উদ্বেগ আদতে সহমর্মিতা নয়-বরং নিছক রাজনৈতিক নাটক বলেই মনে হয়।” মমতার বার্তা, “আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি-নির্বাচিত রাজ্য সরকারের কথাও শুনুন, কেবল নিজের দলের সহকর্মীদের নয়। আপনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী, বিজেপির নন। এখন সময় বিভেদ নয়, ঐক্যের।” সোমবার সকালে বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ নাগরাকাটার দুর্গত এলাকায় গেলে তাঁদের কনভয়কে ঘিরে ক্ষোভ দেখান কিছু গ্রামবাসী। অভিযোগ, ধাক্কাধাক্কির পর শুরু হয় ইটবৃষ্টি। বিজেপির দাবি, তৃণমূলের “গুণ্ডারা” এই হামলার পিছনে। অন্যদিকে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, বিজেপি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উস্কানি দিতে গিয়েছিল। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করেছেন ৷


