কলকাতা

বেহাত হচ্ছে সরকারি জমি, মুখ্যমন্ত্রীর ভর্ৎসনার মুখে পুলিশ-আমলারা

সরকারি জমি ‘বেহাত’ হওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হল রাজ্যের আমলা-পুলিশদের। মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভের মুখে কলকাতা পুলিশের কমিশনারও। পাশাপাশিই, বিদ্যুৎ এবং পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কাজ নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নবান্নে সমস্ত পুরনিগমের মেয়র, সমস্ত দফতরের সচিব, অতিরিক্ত সচিব, জেলাশাসক এবং পুলিশকর্তাদের বৈঠকে ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বেশির ভাগই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দিয়েছিলেন বৈঠকে। নবান্ন সূত্রের খবর, ভূমি দফতরের কর্তাদের উপর ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশ্ন তুলেছেন, কী ভাবে সরকারি জমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে? পুলিশ কেন বিষয়টি দেখছে না, সেই প্রশ্নও বৈঠকে তোলা হয়েছে বলে খবর। যদিও ওই বৈঠকের আলোচনা নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রী কিছু বলেননি। বৈঠকে যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরাও মুখ খোলেননি। ফলে সরকারি ভাবে এর কোনও সমর্থন মেলেনি। কিন্তু প্রশাসনে যে ‘নাড়াচাড়া’ পড়েছে, নবান্নের একাধিক সূত্র তা জানিয়েছে। নবান্ন সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে, ফিরহাদ হাকিমের হাতে থাকা পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের কাজ নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবারের বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। যার মূল বিষয় হল পুর পরিষেবা। ঘটনাচক্রে, সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে দেখা গিয়েছে, শহরে তৃণমূলের জনসমর্থন কমেছে। যা দলের জন্য ‘উদ্বেগজনক’ বলেই মনে করছেন প্রথম সারির নেতারা। কলকাতা পুরসভা এলাকাতেই ৪৭টি ওয়ার্ডে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। বিধাননগর, আসানসোল, শিলিগুড়ির মতো ‘কর্পোরেশন’ এলাকাতেও বিজেপি আধিপত্য দেখিয়েছে। অনেকের মতে, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কাজ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ‘অসন্তোষের’ নেপথ্যে রয়েছে লোকসভায় শহুরে এলাকার ফলাফল। শুধু পুরনিগম নয়। জেলায় জেলায় মফস্‌সল শহরগুলিতেও তৃণমূল পিছিয়ে রয়েছে। রাজ্যের মোট ১২১টি পুরসভার মধ্যে ৬৯টিতে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি, দু’টিতে এগিয়ে কংগ্রেস। হাওড়ার মতো পুরনিগম এলাকায় তৃণমূল জিতলেও সেখানে পরিষেবা নিয়ে নাগরিকদের ক্ষোভ রয়েছে। হাওড়া পুরসভায় প্রায় পাঁচ বছর ভোট হয়নি। সেখানে পুরসভার কাজ পরিচালনা করছে প্রশাসকমণ্ডলী। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী সোমবার সমস্ত পুরসভার চেয়ারম্যানদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী। চেয়ারম্যানদের পাশাপাশি ডাকা হয়েছে পুরসভার শীর্ষ আধিকারিকদেরও। উল্লেখ্য, ভূমি ও ভূমিসংস্কার দফতর রয়েছে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই। কয়েক মাস আগে একাধিক জেলার প্রশাসনিক সভাতেও ভূমি দফতরের কাজ নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করেছিলেন মমতা। প্রশাসনিক বৈঠকের মঞ্চ থেকে মমতার এ-ও অভিযোগ ছিল, নিচুতলার কিছু সরকারি কর্মীও এ সবের সঙ্গে যুক্ত। ‘ঘুঘুর বাসা’ ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন সূত্রের খবর, সম্প্রতি জেলাভিত্তিক রিপোর্ট জমা পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। নবান্নের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে ম্যাডাম যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়িত হয়নি। বদলায়নি পরিস্থিতিও। সে কারণেই তিনি ক্ষুব্ধ।’’